Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

‘আর কত অপমান করলে পুলিশ ডাকবি’

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

‘আর কত অপমান করলে পুলিশ ডাকবি’

কাগজে ক’দিন ধরে দেখছি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কলকাতা পুলিশের কমিশনারকে অনেক শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা ধিক্কার দিয়ে চলেছেন।

আমার মনে পড়ছে ১৯৬৯ সালে যখন আমি কলকাতা পুলিশের ডিসি ডিডি, এক দিন খবর পাওয়া গেল যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ সেন ও সিন্ডিকেটের মেম্বারদের ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। ঘণ্টা তিনেক পরে বেলা প্রায় দুটোর সময় পুলিশ কমিশনার পি কে সেন আমাকে বললেন, এক বার বিশ্ববিদ্যালয়ের একলা গিয়ে কী হচ্ছে ব্যাপারটা দেখে এসো। আমি ইউনিফর্ম পরা ছিলুম। উপাচার্যের ঘরের দরজায় গিয়ে দেখি যে, এক জন বিখ্যাত বামপন্থী নেতার ছেলে— সে-ও তত দিনে একটু নাম করেছে— ক্রমাগত উপাচার্য ড. সেনকে লাথি মারছে ও মুখে বলছে, ‘তোকে আর কত অপমান করলে তুই পুলিশ ডাকবি’ আর ড. সেন ও সিন্ডিকেটের অন্যান্য মেম্বাররা নিশ্চুপ অবস্থায় বসে আছে। আমি ড. সেনের ছাত্র। আমাকে দেখে তিনি বললেন, ‘নিরুপম, তোমাদের তো ডাকিনি। তুমি কেন এসেছ? চলে যাও।’

পাশে বসেছিলেন আর এক অধ্যাপক অম্লান দত্ত। তিনিও আমাকে চলে যেতে বললেন। আমি চলে এলুম ও কমিশনারকে সব জানালুম। আরও ঘণ্টা দুই লাথি মেরে ছেলেটি নিজেই ক্লান্ত হয়ে তার দলবল নিয়ে চলে গেল। বছর কয়েক পরে শুনেছিলুম ছেলেটি বীরভূম জেলায় কাজ করছে।

আমি ডি সি থাকতে অনেক বার ঘেরাও থেকে লোকেদের মুক্ত করেছি। তার মধ্যে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপককে দু’বার, ‘স্টেটসম্যান’-এর সম্পাদককে এক বার, মার্টিন বার্নের অধ্যক্ষকে এক বার, এমন সব লোক আছেন। আমি এগুলো করার সময় প্রচুর অফিসার সঙ্গে নিয়ে যেতুম। সকলেই ইউনিফর্মে থাকত। এতে ভাল ফল পেয়েছি। আর যেখানে খবর থাকত ঘেরাও ওঠাতে বাধা আসবে সেখানে ভাল ফোর্স নিয়ে গেছি। এখন যে সাদা পোশাকে লাঠি ছাড়া অবস্থায় অবরোধ তুলতে ফোর্স যাচ্ছে, কমিশনারকে যদি এই রকম আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে বা তিনি এটাই শ্রেষ্ঠ উপায় বিবেচনা করেন, তা হলে তিনি নিশ্চয়ই নিজের বিবেচনা অনুযায়ী কাজ করে থাকবেন।

নিরুপম সোম। কলকাতা-৩১

¶ ২ ¶

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত দুঃসহ ঘটনায় সকল শিক্ষানুরাগী মানুষের সঙ্গে আমরাও উদ্বিগ্ন। দীর্ঘ তেত্রিশ বছর উত্তরবঙ্গের এক অত্যন্ত ছাত্রবহুল কলেজে পড়ানোর অভিজ্ঞতার সুবাদে দু’এক কথা লিখছি। দীর্ঘ সময়ে পাঁচ জন অধ্যক্ষের সঙ্গে কাজ করেছি। কলেজে সব সময়ই চার হাজারের বেশি ছাত্র থাকত। প্রথম দু’জন অধ্যক্ষের কাল বাদ দিলে পরবর্তী তিন জনের সময়েই সত্তরের উত্তাল দশক থেকে এখনও পর্যন্ত ঘেরাও, বিক্ষোভ, অভিযোগ এই কলেজের নিত্যসঙ্গী। মাঝে মাঝে অধ্যক্ষেরা না থাকলে আমাদেরও পালা করে দায়িত্বে থাকতে হত। কিন্তু দেখেছি, কোনও অধ্যক্ষই ধৈর্য হারাননি, অসম্ভব সংবেদনশীল ছিলেন তাঁরা, যার ফলে ছাত্র নিয়ন্ত্রণ সুষ্ঠু ভাবে করা সম্ভব হত।

সত্তরের দশকে গণটোকাটুকি দমনে অনেক অত্যাচার নিপীড়নের শিকার হতে হয় আমাদের। শিক্ষক সংসদের সম্পাদক রূপে এক বার প্রতীকী ভাবে আমার কোয়ার্টার্সে একটি বোমা নিক্ষিপ্ত হল, অধ্যক্ষের কোয়ার্টার্স প্রাঙ্গণে আর একটি নিক্ষিপ্ত হল। ছোরার স্পর্শে মুচলেকা দিতে হল, নকল ধরা হবে না। তথাপি পুলিশ দিয়ে ছাত্র দমনের কথা আমরা কখনও ভাবিনি, অভিভাবকদের সচেতন করে ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ

করি আমরা, অভিভাবকরাও যথেষ্ট সাহায্য করেন। উনিশ বছর অবসর নিয়েছি, আজ আশি বছরের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেখি সেই এক কালের ভুল পথে চালিত ছাত্ররা পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে, শ্রদ্ধাভরে আমন্ত্রণ জানায় নানা অনুষ্ঠানে সভায়।

আসলে অপরিসীম ধৈর্য ও সহানুভূতি ছাড়া কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সে কলেজ হোক বা বিশ্ববিদ্যালয় চালানো সম্ভব নয়। ক্যাম্পাস কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব আরও বেশি। উপাচার্য ও অধ্যক্ষদের দায়িত্ব সর্বাধিক। তাঁরাই তো অভিভাবক। তখন হার্ডিঞ্জ হস্টেলে থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ এবং ল’ পড়ি। এক বার উপস্থিতি নিয়ে কড়াকড়ি হওয়াতে ডেপুটেশন দিতে গেলাম অধ্যক্ষ পি এন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে (পূর্বতন উপাচার্য)। অন্য ছাত্ররা হার্ডিঞ্জবাসীদের সব ব্যাপারেই ডাকত। ডেপুটেশন দেওয়ার সময় ডে স্কলার এক জন বলল, ‘স্যর, আপনি আমাদের কষ্ট বুঝবেন না। আমরা ট্রামে, বাসে আসি। আপনার মতো গাড়িতে বালিগঞ্জ থেকে আসি না। কাজেই ঠিকমত কলেজে হাজিরা দিতে পারি না।’ পর দিন থেকে বেশ কিছু দিন ড. বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারভাঙা বিল্ডিং-এর পাঁচ তলায় অধ্যক্ষ আবাসে থাকতে শুরু করেন।

আমরা এক দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি। চার দিকে অন্ধকার, যখন ছাত্ররা শিক্ষকের উপর, রোগী ডাক্তারের উপর, অভিভাবক প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিশ্বাসহীনতার এই অসুখ সারতে পারে সব কিছুর মধ্যে রাজনীতির গন্ধ না খুঁজে। আমরা জানি ছাত্ররা আবেগপ্রবণ, উস্কানিতে তাঁরা উত্তেজিত হয়। সত্যি, সব সময় যুক্তি মেনে তারা চলে না। কিন্তু তারা অবুঝ নয়। রাজনীতির আবর্তে আমরা তাদের ঠেলে দেব, যদি আমরা অবিশ্বাস করি তাদের। তাদেরও পাশে পেতে পারি, যদি রাজনীতির সন্দেহ, অবিশ্বাস দূরে রাখতে পারি। শিক্ষক হিসেবে এখনও আমাদের বোঝার সুযোগ আছে।

বনবিহারী দত্ত। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, আলিপুরদুয়ার কলেজ

যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই

শ্যামবাজার ও খান্নার মোড় জনবহুল ও যানবহন অঞ্চল। বাইপাস সংযোগ হওয়ায় গুরুত্ব বেড়েছে। অথচ শ্যামবাজার পাঁচ মাথা মোড় থেকে খান্না মোড় পর্যন্ত যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই। রাস্তায় নেমে রোদ বৃষ্টির মধ্যে যানে ওঠানামা করতে হচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রবল।

ডালিমকুমার দত্ত। কলকাতা-৬

বাস বাড়ান

রাজবলহাট-হরিপাল ১০ নং বাস মাত্র ২টি চলে। ট্রেকারের ছাদে, পাদানিতে ছেলে কোলে করে যাতায়াত করতে হচ্ছে বিপজ্জনক ভাবে। বাস বাড়ানো হোক।

আশিস ভড়। রাজবলহাট, হুগলি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

letters to the edittor letters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE