Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

নির্মল ‘অশিষ্টাচার’ সমানে চলেছে

নির্মল মাজির উচিত এক বার অন্তত আয়নার সামনে দাঁড়ানো। তাঁকে ঘিরে যে সব বিতর্ক মাঝেমধ্যেই তৈরি হয়, সেই সব বিতর্কের আলোয় নিজের মুখটা কেমন লাগে, নির্মল মাজির এক বার তা দেখে নেওয়া উচিত।

আগেও বহু বার বিতর্কে জড়িয়েছেন নির্মল মাজি। —ফাইল চিত্র।

আগেও বহু বার বিতর্কে জড়িয়েছেন নির্মল মাজি। —ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৬
Share: Save:

রাজনীতিতে শ্রদ্ধাস্পদ বা প্রণম্য বা প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না, এমন কথা বলা যায় না। লহমায় এমন অনেকের নাম মনে এসে যায়, যাঁরা সত্যিই শ্রদ্ধার পাত্র। তবু সব রাজনীতিককে এক পঙ্‌ক্তিতে ফেলে সামগ্রিক ভাবে গালিগালাজ করার প্রবণতা আমাদের দেশে বেশ বাজারচলতি। রাজনীতিকরা নির্লজ্জ, রাজনীতিকদের ত্বক সাধারণ নাগরিকদের চেয়ে পুরু, রাজনীতিকরা দুর্নীতিগ্রস্ত, রাজনীতিকরা বিপজ্জনক— এমন অজস্র নেতিবাচক বিশেষণ ও মন্তব্য ভেসে বেড়ায় সাধারণ জনপরিসরের দৈনন্দিন চর্চায়। এই ধরনের চর্চা কি আমাদের দেশের জনসাধারণের নিম্নরুচির পরিচয়? নাকি রাজনীতিকদেরই একাংশ বা একটা খুব বড় অংশ এ সবের জন্য দায়ী? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে এক বার উঁকি দিলেই প্রশ্নের জবাবটা মিলবে।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে কী দেখা যাচ্ছে? দেখা যাচ্ছে যে, অধ্যক্ষের চেয়ারের পাশেই আরও একটি চেয়ারের মহিমান্বিত উপস্থিতি। মেডিক্যাল কলেজে অধ্যক্ষের সমকক্ষ আর কে রয়েছেন? কেউ নেই। তা হলে অধ্যক্ষের আসনের পাশে সবুজ তোয়ালেতে মুড়ে রাখা আর একটি আসন কার জন্য? অধ্যক্ষের আসনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ওই আসনটিও প্রতিভাত হচ্ছে কেন? কারণ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের নাম হল নির্মল মাজি। অনধিকার চর্চা, নিজের এক্তিয়ারের সীমা বার বার অতিক্রম করে যাওয়া, ক্ষমতার পূর্ণ অপব্যবহার করা— এই সব অভিযোগের জন্যই নির্মল মাজির কুখ্যাতি রয়েছে গোটা রাজ্যে। অতএব কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যক্ষের কক্ষে সবুজ তোয়ালেতে মোড়া একটি চেয়ারের বেমানান অবস্থান দেখে আশ্চর্য হলে চলবে না।

নির্মল মাজি আগেও বহু বার বিতর্কে জড়িয়েছেন। নিজের অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করে যাওয়া বা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তাঁকে অনেক বারই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কখনও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ারে নিজেই বসে পড়েছেন, কখনও চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করানোর বা প্রত্যন্ত কোনও প্রান্তে বদলি করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, কখনও কলেজ প্রশাসনে অকারণে নাক গলানোর চেষ্টা করেছেন, কখনও আইএমএ-র নির্বাচনে কারচুপি করার চেষ্টা করেছেন— অভিযোগ অন্তত তেমনই। এত বার অভিযুক্ত বা সমালোচিত বা নিন্দিত হওয়ার পরেও নির্মল মাজি দমেননি। অধ্যক্ষের চেয়ারে তাঁর উপবেশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে তিনি হাল ছেড়ে দেবেন, এমন রাজনীতিক নির্মল মাজি নন। তাই অধ্যক্ষের চেয়ারের গায়েই নিজের চেয়ারের ব্যবস্থা তিনি করে নিলেন। তাতে অধ্যক্ষের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হল কি না, বেমানান ছবি তৈরি হল কি না, প্রশাসনিক কাজকর্মে অসুবিধা তৈরি হল কি না— এত কিছু ভাবার অবকাশ নির্মল মাজির নেই।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

নির্মল মাজির উচিত এক বার অন্তত আয়নার সামনে দাঁড়ানো। তাঁকে ঘিরে যে সব বিতর্ক মাঝেমধ্যেই তৈরি হয়, সেই সব বিতর্কের আলোয় নিজের মুখটা কেমন লাগে, নির্মল মাজির এক বার তা দেখে নেওয়া উচিত। না হলে এই অনর্গল অশিষ্টাচার তিনি কোনও দিন থামাতে পারবেন বলে মনে হয় না। আর তাঁর মতো রাজনীতিকদের জন্য সব রাজনীতিক সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণাও চারিয়ে যেতে থাকবে।

আরও পড়ুন
অধ্যক্ষের ঘরে শূন্য চেয়ারেই নির্মল উপস্থিতি

একটু ভেবে দেখুন নির্মল মাজি, অধ্যক্ষের চেয়ারের পাশে নিজের চেয়ারটা আর রাখবেন কি না। ভেবে দেখুন, নিজেকে নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়াবেন কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE