Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Rabindranath Bhattacharya

Bengal Polls: নন্দীগ্রামের জ্যোতি নেই, কিন্তু গুরু-শিষ্যের দ্বন্দ্বে সিঙ্গুরের প্রান্তরে অন্য এক ‘জমি রক্ষা’র লড়াই

কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলনের ইতিহাসে নন্দীগ্রামের পূর্বসূরি সিঙ্গুরে প্রচারের আলো তুলনায় অনেকটাই কম। কিন্তু লড়াইয়ের তীব্রতায় ঘাটতি নেই এতটুকুও।

বেচারাম মান্না ও রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

বেচারাম মান্না ও রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদাদাতা
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৫৭
Share: Save:

রাজ্যের বিধানসভা ভোটে গোটা দেশের নজর কেড়ে নিয়েছে নন্দীগ্রাম। কারণ, প্রার্থী হিসেবে সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি। তৃণমূলনেত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনে একদা তাঁরই সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী। কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলনের ইতিহাসে নন্দীগ্রামের পূর্বসূরি সিঙ্গুরে প্রচারের আলো তুলনায় অনেকটাই কম। কিন্তু লড়াইয়ের তীব্রতায় ঘাটতি নেই এতটুকুও।

নন্দীগ্রামের দ্বৈরথের সঙ্গে আরও একটি মিল রয়েছে সিঙ্গুরের। এখানেও পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী দেড় দশক আগের জমিরক্ষার লড়াইয়ের দুই সহযোদ্ধা। প্রথম জন, সিঙ্গুরের বিদায়ী বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় জন, হুগলি জেলারই হরিপালের বিদায়ী বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। জমি আন্দোলনের সময় যাঁদের সম্পর্ক ছিল গুরু-শিষ্যের। শনিবার বিধানসভা ভোটের চতুর্থ দফায় তাঁদের ভাগ্যপরীক্ষা হবে জনতার দরবারে।

সিঙ্গুর থেকে টানা ৪ বারের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ এ বার দল বদলে বিজেপি-র প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী বেচারাম। বস্তুত, তৃণমূল বেচারামকে সিঙ্গুরের প্রার্থী ঘোষণা করার পরেই সপুত্র বিজেপি-তে যোগ দেন ৯০ বছরের মাস্টারমশাই। এর পর দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের প্রতিবাদ ‘উপেক্ষা’ করে প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করে বিজেপি। নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনে মমতার সেনাপতি শুভেন্দুকে দলে রাখার জন্য তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে যে ‘তৎপরতা’ দেখা গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে অবশ্য তা হয়নি। বরং তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, রবীন্দ্রনাথ আবেদন জানিয়েছিলেন, বয়সের কারণে তাঁকে বাদ দেওয়া হলে ছেলে তুষারকে যেন প্রার্থী করা হয়। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেন মমতা।

টাটাদের ন্যানো কারখানা তৈরির উদ্যোগের অনেক আগেই সিঙ্গুর থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাম জমানায় ২০০১ এবং ২০০৬ সালে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ভোটে জেতেন তিনি। এর পর ২০১১ সালে রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের ঝড় এবং জমি আন্দোলনের জনসমর্থনে ভর করে তাঁর জয়ের ব্যবধান দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার। পেয়েছিলেন ৫৭.৬১ শতাংশ ভোট। ২০১৬-য় অবশ্য তা নেমে আসে ৫০.০২ শতাংশে। প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ভোটের ব্যবধান কমে হয় ২০,৩২৭।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের বিধানসভা ভিত্তিক ফল বলছে, ৪৬.৮৬ শতাংশ ভোট পেয়ে সিঙ্গুরে এক নম্বর দল হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। তৃণমূলের ঝুলিতে রয়েছে ৪০.৬১ শতাংশ ভোট। জোড়াফুলের তুলনায় ১০ হাজার ৪২৯ ভোটে এগিয়ে পদ্ম।

লোকসভা ভোটের সময় অবশ্য সে ভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি রবীন্দ্রনাথকে। তত দিনে একদা শিষ্যের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক তিক্ত হয়ে গিয়েছে। ২০১১-র ভোটের পর মমতা মন্ত্রী করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। কিন্তু পরের বার মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি তাঁর। অন্য দিকে, বেচারাম মন্ত্রী হওয়ার পরে দলের অন্দরেও রবীন্দ্রনাথ কোণঠাসা হয়ে পড়েন। গত বছর ‘দলে সম্মানহানি’র অভিযোগ তুলে প্রকাশ্যে রাজনীতি ছাড়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের রাজ্য নেতাদের হস্তক্ষেপে নিরস্ত হন। কিন্তু প্রাক্তন শিষ্য সিঙ্গুরের প্রার্থী হওয়ায় আর ঠেকানো যায়নি মাস্টারমশাইকে। শনিবার সেই কেন্দ্রেই ভোট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE