Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
State News

কথাগুলো কানে গেল তো?

তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সভা থেকে সব স্তরের নেতা-কর্মীকে কঠোর বার্তা শুনিয়েছেন। দলের মধ্যে উপদল বা গোষ্ঠী বরদাস্ত করা হবে না, বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না, তোলাবাজি-গুন্ডামিকিছুতেই চলবে না— মমতার বার্তা এই।

ছবি: সুমন বল্লভ।

ছবি: সুমন বল্লভ।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৮ ০০:৩৬
Share: Save:

গুঞ্জনটা ছিলই। রাজ্যের শাসকদলের অন্দরে কোন্দল যে ক্রমশ বাড়ছে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে কোন্দল যে ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে, তা আর প্রচ্ছন্ন ছিল না। তৃণমূলের বর্ধিত কোর কমিটি বৈঠকে আরও প্রকট হয়ে ধরা দিল সে কথা।

তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সভা থেকে সব স্তরের নেতা-কর্মীকে কঠোর বার্তা শুনিয়েছেন। দলের মধ্যে উপদল বা গোষ্ঠী বরদাস্ত করা হবে না, বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না, তোলাবাজি-গুন্ডামি কিছুতেই চলবে না— মমতার বার্তা এই। নিচের স্তরের অনেক তৃণমূল নেতাই মানুষের পাশে থাকছেন না, তৃণমূলের সংগঠন সর্বত্র জনস্বার্থে সক্রিয় হচ্ছে না, ফলে জনসাধারণের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে— মমতার বিশ্লেষণ অনেকটা এ রকমই।

কথাগুলো যে নতুন, তা নয়। তৃণমূল নেতাদের একাংশের ব্যভিচার সংক্রান্ত তত্ত্ব বহু চর্চিত। সে সংক্রান্ত তথ্যও জনসাধারণের হাতেই ভূরি ভূরি। তবু কথাগুলো যেন প্রকাশ্যে বলা যেত না, ফিসফাস-কানাঘুষো চললেও শাসকের ব্যভিচার সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করায় যেন অদৃশ্য কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরিস্থিতি এতই উদ্বেগজনক হয়ে উঠল যে, বিষয়টি নিয়ে এ বার মুখ খুলতে হল খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই, মুখ খুলতে হল কোনও রাখঢাক না করেই। প্রকাশ্যে এসেও যা ‘গোপন’ ছিল এতদিন, তা এ বার সর্বসমক্ষে চর্চার বিষয় হয়ে উঠল।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের অন্দরের গলদ নিয়ে মুখ খুলেছেন দলীয় সভায়। ঘরোয়া বৈঠকে তিনি সতর্কবার্তাটা দিয়েছেন, কোনও প্রকাশ্য জনসভা থেকে নয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় বিশৃঙ্খলার ছবিটা গোপন রাখতে চেয়েছেন। শাসকদলের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকের দিকে গোটা রাজ্যের নজরই যে ছিল এবং বৈঠকে তাঁর মুখ থেকে নিঃসৃত প্রতিটি শব্দ যে রাজ্যের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভালই জানতেন। জেনে শুনেই তিনি প্রায় প্রকাশ্য একটি মঞ্চ থেকে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি এত কঠোর সতর্কবার্তাটা দিলেন। বিশৃঙ্খলা, উপদলীয় কার্যকলাপ, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট-রাজ, ব্যভিচার ইত্যাদি নিয়ে নিজের দলকে সতর্কবার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রথম দিলেন, এমন নয়। আগেও এ ধরণের সতর্কবার্তা দলনেত্রী জারি করেছেন কর্মীদের উদ্দেশে। কাজ সম্ভবত হয়নি। হলে ফের এত কঠিন-কঠোর কণ্ঠস্বর শোনানোর প্রয়োজন বোধহয় পড়ত না।

আরও পড়ুন: তোলাবাজি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত হবে না, দলকে কড়া বার্তা দিলেন মমতা

তৃণমূল নেত্রীর সতর্কবার্তার কথা রাজ্যের প্রায় প্রতিটি নাগরিক শুনে ফেলেছেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও নিশ্চয়ই নেত্রীর কথাগুলো শুনতে পেয়েছেন। শোনার মতো করে শুনেছেন কি? জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় গোটা রাজ্যই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE