Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

জোড়া ধাক্কা তৃণমূলে, দল ছাড়লেন সৃঞ্জয়-লকেট

একই দিনে জোড়া ধাক্কা খেল তৃণমূল। সারদা কাণ্ডে জামিন পাওয়ার পর দিনই দল ছাড়লেন সৃঞ্জয় বসু। সূত্রের খবর, দলের প্রাথমিক সদস্য পদ ছাড়ার পাশাপাশি রাজ্যসভার সাংসদ পদেও ইস্তফা দিতে চলেছেন তিনি। সৃঞ্জয়ের দল ছাড়ার কিছু আগেই অবশ্য দিনের প্রথম ধাক্কা খেয়েছে শাসক দল। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন চিত্রতারকা লকেট চট্টোপাধ্যায়। মাত্র কয়েক দিন আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। আর বৃহস্পতিবার বিজেপিতে যোগ দিলেন লকেট। যিনি রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যও বটে। বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরে রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহর উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দিলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৫:৩০
Share: Save:

একই দিনে জোড়া ধাক্কা খেল তৃণমূল। সারদা কাণ্ডে জামিন পাওয়ার পর দিনই দল ছাড়লেন সৃঞ্জয় বসু। সূত্রের খবর, দলের প্রাথমিক সদস্য পদ ছাড়ার পাশাপাশি রাজ্যসভার সাংসদ পদেও ইস্তফা দিতে চলেছেন তিনি। সৃঞ্জয়ের দল ছাড়ার কিছু আগেই অবশ্য দিনের প্রথম ধাক্কা খেয়েছে শাসক দল। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন চিত্রতারকা লকেট চট্টোপাধ্যায়।

মাত্র কয়েক দিন আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। আর বৃহস্পতিবার বিজেপিতে যোগ দিলেন লকেট। যিনি রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যও বটে।

বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরে রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহর উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দিলেন তিনি। এবং যোগ দিয়েই তোপ দাগলেন শাসক দলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করলেন, কাজ করতে না পারার এবং দলের ‘অবিশ্বাসের পরিবেশ’কে। সাম্প্রতিক নারী নির্যাতন থেকে সারদা কেলেঙ্কারি— অভিযোগের তালিকা থেকে বাদ গেল না কিছুই। অভিনেত্রীর কথায়, “মানুষের জন্য কাজ করতে তৃণমূলে এসেছিলাম। কিন্তু কাজ করতে পারছিলাম না। দমবন্ধ লাগছিল। বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলে প্রতিবাদ করেছি। লাভ হয়নি। তাই দল ছাড়তে বাধ্য হলাম।” সারদার ছায়ায় দলে যে অবিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তার উল্লেখ করে লকেটের দাবি, “তৃণমূলে এখন কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না।” শুধুমাত্র কাজ করার জন্যই এসেছিলাম। দুর্নীতির ভাগিদার হব কেন?”

দলের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যপদও যে তিনি ছাড়ছেন সে কথাও এ দিন জানান লকেট। তবে এই সিদ্ধান্ত যে একেবারেই ‘বিবেক’-এর তাড়নায় তা-ও স্পষ্ট করেছেন টালিগঞ্জের এই পরিচিত মুখ।

পুরনো দল নিয়ে নানা অভিযোগ করলেও, নতুন দলকে কিন্তু ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেন লকেট। জানালেন, বিজেপিতে কাজ করার ‘উপযুক্ত পরিবাশ’ রয়েছে। ‘দমবন্ধ’ অভিনেত্রী বিজেপিকে ‘মুক্ত আকাশ’-এর সঙ্গেও তুলনা করলেন।

অভিনেন্ত্রীর যোগ দেওয়া নিয়ে অবশ্য তৃণমূলকে এক হাত নিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাঁর দাবি, “তৃণমূলের উপর মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। নেতাদের কাজকর্মে কর্মীরা হতাশ। আরও অনেকেই তৃণমূল ছাড়তে পা বাড়িয়েই রেখেছেন।” বনগাঁ এবং কৃষ্ণগঞ্জের আসন্ন উপ নির্বাচনের প্রচারে সদ্য যোগ দেওয়া লকেটকে কাজে লাগানো হবে বলেও জানান তিনি।

লকেটের দল ছাড়ার প্রাথমিক ঝটকা কাটিয়ে ওঠার আগেই এল দ্বিতীয় ধাক্কা। সারদা কণ্ডে জামিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দল ছাড়লেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সৃঞ্জয় বসু। দলনেত্রীকে চিঠি দিয়ে দল ছাড়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

চিঠিতে সৃঞ্জয় জানিয়েছেন, এই মুহূর্ত থেকে দলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করছি। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যসভার সাংসদ পদও ছেড়ে দিতে চাই। তবে সাংসদ পদ ছাড়তে হলে স্পিকারের কাছে সশরীরে হাজির হয়ে আবেদন করতে হয়। ফলে, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।

দল ছাড়ার চিঠিতে তাঁর আরও বক্তব্য, “মমতাদির কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তিনি আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন, সুযোগ দিয়েছিলেন। কিছু দিন ধরে জেলে থাকতে থাকতে আমার মনে হয়েছে, রাজনীতি আমার জন্য নয়। বিশেষত আমার মা এবং স্ত্রী বারবার এই কথা বলছিলেন। তাই এই সিদ্ধান্ত।”

সারদা রিয়েলটি মামলায় বুধবার সৃঞ্জয় জামিন পেয়েছেন সিবিআইয়ের কিছু ‘গাফিলতি’র জন্য। তখনই জল্পনা শুরু হয়, তা হলে কি রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হল শাসকদলের এই সাংসদরে জন্য? তার পর দিনই সৃঞ্জয়ের দল ছাড়ার এই সিদ্ধান্তে জল্পনা আরও তীব্র হল। তাঁর ছেড়ে আসা দলও এই দুই ঘটনার যোগসাজশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভাঙনের মুহূর্তে সৃঞ্জয়কে আক্রমণ না করে দলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত তাঁর ব্যক্তিগত। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ তাঁর আছে। তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, “আমরা কিছু দিন ধরেই বলে আসছিলাম কেন্দ্র তথা বিজেপির তরফ থেকে সৃঞ্জয়ের পরিবারের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। গত কাল জামিন পেয়েছেন তিনি. আর এ দিন দল ছাড়লেন। এই দুই ঘটনার কি কোনও সম্পর্ক আছে? তবে আমরা খুশি তিনি মুক্তি (চাপ থেকে) পেলেন।”

তবে সৃঞ্জয়ের দল ছাড়া নিয়ে স্পষ্টতই দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক মহল। কারও মতে তাঁর ‘জেল খাটার কথাই না’, তো কেউ স্বাগত জানিয়েছেন তাঁর এই সিদ্ধান্তকে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের মতে, “তৃণমূলের ফেরে পড়ে জেল খাটতে হল সৃঞ্জয়কে। দলে থেকে চরম হেনস্থা হতে হয়েছে তাঁকে। চোরেদের সঙ্গ ছেড়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আবার বলেছেন, “কেন সৃঞ্জয় রাজনীতিতে এলেন, কেনই বা গেলেন, তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন। তবে সৃঞ্জয় নিরপরাধ, এ কথা বিশ্বাস করি না।” তাঁর আরও দাবি, “তৃণমূলে এই দল ছাড়ার মিছিল দীর্ঘতর হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

srinjoy locket resignation tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE