Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দরজা ভেঙেই গুলিবৃষ্টি, বড়োভূমিতে জঙ্গিহানায় হত ১১

বালাপাড়ায় চলছে যৌথবাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্স।

বালাপাড়ায় চলছে যৌথবাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি ও ধুবুরি শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৪ ১০:৩৬
Share: Save:

হাতে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, মুখে কালো কাপড়। রাতের অন্ধকারে ২০-২৫ জন জঙ্গি ঢুকল জঙ্গল-পাহাড়ে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে। এক একটি বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাল। তার পর চড়াও হল পাশের বাড়িতে।

২০০৯ সালের ভীমাজুলি হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি উস্কে দিয়ে ফের নিরীহ গ্রামবাসীদের হত্যা করল বড়ো জঙ্গি সংগঠন এনডিএফবি। সে বার রঞ্জন দৈমারির নেতৃত্বে এনডিএফবি জঙ্গিরা হানা দিয়েছিল। প্রাণ হারিয়েছিলেন ১২ জন গ্রামবাসী। এ বারও গুলির নিশানায় অ-বড়োরাই। দু’টি জায়গায় হানা দিয়ে ১১ জনকে খুন করল জঙ্গিরা। জখম কয়েক জন।

রঞ্জন দৈমারি শান্তি আলোচনার রাস্তায় এগিয়েছেন। কিন্তু সংবিজিতের নেতৃত্বে এনডিএফবি-র একটি বড় অংশ এখনও নাশকতার পথে রয়েছে। পুলিশের দাবি, তারাই গত রাতে হামলা চালায়। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এবং বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা মহিলারি ঘটনার নিন্দা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ঘটনায় এনডিএফবি সংগঠন জড়িত। তিনি মানুষকে আতঙ্কিত না-হওয়ার অনুরোধ করেন। রাজ্য সরকারের তরফে নিহতদের নিকটাত্মীয়কে ৩ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

প্রথম ঘটনাটি ঘটে বাক্সা জেলার আনন্দবাজারে। পুলিশ জানায়, কালাপানি নদীর তীরে নরসিংহবাড়ি গ্রামে রাত ৮টা নাগাদ হানা দেয় ৪ জঙ্গি। একে ৪৭ রাইফেল ছিল তাদের কাছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জঙ্গিরা সাইকেলে এসেছিল। প্রথমে সোনা মিঞাঁর ঘরে ঢুকে গুলি চালাতে থাকে। তাঁরা তখন নৈশাহার করছিলেন। গুলিতে মৃত্যু হয় সোনা মিঞাঁ, তাঁর স্ত্রী রুমিসা খাতুন ও আত্মীয় চম্পা বেওয়ার। সোনার দুই মেয়ে রসিদা (১২) ও তসলিমা খাতুন (৩) গুলিবিদ্ধ হলেও বেঁচে গিয়েছে। তাদের মৃত ভেবে জঙ্গিরা চলে যায়। পরে পুলিশ দু’জনকে বরপেটা হাসপাতালে ভর্তি করে। তসলিমার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

প্রথম ঘটনার পরই বড়োভূমিতে সতর্কতা বাড়ানো হয়। কিন্তু রাত সওয়া ১১টা নাগাদ ফের আঘাত হানে জঙ্গিরা। কোকরাঝাড়ের পর্বতঝোরা জঙ্গলের লাগোয়া বালাপাড়ায় চড়াও হয় জনা পঁচিশ জঙ্গি। প্রত্যক্ষদর্শী মহম্মদ শেখ আলি জানান, জঙ্গিরা তাঁর বাড়ির দরজা ভেঙে ঢোকে। বিপদ বুঝে খাটের তলায় লুকিয়ে পড়েন আলি। কিন্তু তাঁর মা, স্ত্রী, মেয়েকে বাঁচানোর সুযোগ পাননি। তিনি বলেন, “অন্ধকারে পর পর গুলির শব্দ শুনতে পাই। প্রথমে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর চিত্‌কার শুনি। তার পর আমার মা, মেয়ের। কিছুই করতে পারিনি। জঙ্গিরা বেরিয়ে গেলে, ছেলেকে নিয়ে পালাই।” ওই গ্রামে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ৫ জন মহিলা, দু’টি শিশু।

অন্য দিকে, গত কালই অফিস থেকে ফেরার সময় জঙ্গিদের সামনে পড়ে যান সাংবাদিক ধনঞ্জয় নাথ। জঙ্গিরা তাঁকেও গুলি করে। জখম অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তামুলপুরেও দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হন এক জন। কোকরাঝাড়ের এসপি সুনীল কুমার জানান, হত্যাকারীদের সন্ধানে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। সম্ভবত, এনডিএফবি জঙ্গিরা ঘটনায় জড়িত। বড়োভূমিতে যাতে ফের গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু না-হয়, সে জন্য উচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। বড়োভূমির আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রের কাছে অতিরিক্ত ১০ কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assam kokrajhar ndfb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE