জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া। —ফাইল চিত্র।
অনেকেই হয়ত বলবেন— ‘সোনার পাথরবাটি’। কিন্তু বার্তাটা যে সদর্থক, সে কথা স্বীকার করতেই হবে। জন্মলগ্ন থেকে পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ভারত ও পাকিস্তান। সেই তীব্র বৈরিতাও একপাশে সরিয়ে রাখা সম্ভব, এমনই এক বার্তা বোধহয় দিতে চাইলেন জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সম্প্রতি সে দেশের জাতীয় আইনসভার উচ্চকক্ষে দেওয়া এক ভাষণে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সদর্থক মন্তব্য করেছেন বলে খবর। গণতান্ত্রিক সরকার যদি ভারত-পাক সম্পর্কের উন্নতি চায়, তা হলে পাক সেনাবাহিনী পাক সরকারকে সে লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া এমনই মন্তব্য করেছেন বলে খবর।
অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই জেনারেল বাজওয়ার মন্তব্যের খবর খুব দ্রুত গোটা পাকিস্তানে চারিয়ে যেতে সময় নেয়নি। খবরটা শুধু পাকিস্তানে নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতা বরাবরই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কথিত রয়েছে, যে দল ভারত বিরোধিতার সুর যত চড়ায়, সেই দল তত বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে পাকিস্তানে। পাক রাজনীতিতে শুধু রাজনৈতিক দলগুলি গুরুত্বপূর্ণ নয়, সে দেশের সামরিক বাহিনীও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত বহুবার পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতার দখল নিয়েছে সে দেশের সামরিক বাহিনী। আর সামরিক শাসনে থাকা পাকিস্তানের ভারত বিরোধিতার সুর বরাবরই গণতান্ত্রিক শাসনে থাকা পাকিস্তানের সুরের চেয়ে চড়া হিসাবে প্রতীত হয়েছে। সেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান যখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের প্রয়োজনীয়তায় জোর দেন, যখন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের শৈত্য কাটানোর পক্ষে সওয়াল করেন, পাক সরকার ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হলে পাক সামরিক বাহিনী সে উদ্যোগকে সমর্থন জানাবে বলে ঘোষণা করেন, তখন ঈষৎ বিস্মিত হতে হয় বইকি!
আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে ভাব করতে চান পাক সেনাপ্রধান
ভারত-পাক সম্পর্ক ইদানীং বেশ টানাপড়েনের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। দু’দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব তো তৈরি হয়েইছে। সামরিক পরিসরেও উত্তেজনা রয়েছে বিস্তর, সীমান্তে এবং নিয়ন্ত্রনরেখায় প্রায় রোজই তার প্রমাণ মিলছে। এহেন পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সদর্থক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান, এমন চিত্র সত্যিই দুর্লভ। তাই জেনারেল বাজওয়ার যে মন্তব্যের খবর জানা যাচ্ছে, তাকে স্বাগত জানাতেই হচ্ছে।
পাক সেনাপ্রধানের একটি ভাষণই ভারত-পাক সম্পর্কের দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত গতিপথটাকে বদলে দেবে, এমনটা দূরাশা। কিন্তু আবার বলি বার্তাটা সদর্থকই। জেনারেল বাজওয়ার মন্তব্যে যে আশার আলো তৈরি হয়েছে তা ক্ষীণ হতে পারে, কিন্তু অগুরুত্বপূর্ণ নয় মোটেই। এই পথ ধরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন কোনও দিগন্তের উদ্দেশে ভারত-পাকিস্তান যাত্রা শুরু করতে পারে কি না, তা দেখার অপেক্ষায় থাকবে গোটা উপমহাদেশ, অপেক্ষায় থাকবে গোটা বিশ্বই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy