আহত দেবব্রত কুলাই। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যস্ত রাস্তায় অনেকটা ফিল্মি কায়দায় কয়েক লক্ষ টাকা লুঠ করল একদল দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থল হাও়ড়ার আন্দুল রোডের পোদরা হালদারপাড়া। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রতি দিনের মতোই মঙ্গলবার আন্দুল রোডের নিমতলা এলাকার একটি বহুজাতিক সংস্থার দুই কর্মী ১১ লক্ষ টাকা নিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। চালকের আসনে বসেছিলেন মহম্মদ ইসরাফিল এবং পিছনের আসনে বসেছিলেন সংস্থার কোষাধ্যক্ষ দেবব্রত কুলাই। তাঁরা সংস্থার কার্যালয় থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীনারায়ণ তলায় যাচ্ছিলেন।
ঘড়িতে তখন সকাল সওয়া ন’টা। রাস্তায় যানজট থাকার কারণে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন ইসরাফিল। হালদারপাড়ার কাছে আচমকাই তিন জন বাইকআরোহী গাড়িটিকে ঘিরে ধরে। তাদের প্রত্যেকের মুখ ঢাকা ছিল। দুষ্কৃতীদের মধ্যে এক জন চালককে গাড়ির কাচ নামাতে বলে। ইতস্তত করায় দুষ্কৃতীদের মধ্যে এক জন তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তত ক্ষণে চালক বুঝে গিয়েছেন কী ঘটতে চলেছে। প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় ফের গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। গুলিটি চালকের শরীরের পিছনে লাগে। এরই মধ্যে অন্য আর এক জন পিছনের আসনে বসে থাকা দেবব্রতবাবুর দিকে এগিয়ে যায়। রিভলভারের বাঁট দিয়ে গাড়ির কাচ ভেঙে দেবব্রতবাবুর পাশে রাখা ব্যাগগুলি দিতে বলে সে। কিন্তু, তিনি তা দিতে অস্বীকার করায় ওই ব্যাগগুলি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। ব্যাগ নিয়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের কাছে হার মানেন তিনি। এরই মধ্যে এক জন দেবব্রতবাবুকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সেই গুলি দেবব্রতবাবুর বাঁ হাতে লাগে। ঘটনার সময় রাস্তায় প্রচুর মানুষ ছিলেন। দুষ্কৃতীরা তাদের মিশন শেষ করেই সেখান থেকে চম্পট দেয় দ্বিতীয় হুগলি সেতুর দিকে। দুষ্কৃতীরা চলে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা দেবব্রতবাবু ও গাড়ির চালককে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন।
প্রকাশ্য দিবালোকে এমন দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা দেখেও পথযাত্রীরা এগিয়ে এলেন না কেন? প্রত্যক্ষদর্শীদের এক জন জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের হাতে বন্দুক থাকায় কেউ এগোতে সাহস পাননি। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। দিনের ব্যস্ত সময়ে এত বড় ঘটনা ঘটল অথচ পুলিশ কিছু টেরই পেল না! স্থানীয় বাসিন্দারাও নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ইন্দ্র চক্রবর্তী। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি নস্যাত্ করেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা স্থানীয় না বাইরের তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।” তবে পুলিশের অনুমান, কলকাতার দিক থেকে দুষ্কৃতীরা এসেছিল। তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল এ বিষয়ে। তা না হলে এ ভাবে অপারেশন চালানো সম্ভব হত না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy