আমার স্ত্রী-র ফোনে ২৫ তারিখ দুপুর নাগাদ ফোন আসে। আমার সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া হয়। ফোন ধরা হলে জানতে পারি, আমার নাম পদ্মভূষণের জন্য প্রস্তাব করা হবে। এতে আমার সম্মতি রয়েছে কি না জানতে ওই ফোন। আমি সঙ্গে সঙ্গেই সম্মতি দিই। কারণ, দেশের সরকার কোনও স্বীকৃতি দিলে, সেটা তো গর্বের ব্যাপার! কেন্দ্রীয় সরকার ডেকে এই সম্মান দিয়েছে। সেটা ফেরাব কী করে! আমি এত বছর ধরে দেশের জন্য, গানবাজনার জন্য যে কাজ করেছি, এটা তারই স্বীকৃতি। সত্যি বলতে, এক ধরনের শ্লাঘাও বোধ করছি, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে এই সম্মান পেয়ে।
তবে, এই সম্মান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আমার নামের পাশে কেন ‘উত্তরপ্রদেশ’ রয়েছে, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। এ কথা সত্যি যে, আমার জন্ম উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে। কিন্তু ১০ বছর বয়সে আমি কলকাতা চলে আসি। সেই থেকে বাংলা বা কলকাতাই আমার সব। আমার বড় হওয়া, বেড়ে ওঠা, গান শেখা, ধীরে ধীরে শিল্পী হিসাবে নিজেকে বিকশিত করা— এ সবই প্রত্যক্ষ করেছে কলকাতা। গত ৪৩ বছর ধরে আমি কলকাতার বাসিন্দা। উত্তরপ্রদেশ আমার জন্মভূমি। কিন্তু কর্মভূমি তো বাংলা। তাই আমার নামের পাশে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে বাংলার নাম থাকলে আনন্দ হত। এতে আমি কিছুটা আঘাত পেয়েছি।
কারণ, আমি নিজেকে দেখি কলকাতার মানুষ হিসাবে। বাংলার মানুষ হিসাবে। আমি হিন্দির সঙ্গে বাংলায় কথা বলি। বাংলা ভাষাটা শেখার চেষ্টা করেছি। ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর ছবিতে আমাকে দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতও গাইয়েছেন। বাংলার একাধিক প্রকল্পের সঙ্গে আমি যুক্ত। গান শেখানোর জন্য কলকাতাকেই বেছে নিয়েছি। আমার স্কুলও এখানে। যে কাজের জন্য এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে, তা তো বাংলা থেকেই। তা হলে বাংলাকে ভুলব কী করে! তাই আমার এই সম্মান বাংলার সম্মান বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় তালিকায় সে রকম উল্লেখ না থাকায় আমি কষ্ট পাচ্ছি।