জলবন্দি শহর: শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার শরৎ বসু রোডে মঙ্গলবার কিশোর সাহার তোলা ছবি।
রাতভর টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ল জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি শহর-সহ ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা। বেশ কিছু জায়গায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। ভুটান পাহাড়েও প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে উত্তরবঙ্গের নদীগুলি কার্যত ফুঁসছে। রেললাইন এবং জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে জল বয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ট্রেন এবং যান চলাচল। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির পুর এলাকা। জল বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কায় তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় জারি হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা।
নির্ধারিত সময়ের পাঁচ দিন পরে এ বার উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢুকেছিল। জুন মাসে উত্তরবঙ্গের বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ গড়ে প্রায় হাজার মিলিমিটার ছাড়িয়ে যায়। এমনিতেই জলে ভরা ছিল উত্তরবঙ্গের নদীনালা। সেই টইটম্বুর অবস্থায় সোমবার রাত থেকে ফের প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বাদ যায়নি শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি পুর এলাকাও। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডই কার্যত জলবন্দি হয়ে পড়ে। শিলিগুড়ির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বাড়ির দেওয়াল ধসে আহত হন এক জন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ জলবন্দি হয়ে পড়া পুর-বাসিন্দারা শিলিগুড়ির কাওয়াখালি এবং ঝঙ্কার মোড়ে অবরোধ করেন। পরে পুলিশ এসে লাঠি উঁচিয়ে রাস্তা অবরোধমুক্ত করে। এরই পাশাপাশি, জলপাইগুড়ি পুর এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানকার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির।
কালচিনি এবং হাসিমারার কাছে হ্যামিল্টনে রেললাইনের উপর জল উঠে যায়। এর ফলে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে ট্রেন। প্রায় দু’ঘণ্টা পর ফের শুরু হয় রেল পরিষেবা। যদিও এ দিন দুপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি ট্রেন চলাচল। অন্য দিকে, ফালাকাটা-বীরপাড়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে জটেশ্বরের কাছে রাস্তার উপর বইতে থাকে নদীর জল। এর ফলে ওই জায়গায় জাতীয় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। কালচিনির ডাঙাপাড়া এলাকায় জলের তোড়ে নর্দমায় পড়ে গিয়ে আটকে যায় একটি পূর্ণবয়স্ক বুনো হাতি। তাকে উদ্ধার করেন বন দফতরের কর্মীরা।
শিলিগুড়ি শহরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টির কারণে এলাকার নদীগুলিতে জল প্রবল ভাবে বাড়ছে। ফুঁসছে মুজনাই, বীরকিটি, তাতাসি, ডুডুয়া, কলি, কুমলাই, ডিমার মতো পাহাড়ি নদীগুলি। নদীর জল উপচে ঢুকে পড়েছে গ্রামীণ এলাকায়। ভাসিয়ে দিয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন। সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পাহাড় এবং সমতলে প্রবল বৃষ্টির কারণে এই অবস্থা। শুধু পরিমাণে বেশি নয়, নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জল এতটাই বেড়েছে যে, দোমোহনি থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে জলঢাকার অসংরক্ষিত অংশেও।
সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, গত রাত থেকে ময়নাগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে ১৯০ মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে ১১০, আলিপুরদুয়ারে ১৯৩ এবং শিলিগুড়িতে ১৭৪ মিলিমিটার। তবে সেচ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে হাসিমারায়। সেখানে ২৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়েও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে, প্রায় ১৬০ মিলিমিটার। তবে সেখানে বড় কোনও ধসের খবর পাওয়া যায়নি। জলের তোড়ে ছোটখাট বেশ কয়েকটি ধস নামলেও রাস্তা আটকে পড়েনি কোথাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy