দলের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যপদও যে তিনি ছাড়ছেন সে কথাও এ দিন জানান লকেট। তবে এই সিদ্ধান্ত যে একেবারেই ‘বিবেক’-এর তাড়নায় তা-ও স্পষ্ট করেছেন টালিগঞ্জের এই পরিচিত মুখ।
পুরনো দল নিয়ে নানা অভিযোগ করলেও, নতুন দলকে কিন্তু ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেন লকেট। জানালেন, বিজেপিতে কাজ করার ‘উপযুক্ত পরিবাশ’ রয়েছে। ‘দমবন্ধ’ অভিনেত্রী বিজেপিকে ‘মুক্ত আকাশ’-এর সঙ্গেও তুলনা করলেন।
অভিনেন্ত্রীর যোগ দেওয়া নিয়ে অবশ্য তৃণমূলকে এক হাত নিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাঁর দাবি, “তৃণমূলের উপর মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। নেতাদের কাজকর্মে কর্মীরা হতাশ। আরও অনেকেই তৃণমূল ছাড়তে পা বাড়িয়েই রেখেছেন।” বনগাঁ এবং কৃষ্ণগঞ্জের আসন্ন উপ নির্বাচনের প্রচারে সদ্য যোগ দেওয়া লকেটকে কাজে লাগানো হবে বলেও জানান তিনি।
লকেটের দল ছাড়ার প্রাথমিক ঝটকা কাটিয়ে ওঠার আগেই এল দ্বিতীয় ধাক্কা। সারদা কণ্ডে জামিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দল ছাড়লেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সৃঞ্জয় বসু। দলনেত্রীকে চিঠি দিয়ে দল ছাড়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...
চিঠিতে সৃঞ্জয় জানিয়েছেন, এই মুহূর্ত থেকে দলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করছি। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যসভার সাংসদ পদও ছেড়ে দিতে চাই। তবে সাংসদ পদ ছাড়তে হলে স্পিকারের কাছে সশরীরে হাজির হয়ে আবেদন করতে হয়। ফলে, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।
দল ছাড়ার চিঠিতে তাঁর আরও বক্তব্য, “মমতাদির কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তিনি আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন, সুযোগ দিয়েছিলেন। কিছু দিন ধরে জেলে থাকতে থাকতে আমার মনে হয়েছে, রাজনীতি আমার জন্য নয়। বিশেষত আমার মা এবং স্ত্রী বারবার এই কথা বলছিলেন। তাই এই সিদ্ধান্ত।”
সারদা রিয়েলটি মামলায় বুধবার সৃঞ্জয় জামিন পেয়েছেন সিবিআইয়ের কিছু ‘গাফিলতি’র জন্য। তখনই জল্পনা শুরু হয়, তা হলে কি রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হল শাসকদলের এই সাংসদরে জন্য? তার পর দিনই সৃঞ্জয়ের দল ছাড়ার এই সিদ্ধান্তে জল্পনা আরও তীব্র হল। তাঁর ছেড়ে আসা দলও এই দুই ঘটনার যোগসাজশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভাঙনের মুহূর্তে সৃঞ্জয়কে আক্রমণ না করে দলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত তাঁর ব্যক্তিগত। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ তাঁর আছে। তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, “আমরা কিছু দিন ধরেই বলে আসছিলাম কেন্দ্র তথা বিজেপির তরফ থেকে সৃঞ্জয়ের পরিবারের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। গত কাল জামিন পেয়েছেন তিনি. আর এ দিন দল ছাড়লেন। এই দুই ঘটনার কি কোনও সম্পর্ক আছে? তবে আমরা খুশি তিনি মুক্তি (চাপ থেকে) পেলেন।”
তবে সৃঞ্জয়ের দল ছাড়া নিয়ে স্পষ্টতই দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক মহল। কারও মতে তাঁর ‘জেল খাটার কথাই না’, তো কেউ স্বাগত জানিয়েছেন তাঁর এই সিদ্ধান্তকে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের মতে, “তৃণমূলের ফেরে পড়ে জেল খাটতে হল সৃঞ্জয়কে। দলে থেকে চরম হেনস্থা হতে হয়েছে তাঁকে। চোরেদের সঙ্গ ছেড়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আবার বলেছেন, “কেন সৃঞ্জয় রাজনীতিতে এলেন, কেনই বা গেলেন, তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন। তবে সৃঞ্জয় নিরপরাধ, এ কথা বিশ্বাস করি না।” তাঁর আরও দাবি, “তৃণমূলে এই দল ছাড়ার মিছিল দীর্ঘতর হবে।”