Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তাপস-কাণ্ডে এফআইআরের নির্দেশ হাইকোর্টের, সঙ্গে সিআইডি তদন্ত

বুধবার সিবিআই-এর পর বৃহস্পতিবার সিআইডি— হাইকোর্টে একের পর এক ধাক্কায় বেসামাল রাজ্য সরকার। বৃস্পতিবার তাপস পাল কাণ্ডে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দায়ের হওয়া অভিযোগপত্রটিকে এফআইআর হিসাবে গণ্য করে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। বুধবারই পাড়ুই-কাণ্ডের তদন্তভার সিটের হাত থেকে সিবিআই-য়ের হাতে দিয়েছিলেন বিচারপতি হরীশ টন্ডন। এই রায়ের ফলে নিশ্চিত ভাবেই রাজ্য সরকারের অস্বস্তী কয়েক গুণ বেড়ে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১১:৫৭
Share: Save:

বুধবার সিবিআই-এর পর বৃহস্পতিবার সিআইডি— হাইকোর্টে একের পর এক ধাক্কায় বেসামাল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার তাপস পাল কাণ্ডে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দায়ের হওয়া অভিযোগপত্রটিকে এফআইআর হিসাবে গণ্য করে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। বুধবারই পাড়ুই-কাণ্ডের তদন্তভার সিটের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে দিয়েছিলেন বিচারপতি হরিশ টন্ডন। এই রায়ের ফলে নিশ্চিত ভাবেই রাজ্য সরকারের অস্বস্তি কয়েক গুণ বেড়ে গেল।

লোকসভা ভোটের আগে, ১৪ জুন নদিয়ার পাঁচ জায়গায় উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধে। জনসমক্ষে সাংসদের ওই ধরনের বক্তৃতার পরেও পুলিশ কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না, তা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হয়। এফআইআর দায়ের করে ওই ঘটনার তদন্ত করার জন্য সিআইডি-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। রাজ্য সরকার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিচারপতি গিরিশচন্দ্র গুপ্ত এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে। সেই বেঞ্চের দুই বিচারপতির মতভেদের জেরে সেখানে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। সেটি যায় বিচারপতি মাত্রের আদালতে। সেখানে ফের গোড়া থেকে শুনানি হয় ১০ সেপ্টেম্বর। মামলা চলাকালীন বারবার এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। শুনানির সময়ে বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন অভিযুক্ত শাসক দলের সাংসদ হওয়ায় সরকার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছে। এর পরই সিআইডি তদন্তে রাজি হয় সরকার। কিন্তু নিচুতলার কোনও অফিসার তদন্ত করলে তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে, এই অভিযোগে ডিআইজি-সিআইডির নেতৃত্বে তদন্তের আবেদন করেন অভিযোগকারীর আইনজীবী। এ দিন সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ডিআইজিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মাত্রে। মামলা চলাকালীন রাজ্য সরকারের তরফে হাইকোর্টে জানানো হয় তাপসবাবুর বক্তৃতার পর হিংসাত্মক কোনও ঘটনা ঘটেনি। তখনই বিচারপতি জানতে চান সরকার হিংসাত্মক ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছেন কি না। এ দিন বিচারপতি মাত্রে রায় ঘোষণা করে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের নির্দেশের প্রায় সিংহভাগই বজায় রাখলেন। বাদ পড়ল শুধুমাত্র হাইকোর্টের নজরদারি প্রসঙ্গ।

হাইকোর্টের এই রায়ে স্বভাবতই খুশি বিরোধীরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বলেন, “হাইকোর্ট ক্রমাগত রাজ্য সরকারের উপর আইনি প্রহার করে চলেছে। এ দিনের এই রায়ে প্রমাণ হল রাজ্যে আইনের শাসন না থাকলেও বিচার ব্যবস্থা অটুট আছে।” তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আদালতের নির্দেশ নিয়ে আমরা দল হিসাবে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।” তবে পার্থবাবু কোনও মন্তব্য না করলেও রাজ্যের এক মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা তাপসের আচারণ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, “উনি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিলে দল বা সরকারকে বিব্রত হতে হত না।”

এ দিনই পাড়ুই কাণ্ডে সিঙ্গল বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গেল রাজ্য।


যে পথে তাপস-মামলা

১৪ জুন ২০১৪: নদিয়ায় পাঁচটি সভায় উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগ কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধে

১৮ জুলাই: পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা দায়ের এক আইনজীবীর।

২১ জুলাই: বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে শুনানি শুরু।

২৮ জুলাই: তাপসের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে নাকাশিপাড়ার থানাকে কোর্টের নির্দেশ।

৩০ জুলাই: রাজ্য সরকার ও সাংসদের তরফে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন।

বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শুরু।

বিচারপতি দত্তের নির্দেশের উপরে ৩ অগস্ট পর্যন্ত স্থগিতাদেশ।

১ অগস্ট: ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি সমাপ্ত।

১৪ অগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হল স্থগিতাদেশের মেয়াদ।

১৩ অগস্ট: ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির মতভেদে রায়দান স্থগিত। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের নির্দেশে সহমত বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর, বিপক্ষ মত বিচারপতি গুপ্তর।

৩ সেপ্টেম্বর: চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য মামলা এল তৃতীয় বিচারপতি নিশীথা মাত্রের এজলাসে।

১০ সেপ্টেম্বর: বিচারপতি মাত্রের এজলাসে শুনানি শুরু।

২৫ সেপ্টেম্বর: ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর করে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ।

তৃণমূল সাংসদ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চেয়েছেন। তা তিনি করতে পারেন না। আইনের শাসন কড়া হাতে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সাংসদ নিজের দলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। জনগণের কাছে চাননি।
২৮ জুলাই, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত

মনে হচ্ছে, রাজ্যের ভূমিকা হল আড়াল করার। শাসকদলের সাংসদ বলেই কি রাজ্য ব্যাপারটা চাপা দিতে চাইছে? এখানে এখন সাধারণ লোকে ইন্টারনেটে কিছু আপলোড করলে পুলিশ ধরছে। আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে!
১০ সেপ্টেম্বর, বিচারপতি নিশীথা মাত্রে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE