মোদী যা বলেননি
জঞ্জাল বিতাড়ন করে স্বচ্ছ ভারত গঠনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গাঁধীজির বাণী সংবলিত বক্তব্য গণমাধ্যমগুলিতে যে ভাবে অবিরত প্রচারিত হচ্ছে, তাতে অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে বাংলার গৌরবময় অতীতের দুটি অধ্যায়।
১৫১২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারির শেষে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারত পরিব্রাজন করে ফিরে এলেন নীলাচলে। ক্রমে শ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রার সময় নিকটবর্তী হতে লাগল। জগন্নাথ রথে আরোহণ করে গুণ্ডিচা মন্দিরে গিয়ে ৯ দিন থাকেন। এই মন্দির ‘মাসির বাড়ি’ বলে খ্যাত। এখানে বিগ্রহ-ত্রয়ের অবস্থান বছরে এক বারই। সারা বছর ব্যবহার না হওয়ায় মন্দিরটি ধুলো ও আবর্জনায় মলিন হয়ে থাকে। রথযাত্রা উপলক্ষে বহু কাজ থাকা সত্ত্বেও শ্রীচৈতন্য গুণ্ডিচা মন্দির পরিষ্কার ও ধোয়া-মোছার কাজটি বেছে নিয়েছিলেন। মহাপ্রভু রথের আগের দিন বাংলা ও ওড়িশার ভক্তগণের সঙ্গে মিলে মন্দির চত্বর সমেত ভিতর-বাহির আনাচেকানাচে ঝাঁটা দিয়ে পরিষ্কার করে পরে শত শত কলসী জল ঢেলে ধুয়ে মুছে জায়গাটি নির্মল করেন। প্রসঙ্গত, শ্রীচৈতন্যদেব পুরীতে থাকাকালীন প্রতি বছর গৌড়ীয়-ওড়িয়া ভক্তগণকে সঙ্গে নিয়ে স্বহস্তে মন্দির সম্মার্জন ও ধৌত করতে প্রবৃত্ত হতেন। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আজ প্রায় পাঁচশো বছর ধরে গৌড়ীয় ভক্তগণ ‘গুণ্ডিচা মার্জন’ নামে দারুব্রহ্মের এই বিশেষ সেবা করে আসছেন যত্ন সহকারে।
১৮৯৮ সালে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতায় দেখা দিল ভয়ঙ্কর প্লেগ। কলকাতার পল্লিতে পল্লিতে শুরু হল স্বামী বিবেকানন্দের প্লেগ নিবারণ অভিযান। এই সেবাব্রতে অবিচল সঙ্গী হলেন শিষ্যা নিবেদিতা (ছবিতে)। ঝাড়ু-কোদাল হাতে নেমে পড়লেন তিনি, প্লেগ-আক্রান্ত কলকাতার অলিগলিতে আবর্জনা সাফাইয়ের সংকল্প নিয়ে। ছুটে গেলেন পাড়ায় পাড়ায় ভয়ার্ত নরনারীর সেবায়। লোকসেবার মহাব্রত নিয়ে নিবেদিতা ঝাড়ু-কোদাল হাতে বিচরণ করতে লাগলেন বাগদি, ভাঙ্গি, মেথর, মুদ্দফরাসের ঘরে ঘরে।
বাংলা সে দিন ভেবেছিল, ভারত পরে ভেবেছে, আজও ভাবছে।
চৈতন্যময় নন্দ।মুগবেড়িয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
থোরাং পাস
থোরাং পাস-এর দুর্ঘটনা নিয়ে ‘শেষ দেখলাম, ঘোড়ায় ওঠার চেষ্টা করছে অরূপ’ প্রসঙ্গে এই চিঠি। সুব্রত দত্ত বলেছেন, ‘এর আগে যে সব ট্রেকিং করেছি, তার তুলনায় এই পথ ছিল জলভাত’।
১৯৮৭ সালে আমি ৬৪ বছরের এক ভদ্রলোককে নিয়ে থোরাং পেরিয়ে মুক্তিনাথের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। ভদ্রলোক নাছোড়বান্দা, যাবেনই। তিন দিনের মাথায় বাঁউনজড়ায় তাঁর বমি, মাথাঘোরা শুরু হয়ে গেল। কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে পোর্টারসমেত ওঁকে পাঠিয়ে আমি এগোলাম থোরাং-এর উদ্দেশে একা। সব ঠিক ছিল। চামে-তে শুরু হল বৃষ্টি তার পর প্রবল তুষারপাত। দু’দিন আটকে থাকার পর ট্রেক করে পিসাং। নদী পেরিয়ে গোটা পথ হাঁটু-ডোবা বরফ। পৃথিবীতে তখন দুটো রঙ। নীচে সাদা, মাথার ওপরে নীল। আপার পিসাং-এ এক পাহাড়ি পরিবারে আশ্রয় নিলাম। রাতে সেখানে এলেন স্থানীয় লামা। কোথা থেকে আসছি, কোথায় যাব, রজনীশ এখন কোথায়, রাজীব গাঁধী কেমন দেশ চালাচ্ছে ইত্যাদি প্রশ্নের পর বললেন, ‘ফিরে যাও। আর এগোলে মারা যাবে। থোরাং খুব বিপজ্জনক। কত সাহেবের যে কবর আছে ওখানে।’
পর দিন অন্নপূর্ণা ক্লাইম্ব করতে এক দলের দুই সদস্যের সঙ্গে দেখা। বলল, ওদের থার্ড ক্যাম্প উড়ে গেছে। চামে-তে যাচ্ছে যদি হেলিকপ্টারের বন্দোবস্ত করা যায়। ১৯৮৭ সালের ওই ডিজাস্টার নিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বেশ বড় কভার করেছিল।
সে বার পারিনি। পরে ১৯৮৯ এবং ১৯৯৩ সালে থোরাং পেরোই। রাউন্ড অন্নপূর্ণা নামে এই ট্রেন-এর দূরত্ব ডুমরে থেকে মুক্তিনাথ হয়ে পোখারা পর্যন্ত ৩৪০ কিলোমিটার। প্রতি দিনই নানান চড়াই-উতরাই। থোরাং-এর উচ্চতা ১৭০০০ ফুট নয়, আরও অনেক বেশি। ১৭৭৬৯ ফুট (৫৪১৬ মিটার)। শুধু থোরাং নয়, যে কোনও ট্রেকিং-এ যাওয়ার আগে একটু খোঁজখবর, পড়াশোনা করে গেলে ক্ষতি তো কিছু নেই। আর একটা কথা, কোনও ট্রেকিং-ই ‘জলভাত’ নয়।
নির্মলকুমার দাস। কলকাতা-১৯
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy