Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শিশু অধিকার

প্রশ্ন উঠিতে পারে, সরকারি মন্ত্রক বা দফতর তৈয়ারি করাই কি শিশুর অধিকার রক্ষার যথার্থ উপায়?

— ফাইল চিত্র।

— ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০৫
Share: Save:

সরকারি দফতর দিয়া যে কতটুকু সামাজিক সংস্কার সম্ভব, সে বিষয়ে একটি বাস্তবসম্মত ধারণা ভারতবাসীর আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মূল সমস্যাগুলির সমাধান হইয়া উঠে না কেবল সরকারি দফতরের অবহেলা, গাফিলতি কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। এই দেশে যে বেশ কিছু কাল ধরিয়া একটি কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ দফতর রহিয়াছে, সাধারণত নাগরিক সমাজ তাহা অনুভব করিবার সুযোগ পায় না। তবুও সরকারি দফতর বিষয়টির গুরুত্ব অসীম। কোনও অভিযোগ দায়ের করিতে হইলে, কিংবা কোনও একটি বিশেষ খাতে অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হইলে সংশ্লিষ্ট দফতরের কৃপামুখী না হইয়া গত্যন্তর নাই। এই বাস্তব প্রয়োজনটি মাথায় রাখিয়াই সম্প্রতি একটি শিশু অধিকার বিষয়ক অসরকারি সংস্থা দাবি তুলিয়াছে, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের বদলে কেবল শিশু অধিকারের জন্য একটি সরকারি দফতর তৈয়ারি হউক।

প্রশ্ন উঠিতে পারে, সরকারি মন্ত্রক বা দফতর তৈয়ারি করাই কি শিশুর অধিকার রক্ষার যথার্থ উপায়? প্রশ্নটি উড়াইয়া দিবার নহে। কোনও বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হইলেই তাহার জন্য এক জন মন্ত্রী বসাইয়া একটি মন্ত্রক গড়িতে হইবে— এই ধারণাই এই দেশে বিপুলায়তন মন্ত্রিসভাকে লালন করে। কিন্তু শিশুদের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রক গড়িবার কিছু বাস্তব যুক্তি আছে। প্রথমত, ভারতের মতো দেশে শিশু অধিকার বিষয়টি নারী-কল্যাণ হইতে আলাদা করিয়া দেখা জরুরি, কেননা দারিদ্রের কারণে শিশুদের সমস্যার কিছু বিশেষত্ব থাকে, যাহা অন্য যে কোনও জনগোত্রের অপেক্ষা পৃথক ভাবে বিচার্য। যেমন, শিশুশিক্ষা। এই একটি বিষয়ে অবহেলা দেশকে বহু যোজন পিছাইয়া লইয়া যাইতেছে। শিক্ষা দফতরের পক্ষে শিশুদের বিবিধ পারিবারিক, সামাজিক কিংবা সম্প্রদায়গত সমস্যার দিকে মন দেওয়া সম্ভব না-ই হইতে পারে। যে পরিবার শিশুশ্রমের উপর ভর করিয়া বাঁচে বলিয়া শিশুকে ইস্কুলে পাঠায় না, তাহার সঙ্কট নিরসন শিক্ষা দফতরের কাজ নহে। যে পরিবার কন্যাশিশুকে নিরাপত্তার অভাবের কারণে স্কুলে পাঠাইতে অপারগ, তাহার সমস্যার সমাধান শিক্ষার অধিকার-বিধিতে লিখিত নাই। শিশু অধিকারের প্রতি স্বতন্ত্র মনোযোগ আবশ্যক।

দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্র বলিতে যে সমাজে সাধারণত ভোট-তন্ত্র বোঝায়, সেখানে শিশু-অধিকার বিষয়টি ‘স্বাভাবিক ভাবেই’ অবহেলিত হইবার কথা— কেননা শিশুদের ভোটাধিকার নাই। শিশুরা নিজেদের অধিকারের জন্য কোনও কালে সরব হইতে পারিবে না, অধিকার নিশ্চিত করিতে পারিবে না, ইউনিয়ন তৈরি তো দূরস্থান। যত দিনে তাহাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হইবে, তাহার আগে বিস্তর অন্যায় ঘটিয়া যাইবে, প্রভূত ক্ষতিসাধন হইয়া যাইবে, সম্ভাবনা এমনই। বিশেষ করিয়া কন্যাশিশুদের ক্ষেত্রে নির্যাতন শিশু অধিকারের ক্ষেত্রে একটি আলাদা মাত্রা দাবি করে। নারী-অধিকারের ধ্বজাধারী শিশু-অধিকার খণ্ডন করিতেছেন, এমন নজির বিরল নহে। সুতরাং কোনও দায়িত্ববান অসরকারি সংস্থা যে নৈতিক দায় লইয়া কাজ করে, তেমনই একটি স্পষ্টত নির্ধারিত দায়বোধ সরকারের তরফে না থাকিলে শিশু অধিকারের সংরক্ষণ অসম্ভব। স্বতন্ত্র শিশু মন্ত্রকের প্রশ্নটি লইয়া অতএব আলোচনা আবশ্যক। শিশু দিবস সেই আলোচনার যথার্থ উপলক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Children's Day Children's rights
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE