ভূমিকম্পের জেরে বন্ধ মেট্রো। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
দমদম থেকে মেট্রোটি ছেড়েছিল বেলা ১১টা ৩৪-এ। কবি সুভাষগামী সেই মেট্রোটি সেন্ট্রাল স্টেশনে পৌঁছল ১১টা ৪৯-এ। দরজা খোলার পর যাত্রীদের ওঠানামা শেষেও বন্ধ করা হচ্ছিল না দরজা। মুখ বাড়িয়ে দেখা যায় সিগন্যাল লাল। পাশের প্ল্যাটফর্মে তখন দাঁড়িয়ে দমদমগামী অন্য একটি এসি মেট্রো। মিনিট কয়েক কাটলেও কোনও ঘোষণা নেই।
যাত্রীদের মধ্যে তত ক্ষণে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, নিশ্চয়ই আত্মহত্যা করেছে কেউ। এ পাশের মেট্রোর চালক ও পাশের সহকর্মীর সঙ্গে প্ল্যাটফর্মে নেমে কোনও গভীর পরামর্শে ব্যস্ত। প্রথম কামরার পাশ দিয়ে যাওয়া এক আরপিএফ কর্মীকে জিগ্যেস করা হল, দাদা কী হয়েছে? গম্ভীর মুখের উত্তর এল, ‘‘ভূকম্প্ হুয়া হ্যায়।’’ কোথায়? ‘‘কলকাত্তা মে।’’ মেট্রো যাবে না? রাশভারীর নিরাপত্তা কর্মীটি প্রশ্ন এড়িয়ে চলে গেলেন।
অনেকেই তত ক্ষণে চালকের কাছে ভিড় জমিয়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে খবর এসেছে, ভূমিকম্পের কারণে আপাতত মেট্রো বন্ধ থাকবে।’’ আর ঠিক তখনই মেট্রোর তরফে প্ল্যাটফর্মে ঘোষণা করা হল, ‘অনুগ্রহ করে শুনবেন, কলকাতায় ভূমিকম্পের কারণে আপাতত মেট্রো পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। যাত্রীদের অনুরোধ করা হচ্ছে, আপনারা কামরা খালি করে নেমে যান।’’
নিমেষে সেই বার্তা রটে গেল! ঘোষণা শুনেই হুড়োহুড়ি পড়ল! পড়িমড়ি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকলেন মানুষজন। হুমড়ি খেয়ে পড়তেও দেখা গেল কয়েক জনকে। স্মার্ট গেটে তখন লম্বা লাইন। মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, তাড়াহুড়ো করবেন না। মেট্রো পরিষেবা কিছু সময় পরে চালু হবে। আপাতত কামরা খালি করে দিন। স্মার্ট গেটের দায়িত্বে থাকা মেট্রো এবং পুলিশকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন ভিড় সামলাতে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন তাঁদের, দাদা কী হয়েছে বাইরে? জোর কেঁপেছে? ভেঙে পড়ল নাকি বাড়িঘর? কিন্তু, তাঁরাও তো ভিতরে। জানবেন কী করে, বাইরে কী হয়েছে! সে কথাই বিনীত ভাবে জানালেন সবাইকে। জানালেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। অথচ, ঘোষণায় তখনও বলা হচ্ছে, ‘ভূমিকম্পের কারণে আপাতত মেট্রো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আপনারা কামরা খালি করে দিন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফের চালু করা হবে পরিষেবা।’
পিল পিল করে দু’টি মেট্রোর ভিড় সব ক’টি গেট দিয়ে তত ক্ষণে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। শিশুদের হাত ধরে কয়েক জন উদ্বিগ্ন বাবা-মা-ও রয়েছেন সেই ভিড়ে। এক জন অনুরোধ করলেন, ‘‘দাদা, আমাদের একটু এগিয়ে যেতে দেবেন!’’ বাবার কোলে থাকা ছোট্ট মেয়েটির মুখে তত ক্ষণে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। একটু পাশ দিতেই চলমান সিঁড়ির বেশ কয়েকটি ধাপ এগিয়ে গিয়েও ভিড়ে আটকে গেলেন ভদ্রলোক। কোলের বাচ্চাটি তত ক্ষণে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।
প্রায় এক ঘণ্টা পরে, বেলা ১২টা ৫০ মিনিট নাগাদ ফের শুরু হল মেট্রো।
কিন্তু, আতঙ্ক কি তাতে কাটে? ভিড়ের মুখ পাল্টে গিয়েছে বটে, কিন্তু প্রশ্নের অভিমুখ? ‘দাদা, পাতালের সব ঠিক আছে তো? ভেঙে-টেঙে পড়েনি তো? নামাটা কি ঠিক হবে?’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy