‘নো-বল’ বিতর্কে প্রশ্ন উঠছে আমাদের মানসিকতাও। ছবি: এএফপি এবং রয়টার্স।
যশপ্রীত বুমরা ক্ষুব্ধ। সঙ্গত কারণেই। ট্র্যাফিক সচেতনতার বিজ্ঞাপনে জয়পুর পুলিশ যে ভঙ্গিমায় বুমরার ‘নো-বল’-এর ছবি ব্যবহার করেছে, তাতে শুধু যে অসংবেদনশীলতারই পরিচয় দিয়েছে তারা তা নয়, একই সঙ্গে প্রমাণ করেছে, তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অত্যন্ত নিম্নরুচির।
মুশকিলটা আসলে ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে গোটা দেশের যুক্তিসীমালঙ্ঘনকারী আবেগের শিকড়েই। যে আবেগ যাবতীয় অন্ধকারের মধ্যে এই ক্রিকেট-আলোকে সামনে রেখে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায়, যে আবেগ দৈনন্দিন হাজারো পরাজয়ের গ্লানি থেকে মুক্ত করার একটা দিগন্ত রচনা করে। অতএব সেই আবেগ যুক্তিবোধহীন। অতএব সেই আবেগে জয় মানে ক্রিকেটারদের ঈশ্বরজ্ঞানে পুজো আর পরাজয় মানে বাড়ি ভাঙচুর বা কুশপুতুল পোড়ানো এবং নিন্দার বর্ষণের মধ্যেই গড়াপেটার বঙ্কিম ভ্রূকুটি।
সেই আবেগই দেশের একটা বৃহদাংশের কাছে যশপ্রীত বুমরাকে ভিলেন বানিয়ে ছে়ড়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে শুরুর স্পেলে ফখর জামানকে আউট-করা ওই বলটা ‘নো-বল’ না হলে যেন ভারত জিতে যেত, যেন ভারত ব্যাটিং-বোলিংয়ে অন্যথায় দুর্দান্ত করেছিল! অতএব, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল, বিশেষজ্ঞদের কাটাছেঁড়া, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ইত্যাদির এখন লক্ষ্য যশপ্রীত বুমরা, ভারতের বহু জয়ের কারিগর।
সাধারণ মানুষের আবেগে নিয়ন্ত্রণ সম্ভবপর নয়। কিন্তু জয়পুর পুলিশও সেই আবেগে ভেসে গেল কী ভাবে? এবং কী ভাবে ‘নেভার ক্রস দ্য লাইন’ বিজ্ঞাপনে বুমরার ওই ‘নো-বল’ মুহূর্তকে ব্যবহার করল ন্যক্কারজনক ভাবে? শত ধিক্কার প্রাপ্য জয়পুর পুলিশের।
একই সঙ্গে অভিনন্দন প্রাপ্য বুমরার। সঙ্গত ক্ষোভ প্রকাশের ভঙ্গিও কতটা সংযত হতে পারে, সেটা দেখিয়েছেন তিনি। এ কথা ঠিক, জয়পুর পুলিশ ক্ষমা চেয়ে বলেছে, বুমরাকে অপমান করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না, তবুও বিতর্কটা থামতেই চাইছে না। থামছে না, কারণ দর্শনগত ভাবে আমরা সবাই এক ভুলের মধ্যে বাস করছি।
বুমরা বিতর্ক এক বার আমাদের আয়নার সামনে দাঁড় করাবে? এক বার আমাদের মনে করাবে, আমরা সবাই নিতান্ত মানুষ, এবং মানুষ মাত্রেরই ভুল হয়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy