Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Newsletter

বিবিধের মধ্যে মিলনের মন্ত্র থেকে ক্রমশ ছিটকে যাচ্ছি আমরা

ধর্ম-জাতি-ভাষা ‘বিভাজন’ এর লড়াইয়ে আমরা, এ দেশের সাধারণ মানুষ, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মূল লক্ষ্য থেকে ক্রমাগত দূরে ছিটকে গিয়েছি। নাগরিক হিসাবে প্রাপ্য ন্যূনতম সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি যত, ততই বাড়তে দেখেছি হিংসা ও বিদ্বেষের লেলিহান শিখা।

নেতাজির প্রপৌত্র চন্দ্র কুমার বসু।

নেতাজির প্রপৌত্র চন্দ্র কুমার বসু।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৯
Share: Save:

অকিঞ্চিৎকর। বস্তুত সেটা বললেও কম বলা হয়।

ক্ষুধাসূচকের নিরিখে যখন আমাদের অবস্থান লজ্জাজনক হয়, যখন মানব উন্নয়ন সূচকের নানান মাপকাঠি আমাদের জানিয়ে দেয়, এখনও অনেকটা লম্বা পথ বাকি সামনের দিকে এগনোর, তখনই অকিঞ্চিৎকর কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের কারও কারও মাতামাতি একটু দৃষ্টিকটুই ঠেকে বইকি।

একদা লোকসভা নির্বাচনের বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রকুমার বসু আচমকাই যদি আবিষ্কার করে থাকেন, এই দেশে গোমাতার পাশাপাশি সমানভাবে ‘বন্দিত’ হওয়া দরকার ছাগমাতাও এবং হিন্দুমাত্রের কাছে ছাগমাংস পরিত্যাজ্য হওয়া দরকার, তাকে কোনও এক ব্যক্তির ভাবনা বলে ধরে নিয়ে আমরা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারতাম। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকের স্বকপোলকল্পিত মত বলে গণ্য করাই যেতে পারত। কিন্তু সেই মতের পাল্টা ধারাবিবরণী যদি বেরিয়ে আসতে থাকে কোনও এক রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের কাছ থেকে, বিস্তর ইতিহাস ও বুদ্ধিচর্চাসঞ্জাত ভঙ্গিতে ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় যদি মন্তব্য করেন, না ছাগ নয়, গরুই আসলে এ দেশের হিন্দুদের মাতাস্বরূপ, তখন ঈষৎ বিস্মিত এবং ততোধিক ক্ষুব্ধ হওয়ার অবকাশ তৈরি হয়। যে দেশ এখনও যুদ্ধ করে চলেছে অনাহারজনিত মৃত্যুর সঙ্গে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সংস্থানের প্রশ্নে অনেক পিছিয়ে, ঘরে ঘরে শৌচালয় এখনও সুদূর স্বপ্ন— সেই দেশে সাংবিধানিক অলিন্দের বাসিন্দারা যদি গরু অথবা ছাগ, মাতার ভূমিকা কার, এই বিতর্কেই সময় কাটান, তাতে ক্ষোভ হবে বইকি।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ধর্ম-জাতি-ভাষা ‘বিভাজন’ এর লড়াইয়ে আমরা, এ দেশের সাধারণ মানুষ, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মূল লক্ষ্য থেকে ক্রমাগত দূরে ছিটকে গিয়েছি। নাগরিক হিসাবে প্রাপ্য ন্যূনতম সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি যত, ততই বাড়তে দেখেছি হিংসা ও বিদ্বেষের লেলিহান শিখা। সে শিখা কখনও জাতির নামে, কখনও ধর্মের নামে, কখনও ভাষার নামে। ভারতের এই যে সামূহিক বোধ, বিবিধের মধ্যে মিলনের মন্ত্র সেখান থেকে ক্রমাগত ছিটকে যেতে যেতে আমরা ছোট ছোট দ্বীপে পরিণত হয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন। এক মুষ্টিবদ্ধ হাত শক্তি হারিয়ে পরিণত হয়ে যাচ্ছে নিতান্তই পাঁচটা আঙুলে। যারা একত্র হলে বজ্রনির্ঘোষের পরিস্থিতি হয় তারাই এখন বিদ্বেষক্লিষ্ট সন্দেহদীর্ণ সহাবস্থানে।

আরও পড়ুন: ছাগলও ‘মাতা’, হিন্দুরা মাংস ছাড়ুন, চন্দ্র বোসের মন্তব্য সামলাতে আসরে তথাগত

ক্ষমতার অলিন্দ ঠিক এটাই চায়। অনেক ছোট ছোট দ্বীপ দেখতে চায় তারা। এবং সেই জন্যই অনেক সময় অকিঞ্চিৎকর বিতর্কের ছদ্মবেশে পেশ হয় কোনও এক বিষবৃক্ষের বীজ। গরু এবং ছাগলের অপ্রাসঙ্গিক একটি বিতর্কের সূত্রে এতগুলো কথা মনে এল। যদি এমনটাই হয় এই বিতর্ক এত সুদূরপ্রসারী ভাবনাপ্রসূত নয়, তাতেও পটভূমিটা জেনে রাখা ভাল।

আম আদমির দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদাগুলোর দিকে এ বার নজর ঘোরানো যেতে পারে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE