দায় সরকারের কেন? ফাইল চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করিয়া দিয়াছেন। অস্যার্থ, কচুয়ায় যাঁহারা পদপিষ্ট হইলেন, তাঁহাদের বিপদের দায়টি সরকার স্বীকার করিয়া লইল। এ ক্ষণে প্রশ্ন, দায় সরকারের কেন? কচুয়ার মন্দিরটি সরকারি নহে, জন্মাষ্টমীর দিন সেখানে জমায়েত হওয়ার ডাকও সরকার দেয় নাই। মন্দিরটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তাহার পরিচালন সমিতি আছে। যে ভক্তরা সেই মন্দিরে যান, তাঁহাদের প্রতি দায় সেই পরিচালন সমিতির। স্পষ্টতই তাহারা সেই দায়টির কথা মাথায় রাখে নাই। যে বিপুল জনসমাগম হয়, তাহার তুলনায় ব্যবস্থা ছিল নিতান্তই অপ্রতুল। রাস্তা সঙ্কীর্ণ, প্রবেশ পথ ও বহির্গমনের পথ এক। যথেষ্ট সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী নাই। দুর্ঘটনা না ঘটাই বুঝি অস্বাভাবিক ছিল। এই বিপুল জনসমাগমের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত না হওয়ার দায়টি মন্দির কর্তৃপক্ষ ঝাড়িয়া ফেলিবেন কী উপায়ে? সরকারই বা তাঁহাদের সেই সুযোগটি করিয়া দিবে কেন? মন্দির কর্তৃপক্ষের যদি প্রশাসনিক সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিশ্চয় তাহার ব্যবস্থা হইবে। তাহার জন্য যে খরচ প্রয়োজন, কর্তৃপক্ষকেই তাহা করিতে হইবে। কিন্তু যে কথাটি দ্ব্যর্থহীন ভাবে বুঝিয়া লওয়া প্রয়োজন, তাহা হইল— এই মন্দিরের ক্ষেত্রে, এবং এই গোত্রের যে কোনও জনসমাগমের ক্ষেত্রেই, মূল দায় সংশ্লিষ্ট আয়োজকদের, সরকারের নহে। প্রশাসন সাহায্য করিতে পারে, ব্যবস্থাপনার দায়টি বহন করিতে পারে না। কচুয়ার ঘটনার জন্য যাঁহারা দায়ী, তাঁহাদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করাই প্রশাসনের কর্তব্য। নিহত-আহতদের পরিবারকে যদি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, তবে তাহার ব্যবস্থাও মন্দির কর্তৃপক্ষকেই করিতে হইবে। যে দায় সরকারের নহে, সরকারের তাহা গ্রহণ করা অকর্তব্য।
কচুয়ার মন্দির যে এই ভিড়ের পক্ষে অপ্রতুল, তাহা না বোঝার কোনও কারণ কর্তৃপক্ষের ছিল না। ফলে, প্রথম দায়িত্ব ছিল পুণ্যার্থীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার অধিক যেন এক জন লোকও আসিতে না পারেন, তাহার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ছিল। পূর্বে নাম নথিভুক্তকরণ, এবং তাহার পর লটারি বা আগে আসিলে আগে পাইবার নীতি অনুসারে বাছিয়া লওয়া যাইত, এই বৎসর কাহারা মন্দিরে আসিতে পারিবেন। নির্দিষ্ট দূরত্বে প্রবেশদ্বার তৈরি করিয়া নাম যাচাই করিয়া দর্শনার্থীদের ঢুকিতে দেওয়া বিধেয় ছিল। প্রবেশমূল্যের ব্যবস্থা করিলেও খানিক কাজ হইত। এক বার লোকসংখ্যা নির্দিষ্ট করিবার পর তাঁহাদের নিরাপত্তার যথার্থ ব্যবস্থা করিতে হইত। পুকুরের উপর পাটাতন পাতিয়া দোকান দেওয়া যে আদর্শ ব্যবস্থা নহে, তাহা বুঝিতে কষ্ট হয় কি? বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ, সিসিটিভির মাধ্যমে জোরদার নজরদারি, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ইত্যাদির ব্যবস্থা না করিয়া কি এত মানুষের জীবন লইয়া ছিনিমিনি খেলা যায়? পুণ্যার্থীদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। অভিজ্ঞতা বলিবে, যে কোনও ভিড়ের ন্যায় তীর্থক্ষেত্রের পুণ্যার্থীরাও সতত বিশৃঙ্খল। নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরেই শৃঙ্খলা মানিয়া লওয়া বিধেয়। যদি মন্দির কর্তৃপক্ষও নিজের দায়িত্ব পালনে অপারগ হন, আর পুণ্যার্থীরাও নিজেদের প্রাণের মূল্য বুঝিতে অস্বীকার করেন, তবে করণীয় একটিই— এই গোত্রের উৎসব বন্ধ করিয়া দেওয়া। প্রাণের ঝুঁকি লইয়া উৎসব চলিতে দেওয়া যায় না। তাহাতে যদি কাহারও মনে আঘাত লাগে, সেইটুকু বেদনা সহন করা ভিন্ন গত্যন্তর কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy