Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

অসংবেদনশীল আচরণ

ইংরেজিতে পরিচিত যে কথা ‘ওয়াশিং ডার্টি লিনেন ইন পাবলিক’, তার সহজ বাংলা অর্থ হল প্রকাশ্যে কাদা ঘাঁটা। গত দু’দিন ধরে এ বঙ্গীয় সমাজ নিপুণ ভাবে সেই কাজটি করে গেল। বলে রাখা ভাল, মিডিয়াও সমান ভাবে তার অঙ্গীভূত।

শোভন চট্টোপাধ্যায় ও রত্না চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

শোভন চট্টোপাধ্যায় ও রত্না চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ০০:২৮
Share: Save:

মন্ত্রী হিসেবে শোভন চট্টোপাধ্যায় নাকি আর তত মনোযোগী নন, এই অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিরস্কার এবং অবশেষে শোভনবাবুর মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা। মঙ্গলবারের এই ঘটনাক্রমের রেশ ধরে রাজ্যজুড়ে যে কুনাট্য রঙ্গ হয়ে চলল তা এক কথায় বলতে গেলে বালখিল্য ও নিন্দনীয়। রেনেসাঁর আলোকপ্রাপ্ত এই বঙ্গ যে আসলে এখনও হুতোমের আমলেই পড়ে রয়েছে সেটাই আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।

ইংরেজিতে পরিচিত যে কথা ‘ওয়াশিং ডার্টি লিনেন ইন পাবলিক’, তার সহজ বাংলা অর্থ হল প্রকাশ্যে কাদা ঘাঁটা। গত দু’দিন ধরে এ বঙ্গীয় সমাজ নিপুণ ভাবে সেই কাজটি করে গেল। বলে রাখা ভাল, মিডিয়াও সমান ভাবে তার অঙ্গীভূত। শোভন-রত্না-বৈশাখী নিয়ে বিস্তর চর্চা, তাঁদের সম্পর্কের আঁকিবুকি-টানাপড়েন, আবেগ-ঈর্ষা-ক্রোধ নিয়ে পাড়ার আড্ডা থেকে শুরু করে অফিস ক্যান্টিন সর্বত্র কাটাছেঁড়া চলল তীব্রভাবে। অবশেষে বুধবার এসে গেল চতুর্থ এক চরিত্র, যিনি নাকি শোভনের ভাষায় রত্নার ‘প্রেমিক’। ত্রিকোণ পালার চতুষ্কোণত্ব প্রাপ্তি ঘটল। ঠাট্টা-ব্যঙ্গের পরিবেশের মধ্যেই এসে গেল হত্যার চক্রান্তের নাটকীয় উপাদান, পরস্পর পরস্পরের উদ্দেশে তীব্র গরল নির্গমন— ক্রিমিনোলজি, সাইকোলজি, অ্যানাটমির জটিল অঙ্ক পেরিয়ে যে যাঁর নিজের মতো নিদান দিয়ে দিলেন। পিছনে পড়ে রইল মন্ত্রিত্ব ও কর্মবিমুখতার অভিযোগ, দূরের হয়ে গেল রাজনৈতিক-প্রশাসনিক আলোচনা, বঙ্গীয় সমাজ নিবিড় ভাবে কাছে টেনে নিল নারী-পুরুষের সম্পর্কের টানাপড়েনের মুখরোচক আলোচনাকে।

এমনটা নয় এ শুধু বঙ্গীয় সমাজেরই রীতি। উন্নত বিশ্বও বারংবার একই রকম ভাবে অসংবেদনশীল আচরণ দেখিয়েছে। অথচ আমরা বিকল্প পথে হাঁটতেই পারতাম, আরও একটু সংবেদনশীল ভঙ্গিমায় বিচক্ষণ ভাবে এই ঘটনাক্রমের মুখোমুখি হতে পারতাম। পারলাম না বলেই কর্মবিমুখতার অভিযোগের মধ্যেও ব্যক্তিগত সম্পর্কের আঁচ আসে, আসে শীর্ষ স্তর থেকেই, তা পুষ্টি পায় এ সমাজের একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্তও। কাজ না করলে মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়া উচিত। কাজে কী ভাবে ব্যর্থ বা সফল এই আলোচনাটাকে আমরা সামনে তুলে আনতে পারব? একবার চেষ্টা করেও কি দেখব আমরা?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: আমার জন্মদিনের কেকে বিষ মেশানোর চেষ্টা হয়েছিল: বিস্ফোরক শোভন

আরও পড়ুন: ‘আমি কবে বলেছি, অভিজিতের সঙ্গে প্রেম করেছি, বেশ করেছি?’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE