Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

ভারতীয় কূটনীতি আজ দুঃসময়ে, সুষমাদের আরও কৌশলী হতে হবে

ভারতকে ঘিরে মাঝারি, ক্ষুদ্র বা অতি ক্ষুদ্র যে সব রাষ্ট্রের অবস্থান, তাদের প্রত্যেককে নিজের শিবিরে টানার চেষ্টা শুরু করেছে চিন। লক্ষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট— দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে একা করে দেওয়া। চিন-ভারত বিবাদে বিশ্বের বৃহত্তম শক্তি আমেরিকাকে যে বেজিং পাশে পাবে না, তা শি চিনফিংরা ভালই জানেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০৫:১৪
Share: Save:

বন্ধু-বান্ধবের অভাব নেই। মিত্রগণ যে যথেষ্ট বলশালী, সে কথাও ঠিক। কিন্তু পড়শির গুরুত্ব তাতে কমে যায় না। পড়শিদের সঙ্গে সহাবস্থান যে হেতু নিয়ত, সে হেতু সম্পর্কও শান্তিপূর্ণ হওয়াই কাম্য। ভারত কি এই সরল সত্যকে যথাযথ উপলব্ধি করতে সক্ষম? ডোকলাম সঙ্কটকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ছবিটা যত বদলাচ্ছে, তত বেশি করে উঠে আসছে এই প্রশ্ন।

ভারতকে ঘিরে মাঝারি, ক্ষুদ্র বা অতি ক্ষুদ্র যে সব রাষ্ট্রের অবস্থান, তাদের প্রত্যেককে নিজের শিবিরে টানার চেষ্টা শুরু করেছে চিন। লক্ষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট— দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে একা করে দেওয়া। চিন-ভারত বিবাদে বিশ্বের বৃহত্তম শক্তি আমেরিকাকে যে বেজিং পাশে পাবে না, তা শি চিনফিংরা ভালই জানেন। এশিয়া এবং ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা যে সব দেশ আমেরিকার সামরিক সহযোগী, তাদেরও যে পাশে পাওয়া যাবে না, বেজিং‌ সে কথাও জানে। ভারতের সঙ্গে এই সব দেশের ক্রমবর্ধমান মৈত্রী, সমন্বয় ও সহযোগিতার ছবিটা আজ গোটা বিশ্বের সামনে স্পষ্ট। কিন্তু কূটনৈতিক যুদ্ধ তথা স্নায়ুর লড়াই যে এর পরেও বাকি থাকে, বেজিং তা দেখাচ্ছে।

ডোকলাম ভুটানের, নাকি চিনের? সঙ্কটের উৎসস্থল মূলত এই প্রশ্নটিই। এই প্রশ্নের সর্বসম্মত উত্তর না খুঁজেই ডোকলামের নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছিল বেজিং। তাই ভারত সেনা পাঠিয়েছে। পড়শি ভুটানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়বদ্ধতা ভারতের এই পদক্ষেপের অন্যতম প্রধান কারণ। কিন্তু সেই ভুটানই ধীরে ধীরে চিনের প্রতি নরম এখন। চিনা দূতাবাস নেই ভুটানে। চিনেও নেই ভুটানের কোনও দূত। তা সত্ত্বেও কূটনৈতিক স্তরে থিম্পুর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে বেজিং এবং এমন বার্তাই দেওয়া হয়েছে চিনের তরফে যে ভুটান এখন ভারতীয় প্রভাব থেকে নিজেকে কিছুটা হলেও মুক্ত করার চেষ্টায়। ভুটানেই কিন্তু শেষ হচ্ছে না উদ্বেগ। নেপালের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়ে নিয়েছে চিন। ডোকলাম বিতর্কে চিনের অবস্থান কী, তা নেপালের কাছে বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে, আরও অনেক বৈঠক, অনেক দৌত্যের পথ খুলে ফেলা হয়েছে।

পাকিস্তান দশকের পর দশক ধরেই চিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। বিপুল চিনা বিনিয়োগ এখন বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাকেও বেশ কিছুটা বেজিং-মুখী করে তুলেছে। নয়াদিল্লিকে উদ্বিগ্ন হতেই হচ্ছে অতএব।

ভারতকে বেকায়দায় ফেলতেই হয়তো পড়শিদের প্রতি হঠাৎ যত্নবান চিন। হয়তো এই চিনা কৌশল দীর্ঘমেয়াদের নয়। কিন্তু এই কৌশলের মোকাবিলার পথ ভারতকে খুঁজতেই হবে। ধীরে ধীরে প্রায় সব পড়শির উপর থেকে কমতে শুরু করেছে ভারতীয় প্রভাব। এমন ছবি ভারতের জন্য উদ্বেগজনক, এ ভারতীয় কূটনীতির জন্য অত্যন্ত দুঃসময়। সুদিন যে কোনও মূল্যে ফেরাতেই হবে। পদক্ষেপটা এ বার সযত্ন এবং সুচিন্তিত হওয়া তাই খুব জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE