Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

দরিদ্রের রোগ

ভারতে মধুমেহ বা ডায়াবিটিস রোগটির প্রকোপ সম্পর্কে এ যাবৎ সর্ববৃহৎ সমীক্ষাটির ফল সম্প্রতি প্রকাশিত হইয়াছে।

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ম ধুমেহ শুধু বিত্তবানের রোগ নহে। ভারতের অন্তত পাঁচটি শহরে তাহার প্রাদুর্ভাব দরিদ্রের মধ্যেই অধিক। ভারতে মধুমেহ বা ডায়াবিটিস রোগটির প্রকোপ সম্পর্কে এ যাবৎ সর্ববৃহৎ সমীক্ষাটির ফল সম্প্রতি প্রকাশিত হইয়াছে। তাহাতে স্পষ্ট, আর্থিক উন্নয়নের সহিত রোগেরও গতি বদলাইতেছে। তাই চন্ডীগড়ের মতো শহরে ধনীদের তুলনায় দরিদ্রদের মধ্যে মধুমেহ দ্বিগুণ। ইহার অর্থ, শহরবাসী নিম্নবিত্তের জীবনচর্যাতেও সেই সকল সমস্যা দেখা দিয়াছে, যাহা পূর্বে কেবল ধনীদের মধ্যে দেখা যাইত। শারীরিক শ্রম কমিয়াছে, শর্করা ও তেলযুক্ত খাবারের প্রচলন বাড়িয়াছে। কোলাজাতীয় পানীয় ও চটজলদি খাবার খাইবার অভ্যাস দেহের ওজনবৃদ্ধি করিয়া মধুমেহ রোগকে ডাকিয়া আনে। অত্যধিক ওজন এবং মধুমেহ অসুখটির হার এখনও শহরে, এবং ধনীদের মধ্যেই অধিক। কিন্তু পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের ন্যায় সম্পন্ন রাজ্যগুলিতে বিপরীত ছবি মিলিয়াছে। তাহাদের প্রধান শহরগুলিতে দরিদ্রের মধ্যে মধুমেহ অধিক। এই ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটিতেছে ভারতও। সে দেশে দরিদ্রের মধ্যেই অতিরিক্ত ওজন এবং মধুমেহের প্রকোপ অধিক। কারণ দরিদ্ররা সস্তায় মুখরোচক কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার খাইতে অভ্যস্ত। শহরে যানবাহন প্রভৃতির পরিকাঠামো উন্নত হওয়ায় তাহাদের কায়িক পরিশ্রমও কমিয়াছে। ধনীরা অধিক ব্যয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাইয়া থাকে, হাতে বাড়তি সময় থাকিবার জন্য খেলাধূলা, ব্যায়ামও করিতে পারে নিয়মিত। গরিবের নিজের জন্য ব্যয়ের সময় কম।

কিন্তু পাশ্চাত্যে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার বিষয়ে যে প্রচার চলে, ভারতে তাহার সামান্যই হয়। ভারতের পনেরোটি প্রদেশে করা এই সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, মধুমেহ রোগে আক্রান্তদের অর্ধেকই জানিতেন না যে তাঁহাদের রক্তে শর্করা অধিক। ডায়াবিটিস এখনও ধরা পড়ে নাই কিন্তু তাহার প্রবণতা স্পষ্ট, তেমন রোগীও যথেষ্ট ধরা পড়িয়াছে। একটি আন্দাজ বলিতেছে, আগামী পাঁচ বৎসরের মধ্যে ভারতে পাঁচজনে একজনই অতিরিক্ত শর্করার সমস্যায় ভুগিবেন। এই ইঙ্গিতগুলি উদ্বেগজনক। ইহাতে স্পষ্ট যে শহরগুলিতেও রোগ সম্পর্কে অজ্ঞানতা অত্যন্ত বিস্তৃত। অথচ যথাসময়ে এবং যথাযথ চিকিৎসা না হইলে মধুমেহ রোগটি যেমন শরীরকে দুর্বল করিয়া মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাইতে পারে, তেমনই হৃদরোগ-সহ বহু অসুখকে ডাকিয়া আনে। মধুমেহ থাকিলে সাধারণ রোগেরও নিরাময় দুঃসাধ্য হয়।

মধুমেহ অসুখটির চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তাহার প্রতিরোধ করিতে না পারিলে দরিদ্র পরিবার বিপন্ন হইবে। অথচ এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রচার নাই। তবে প্রচারই যথেষ্ট নহে। মধুমেহ-সহ নানা রোগ প্রতিরোধের একটি বড় উপায় উত্তম খাদ্যাভ্যাস। বিশেষত সব্জি এবং ফল নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এ দেশে সরকার ভর্তুকি দেয় সেই সকল খাদ্যদ্রব্যে, যাহাতে শর্করা অধিক। চাল, গম এবং অতি-দরিদ্রের জন্য চিনি। অথচ সব্জি ও ফলের দাম অত্যধিক, কারণ যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে তাহাদের একটি বড় অংশ নষ্ট হইয়া যায়। অতএব সুষম পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ করিতে হইলে পুষ্টিকর খাবারগুলি সহজলভ্য করিবার নীতি গ্রহণ করাও প্রয়োজন। মধুমেহ অসুখটির প্রতিরোধে নানা দিক হইতে উদ্যোগ করিতে হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Diabetes prevention initiative মধুমেহ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE