Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সাজানো সংসার

আসছে জোট সরকার, এক সুর বুদ্ধ-রাহুলের

যেন আগে থেকে মহড়া দেওয়া ছিল! প্রথম বারের জন্য এক মঞ্চে এসে নিখুঁত ভাবে সুর মিলে গেল রাহুল গাঁধী আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। রাজ্যে শেষ দুই পর্বের ভোটের আগে যৌথ প্রচারের মঞ্চ থেকে দু’জনেই জোট সরকারের আগমন-বার্তা ঘোষণা করে দিলেন!

জোটের সঙ্গী। বুধবার পার্ক সার্কাসে ভোটপ্রচারে রাহুল গাঁধী ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

জোটের সঙ্গী। বুধবার পার্ক সার্কাসে ভোটপ্রচারে রাহুল গাঁধী ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০০
Share: Save:

যেন আগে থেকে মহড়া দেওয়া ছিল! প্রথম বারের জন্য এক মঞ্চে এসে নিখুঁত ভাবে সুর মিলে গেল রাহুল গাঁধী আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। রাজ্যে শেষ দুই পর্বের ভোটের আগে যৌথ প্রচারের মঞ্চ থেকে দু’জনেই জোট সরকারের আগমন-বার্তা ঘোষণা করে দিলেন!

তৃণমূলকে রুখতে এ বার আসন সমঝোতা করে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে লড়ছে বাম ও কংগ্রেস। যাকে নেতারা বলছেন ‘মানুষের জোট’। নিচু তলার আগ্রহের জেরেই এই গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ জোটের বাস্তবায়ন বেশ মসৃণ। ভোট যত এগোচ্ছে, তৃণমূলকে রুখে দেওয়ার আত্মবিশ্বাসও তত বাড়ছে জোট শিবিরে। নিচু তলার সেই মনোবলকেই আরও চাঙ্গা করতে কলকাতায় শেষ পর্বের ভোটের আগে কংগ্রেস সহ-সভাপতির মঞ্চে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম। সেই মঞ্চকে ব্যবহার করেই বুধবার রাহুল ও বুদ্ধবাবু তাঁদের দলের কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দিলেন, জোট সরকারই আসছে রাজ্যে। তার আগে শেষ পর্বের ভোটে মরণপণ লড়াই শুধু ধরে রাখতে হবে।

পার্ক সার্কাস ময়দানে এ দিনের সভা যে বিরল এবং ঐতিহাসিক, নিজেই উল্লেখ করেছেন বুদ্ধবাবু। কেন তিনি রাহুলের মঞ্চে এলেন, দিয়েছেন তার ব্যাখ্যাও। বুদ্ধবাবুর কথায়, ‘‘সারা রাজ্যে বিপদের কালো মেঘ। দুর্বৃত্তদের সরকার চলছে। রাজ্যকে দুঃশাসন থেকে মুক্ত করতেই হবে। তাই আমরা এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’’ ওই মঞ্চ থেকে একই কথা বলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও।

সব মানুষের মাথা তুলে কথা বলার মতো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তাঁদের যে সমবেত হওয়া, সেই জোটই শেষ পর্যন্ত রাজ্যে বিকল্প সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে তাঁদের এগিয়ে দিচ্ছে বলে আশাবাদী বুদ্ধবাবু ও রাহুল, দু’জনেই। প্রত্যয়ী কণ্ঠে বুদ্ধবাবুর মন্তব্য, ‘‘চার দিক থেকে যা খবর পাচ্ছি, জোটের সরকারই আসছে! আমার মনের জোর আছে। আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে এ কথা বলতে পারছি। আমরা পারব আবার সরকার গড়তে। জানি, কী ভাবে সরকার চালাতে হয়!’’

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথার রেশ ধরেই এর পরে রাহুল বলেছেন, ‘‘রাজ্যে জোট সরকার আসছে। ভুল মশলা দিয়ে তৈরি উড়ালপুল এই কলকাতায় দড়াম করে ভেঙে পড়েছে! ওটাই মমতার সরকারের প্রতীক!’’ উড়ালপুলের মতোই তৃণমূলের সরকার ভেঙে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী করে রাহুলের আরও মন্তব্য, ‘‘মমতাজিকে বলছি, উড়ালপুল ভেঙে পড়া, চিটফান্ড কেলেঙ্কারি— এ সবের অনেক তদন্ত আপনি করেছেন! এ বার তদন্ত কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের জোট সরকারই করবে।’’ কংগ্রেস সহ-সভাপতির আশ্বাস, নতুন সরকার এসে রাজ্যে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের উপরে বেশি জোর দেবে। একই কথা শোনা গিয়েছে বুদ্ধবাবুর মুখেও। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-কে হঠানোর ডাক দিয়েছেন। তেমন রাহুলও এনডিএ জমানায় ‘বিজেপি আমাদের স্বাভাবিক মিত্র’ সংক্রান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো মন্তব্য উল্লেখ করে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘মোদীজি (নরেন্দ্র) ও মমতাজি একে অপরকে আক্রমণ করছেন। এ সব সাজানো রাগ! সাজানো ঝগড়া!’’


নবীন বন্ধু, প্রবীণ বন্ধু। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে স্বাগত জানাচ্ছেন অধীর চৌধুরী।
রয়েছেন রাহুল গাঁধী ও দীপা দাশমুন্সি। বুধবার দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।

মমতা আবার এ দিনই শ্রীরামপুরের সভায় পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, ‘‘জোট হয়েছে না লবডঙ্কা হয়েছে! ঘোঁট হয়েছে। কাজ-কর্ম নেই, ভোটের সময় এলে বসন্তের কোকিলের মতো দিল্লি থেকে উড়ে চলে আসে!’’

আগামী দুই পর্বে মোট ৭৮টি আসনে ভোট বাকি। শেষ পর্বে জোটের কর্মীরা যাতে মাটি কামড়ে লড়াই করেন, তার জন্য তাঁদের চাঙ্গা করতে চেয়েছেন রাহুল-বুদ্ধবাবু, দু’জনেই। রাহুলের বার্তা, ‘‘সাড়ে তিন বছরের বাচ্চার গায়ে যারা হাত তোলে, তারা ভয়ঙ্কর। আপনাদের ভয়ের কারণ আমি বুঝি। আপনাদের বলছি, আর কয়েকটা দিন লড়াই করুন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ভোটের দিন বুথে থাকুন। রাস্তায় থাকুন। পিছু হঠবেন না। মনে রাখুন, জোট সরকার আসছে!’’ জোট-প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি, কৃষ্ণা দেবনাথ, রাকেশ সিংহ, শতরূপ ঘোষ, মধুজা সেন রায়, কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়, মনিরুল ইসলামদের পাশাপাশি দুই শিবিরের বহু নেতাই উপস্থিত ছিলেন ‘ঐতিহাসিক’ সমাবেশে!

তবে তৃণমূলকে হারানোর লক্ষ্যে বুদ্ধবাবুরা সর্বস্ব বাজি ধরলেও সিপিএমের অন্দরে বিতর্কের রেশ এখনও রয়েই যাচ্ছে! বুদ্ধবাবু রাহুলের মঞ্চে যাওয়ায় প্রত্যাশিত ভাবেই প্রকাশ কারাট, এস আর পিল্লাই-সহ সিপিএমের কেরল শিবির ক্ষুব্ধ। তাঁদের যুক্তি, বাংলার নেতারা কংগ্রেসের হাত ধরায় কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে লড়তে নাকি সমস্যা হচ্ছে! প্রশ্নের মুখে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এ দিন বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই এখন বাস্তব প্রয়োজন। মানুষ যা চাইছে, উপর তলায় তারই প্রতিফলন ঘটছে। তা ছাড়া, বুদ্ধদেব এখন পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE