হাসপাতালে অসুস্থ আবদুল মান্নান। —নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা বুধবার যে ঘটনার সাক্ষী হল, গণতন্ত্রের পক্ষে তা খুব একটা সুখকর নয়। রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমাগুলো ভেঙে দিয়ে যে ধুন্ধুমার দৃশ্যের জন্ম হল অধিবেশন কক্ষে, তা পরিণত গণতন্ত্রের দৃশ্য নয়।
অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনাক্রম বা দৃশ্যপটের এক মেরুতে রয়েছে অবাধ গণতন্ত্রের প্রস্তাবনা, যা বহু কণ্ঠস্বরের সমাহার-মঞ্চ চায়। অন্য মেরুতে রয়েছে সুষ্ঠু শৃঙ্খলার পরিসর আয়োজনের চেষ্টা। মতভেদ তথা বিরোধ এ ক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সমাধানটাও প্রয়োজনীয়। একটা ভারসাম্যের মধ্যে দিয়ে সেই সমাধান সূত্রে পৌঁছনো জরুরি ছিল। কিন্তু বিপরীতটাই হল। বিরোধীর তরফে তুমুল বিক্ষোভ, শাসকের তরফে পাল্টা তর্জন— এতেই ভেসে গেল যাবতীয় ভারসাম্যের অঙ্গীকার। প্রমাণ হল সাত দশকের গণতান্ত্রিক যাত্রাপথ পেরিয়ে এসেও যথেষ্ট পরিণত হতে পারিনি আমরা।
বিবাদ-বিসম্বাদ কাটিয়ে, মতান্তরের পরিসর যথা সম্ভব গুটিয়ে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অভিন্ন অবস্থানে বা রফাসূত্রে পৌঁছনোর জন্যই আইনসভা। সে সভায় মত বিনিময় এবং প্রতর্কের সংস্থান ভারসাম্যে পৌঁছনোর লক্ষ্যেই। কিন্তু আমাদের আইন প্রণেতারা সে কথা মনে রাখতে পারেন না। তাই জাতীয় সংসদ থেকে রাজ্য বিধানসভা পর্যন্ত একই ছবি দেখা যায়।
আইনসভার ক্রিয়াকলাপেই যদি ভারসাম্য না থাকে, তা হলে সাধারণ জন-পরিসরে পরিস্থিতিটা আরও তলানিতে পৌঁছনোর আশঙ্কা থাকে। অতএব, ভারসাম্য রক্ষার দায় বিরোধী এবং শাসক দু’পক্ষেরই। শাসকের দায়টা বরং বেশিই, কারণ তাঁরা শাসক।
যে দৃশ্যপট তৈরি হল বিধানসভায়, কোনও মূল্যেই যে তা কাঙ্ক্ষিত ছিল না, সে উপলব্ধি কি হয়েছে আমাদের আইন প্রণেতাদের?
উপলব্ধিতে পৌঁছতে পারলে মঙ্গল। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পৌঁছে ইতিহাস এই সঙ্ঘাতকে সেই ঘাত-প্রতিঘাতের অঙ্গ হিসেবে দেখবে, যে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমরা উন্নততর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে পৌঁছতে পারি।
আর উপলব্ধিতে পৌঁছতে যদি না পারি এর পরও, তা হলে গণতন্ত্রের কালক্রমিক অবক্ষয়ই আমাদের ভবিতব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy