Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফের থানায় তাণ্ডব, হাওড়ায় আক্রান্ত পুলিশ

মালদহের পর হাওড়ার সাঁতরাগাছি। ফের আইনরক্ষকদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল। সোমবার দুপুরে মালদহ স্টেশনে হকারদের ছোড়া ইটে মাথায় আঘাত লেগে ব্যারাকের ভেতরেই এক আরপিএফ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়। আর ওই দিন গভীর রাতে সাঁতরাগাছি থানায় হামলা চালানোয় আহত হয়েছেন তিন পুলিশকর্মী। থানার চেয়ার-টেবিলের পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয় একটি গাড়িতেও। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনাতেও তৃণমূলের দিকে অভিযোগের তির। ধৃতদের মঙ্গলবার হাওড়া আদালতে তোলা হয়।

সাঁতরাগাছি থানা। মঙ্গলবার সকালে দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

সাঁতরাগাছি থানা। মঙ্গলবার সকালে দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ১৩:০৩
Share: Save:

মালদহের পর হাওড়ার সাঁতরাগাছি। ফের আইনরক্ষকদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল। সোমবার দুপুরে মালদহ স্টেশনে হকারদের ছোড়া ইটে মাথায় আঘাত লেগে ব্যারাকের ভেতরেই এক আরপিএফ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়। আর ওই দিন গভীর রাতে সাঁতরাগাছি থানায় হামলা চালানোয় আহত হয়েছেন তিন পুলিশকর্মী। থানার চেয়ার-টেবিলের পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয় একটি গাড়িতেও। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনাতেও তৃণমূলের দিকে অভিযোগের তির। ধৃতদের মঙ্গলবার হাওড়া আদালতে তোলা হয়।

এর আগে থানার ভেতরে ঢুকে পুলিশকে মারধর করার পাশাপাশি থানা ভাঙচুরের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে। বোলপুর-আলিপুর-নোয়াপাড়া-ইসলামপুর-পাত্রসায়র-চাঁপদানি— একের পর এক থানা এবং ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয়। আক্রান্ত হয়ে পুলিশকর্মীদের অসহায় অবস্থার ছবি বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত একটি পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে। সাঁতরাগাছি থানার পেছন দিকে রয়েছে স্বদেশপল্লি। বছরখানেক আগে সেখানকার বাসিন্দা শম্পার সঙ্গে বিয়ে হয় রেলইয়ার্ড ঘেঁষা সাহেবপাড়ার বাসিন্দা বিজয় ডোঙা-র। মাসখানেক আগে তাঁদের একটি ছেলে হয়। সন্তানসম্ভবা অবস্থায় শম্পাদেবীকে তাঁর বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাচ্চা হওয়ার পর মাসখানেক কেটে গেলেও তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও উদ্যোগ দেখানো হয়নি বলে অভিযোগ। ওই দিন দুপুরে মা এবং দাদাকে সঙ্গে নিয়ে বিজয়বাবুদের বাড়িতে যান শম্পাদেবী। কিন্তু, তাঁদের অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেন বিজয় এবং তাঁর মা শোভাদেবী। এর পরে সাঁতরাগাছি থানায় অভিযোগ জানান ওই গৃহবধূ।

অভিযোগ পেয়ে চার জন পুলিশকর্মী শম্পাদেবীকে নিয়ে ফের বিজয়বাবুদের বাড়িতে যান। কিন্তু, তাঁদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গে বচসার মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েন শোভাদেবী। পুলিশই তাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। এর পর শম্পাদেবীকে তাঁর বাপের বাড়িতে পৌঁছে দেয় পুলিশ।

কিন্তু, শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন?

শম্পাদেবীর অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরেই পণ আদায়ের জন্য তাঁর উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। তাঁর কথায়: ‘‘আমাকে দিনের পর দিন অপমান করা হয়। অত্যাচার করা হয়। ওরা আর আমাকে নিতে রাজি নয়। আমি সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর থেকেই অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে।’’ বিজয়বাবুর প্রতিবেশীরাও এই অভিযোগ মেনে নিয়েছেন। ইদানীং তিনি নাকি অন্যত্র বিয়ে করার কথাও বলছিলেন বলে তাঁদের দাবি।

এর পর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ শ’দুয়েক লোকজন শম্পাদেবীদের বাড়িতে চড়াও হয়। ওই দলে এলাকার বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী তৃণমূল সমর্থক ছিলেন বলে অভিযোগ। ওই বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। শম্পাদেবীকে হেনস্থা করার সময় আক্রমণকারীদের বাধা দেন তাঁর দাদার স্ত্রী। ওই সময় তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। তিনি শেষে শম্পাদেবীর এক মাসের বাচ্চাকে নিয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তত ক্ষণে রাত একটা বেজে গিয়েছে। এর পর উত্তেজিত আক্রমণকারীরা পাশের থানায় চড়াও হয়।

থানায় ঢুকেই তারা চেয়ার-টেবিল উল্টে দিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। শুরু হয় ইটবৃষ্টি। নষ্ট করে দেওয়া হয় দরকারি নথি। এমনকী, থানা চত্বরে রাখা পুলিশের একটি গাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাফও মোতায়েন করা হয়। হাওড়া সিটি পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, ‘‘থানায় ঢুকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা ডিউটি অফিসারকে চড়-ঘুঁষি মারে। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ট করে, চেয়ার-টেবল উল্টে দেয়। পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। হামলা চালানোর অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে ওই মহিলার স্বামী বিজয় ডোঙাও রয়েছেন।’’ তিনি জানান, ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা এখনও পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন শম্পাদেবী। তাঁদের বাড়িতে হামলা চালানোয় তৃণমূলের স্থানীয় কয়েক জন কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেন। তবে, দক্ষিণ হাওড়ার জেলা সভাপতি বাপি মজুমদার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘খুবই নিন্দনীয় ঘটনা। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, তাদের মারধর করার পাশাপাশি থানায় ভাঙচুর করা হয়েছে। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও কর্মী জড়িত নয়। যারা জড়িত তারা এলাকায় দুষ্কৃতী হিসেবে পরিচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE