Advertisement
E-Paper

গণতন্ত্রের কামড়

এমন এক সময় ছিল, যখন উদ্বেগ হইত যে রাস্তার রাজনীতিকে যদি রাজনৈতিক নেতারা বিধানসভার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অনিয়া ফেলেন, তাহা হইলে গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য কতই-না ক্ষুণ্ণ হইবে। আপাতত দ্রুত একটি সময় আসিতে চলিয়াছে, যখন সংসদ কিংবা বিধানসভার রাজনৈতিক পরিবেশ যদি রাস্তায় তৈরি হয়, তবে কী অনাসৃষ্টি ঘটিবে, তাহা লইয়া উদ্বেগ হইতেছে।

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০০:০৪

এমন এক সময় ছিল, যখন উদ্বেগ হইত যে রাস্তার রাজনীতিকে যদি রাজনৈতিক নেতারা বিধানসভার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অনিয়া ফেলেন, তাহা হইলে গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য কতই-না ক্ষুণ্ণ হইবে। আপাতত দ্রুত একটি সময় আসিতে চলিয়াছে, যখন সংসদ কিংবা বিধানসভার রাজনৈতিক পরিবেশ যদি রাস্তায় তৈরি হয়, তবে কী অনাসৃষ্টি ঘটিবে, তাহা লইয়া উদ্বেগ হইতেছে। আগে সাংসদ বা বিধায়করা প্রতিনিধি-কক্ষের ভিতরে চেঁচামেচি ঝগড়াঝাঁটি করিলে দেশব্যাপী ছিছিক্কার শুরু হইত। এখন তাঁহারা নিয়মিত পরস্পরের সহিত হাতাহাতি করেন, পারস্পরিক শারীরিক নিগ্রহও বাদ থাকে না, কিন্তু জাতীয় প্রচারমাধ্যমে তাহার স্থান হয় মাত্র এক বেলা, নিদেনপক্ষে এক দিন। ভারতীয় রাজনীতির শক্তির গুণগান অনেকেই করেন, তবে তাহার সহ্যশক্তির প্রশংসা বড় শোনা যায় না। অথচ যে সহনশীলতার পরাকাষ্ঠা দেখাইয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতি এ দেশে নিজেকে পরিচালিত করে, চরৈবেতি আদর্শে স্থিত রাখে, তাহা দুনিয়াময় দৃষ্টান্ত হইবার যোগ্য। সেই দৃষ্টান্তে নূতন মাত্রা যোগ করিয়া কেরলের বিধানসভায় বাজেট ভাষণ চলাকালীন বিরোধী পক্ষ এলডিএফ বিধায়ক শাসক ইউডিএফ বিধায়ককে কামড়াইয়া দিলেন। কামড়ের ঘটনাটুকুতেই ইতিহাস সীমাবদ্ধ থাকিল না। প্রবল মারপিট হইচই এবং শেষ পর্যন্ত পাঁচ বিধায়কের গ্রেফতারের উত্তাল কর্মকাণ্ডের মধ্যে জানা গেল, দংশিকা জমীলা প্রকাশন ‘আত্মরক্ষা’র জন্যই প্রতিপক্ষ বিধায়ক শিবদাসন নায়ারের গায়ে দাঁত বসাইয়াছিলেন। তাঁহার বক্তব্য, আত্মরক্ষার প্রয়োজন হয় শিবদাসন নায়ার শ্রীমতী প্রকাশনের শ্লীলতায় বিঘ্ন ঘটাইবার চেষ্টা করায়। অলমতি বিস্তারেণ। ভারতীয় গণতন্ত্র অমর হউক।

রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানের রাজনীতির পরস্পর-সংযোগের যে ভাবনা বা দুর্ভাবনা দিয়া এই স্তম্ভের প্রস্তাবনা, তাহা কেবল আলংকারিক নহে। বাস্তবিক শুক্রবার তিরুবনন্তপুরমের বিধানসভায় যে দৃশ্যাবলি প্রকাশিত হইল, তাহার অতি অনুরূপ ঘটনা দেখা গেল রাজধানীর রাস্তাতেও। বিরোধী পক্ষের বিক্ষোভ-প্রদর্শনে যে পরিমাণ হিংসাত্মক তাণ্ডব দেখা গেল, তাহা সুলভ বলা যায় না। শনিবারও ইহার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল এলডিএফ বিধায়কদের গ্রেফতার ও শাস্তিবিধানের প্রতিবাদ হিসাবে। তিরুবনন্তপুরম প্রমাণ করিতে বসিয়াছে, রাজনীতি প্রকৃত অর্থেই শক্তি প্রদর্শন। জোর যাহার মান তাহার।

সম্ভবত আগে আশাবাদী ও আদর্শবাদীরা যখন ভাবিতেন, প্রতিষ্ঠান বস্তুটি রাস্তা হইতে পৃথক, তাঁহারা ভুল করিতেন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী আশাবাদে ভাসিয়া গিয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রীও ভাবিয়াছিলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিই সমাজের বিশৃঙ্খলাকে শৃঙ্খলায় ফিরাইয়া আনিবার পথ, কেননা গণতন্ত্রই মতপার্থক্য ও দৃষ্টিবৈষম্য প্রাতিষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিটাইবার পদ্ধতি। কিন্তু গণতন্ত্রই যে আবার প্রতিষ্ঠান ও সমাজের (অর্থাত্‌ রাস্তার) মধ্যে পার্থক্য ক্রমশ কমাইয়া আনে, এবং সমাজের সত্যকারের ভাব-ভাবনার ধারাকে প্রতিষ্ঠানে প্রতিফলিত করে, সেই প্রক্রিয়াটি তাঁহারা সে দিন দেখিয়া যাইতে পারেন নাই। জলতল সমানেই সমতার দিকে ধাবিত হয়। দুর্বৃত্ত-নিয়ন্ত্রিত সমাজের অমোঘ গতিওরাজনৈতিক দুর্বৃত্তকরণের প্রক্রিয়াটিকে ক্রমশ সম্পূর্ণ করিতে চাহিতেছে।

editorial anandabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy