Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
BJP

Bengal polls 2021: তড়িঘড়ি বিজেপি-তে জিতেন, নেপথ্যে এক আশঙ্কা, তিন ফোন কল

রাজ্য বিজেপি-র অনেক শীর্ষ নেতাও চমকে যান জিতেনের যোগদানের খবর পেয়ে। কিন্তু কেন? যাঁকে নিয়ে এত টানাপড়েন তাঁর যোগদান এমন আচমকা কেন?

মঙ্গলবার বৈদ্যবাটিতে বিজেপি-র সমাবেশে জিতেন্দ্র তিওয়ারি।

মঙ্গলবার বৈদ্যবাটিতে বিজেপি-র সমাবেশে জিতেন্দ্র তিওয়ারি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২১ ১৮:০৮
Share: Save:

পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র (জিতেন) তিওয়ারি বিজেপি-তে যোগ দিলেন দিল্লি বা কলকাতায় নয়, হুগলির বৈদ্যবাটিতে। মঙ্গলবারের এই যোগদান নিয়ে কোনও আগাম জল্পনাও ছিল না। রাজ্য বিজেপি-র অনেক শীর্ষ নেতাই চমকে যান সেই খবর পেয়ে। কিন্তু কেন এমন হল? যাঁকে নিয়ে এত টানাপড়েন তাঁর যোগদান এমন আচমকা কেন?

রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, জিতেন যে বিজেপি-তে যোগ দেবেন সেটা অনেক আগে থেকেই ঠিক ছিল। সেটা আর কিছু দিন পরেই হতে পারত। কিন্তু জিতেনের একটি ‘আশঙ্কা’ থেকেই এত তড়িঘড়ি যোগদানের ব্যবস্থা করতে হয়। জিতেন ঘনিষ্ঠরাও জানতে পারেননি চিকিৎসার কথা বলে কলকাতায় এসে ‘দাদা’ মঙ্গলবার পদ্মবনে ঝাঁপ দেবেন। তবে বুধবার সকালে বিষয়টা তাঁদের কাছে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়। জিতেন ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ পর্যন্ত জিতেন জানতেন বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারেন। আর সেই তালিকায় নাকি পাণ্ডবেশ্বরের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নামও থাকতে পারে। এটা জানার পরেই জিতেন সরাসরি ফোন করেন বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বিজেপি-র সহ-সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশকে। আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এক বার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়ে গেলে তাঁর পক্ষে আর বিজেপি-তে যোগ দেওয়া সম্ভব হবে না।’’

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ফোন পাওয়ার পরে বিষয়টা দেখার আশ্বাস দিয়ে শিবপ্রকাশ ফোন করেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। দিলীপ তখন কলকাতায় হেস্টিংসে দলের নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক সেরে হুগলির উদ্দেশে রওনা দিয়ে দিয়েছেন। সেখানে রিষড়া থেকে বৈদ্যবাটি— ‘পরিবর্তন যাত্রা’-য় অংশ নেওয়ার পরে জনসভায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল। শিবপ্রকাশের ফোন পেয়ে দিলীপ জানান, জিতেনকে তবে বৈদ্যবাটি চলে আসতে বলা হোক। সেখানেই যোগদান হয়ে যাবে। এর পরে শিবপ্রকাশ সেই নির্দেশ দেন জিতেনকে। জিতেন পৌঁছে যান বৈদ্যবাটি। জিতেনের ফোন শিবপ্রকাশকে, শিবপ্রকাশের ফোন দিলীপকে এবং ফের শিবপ্রকাশের ফোন জিতেনকে এই তিন ফোন কলের পিছনে যে আশঙ্কা সেটা অবশ্য তৃণমূল মানতে নারাজ। জিতেনকে ফের পাণ্ডবেশ্বর থেকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হয়েছিল বলে সম্ভাবনার কথা এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের পক্ষে কেউ-ই জানাননি।

জিতেনকে দলে নেওয়ার বিষয়ে সর্ব প্রথম আপত্তি তুলেছিলেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিন ফোনে জিতেনের পদ্মশিবিরে যোগ চূড়ান্ত হওয়ার মাঝে ছিল আরও একটি ফোন কল। দিলীপ ফোন করেন বাবুলকে। মালদহে যোগী আদিত্যনাথের সমাবেশে ছিলেন বাবুল। সেখান থেকেই তিনি দিলীপকে জানান, বৈদ্যাবাটির সভায় জিতেনের যোগদান হয়ে যাক। পরে বুধবার তিনিও জিতেনকে স্বাগত জানাতে আসেবেন। সেই স্বাগত জানানোর পর্ব হয় বুধবার কলকাতার হেস্টিংসে রাজ্য বিজেপি-র প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে। সেখানে দিলীপ, বাবুল, জিতেনের উপস্থিতিতে আসানসোলের ৩ পুর প্রতিনিধিও যোগ দেন বিজেপি-তে।

জিতেন ঘনিষ্ঠরা অবশ্য দাবি করছেন, ‘দাদা’-র কাছে ঠিক খবরই ছিল। তাঁর বিজেপি-তে যোগদান শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। সেই জল্পনা শুরুর সময় থেকেই সব পাকা হয়ে গিয়েছিল। পদ্মশিবিরে এ নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হওয়ায় কিছু দিন চুপ থাকতে বলা হয়েছিল জিতেনকে। সেই মতো হাল ছাড়েননি জিতেন। কণ্ঠও ছাড়েননি। জোড়া ও পদ্ম দুই ফুলের নৌকোয় পা রেখে চললেও মনটা ছিল বিজেপি-তেই। ঠিক ছিল, ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্য অমিত শাহের সফরের সময় তিনি যোগ দেবেন। কিন্তু সেই সফর বাতিল হতেই অধৈর্য হয়ে উঠেছিলেন জিতেন। কারণ, তিনি আগেই এটা টের পেয়েছিলেন যে তৃণমূল আর সে ভাবে তাঁকে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ মনে করছে না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে জিতেন বিজেপি-তে যোগ দিলেও তাঁকে কি প্রার্থী করা হবে? হলে কোথা থেকে? বিজেপি সূত্রে খবর, পুরনো কেন্দ্র পাণ্ডবেশ্বরই ছেড়ে দেওয়া হবে তাঁকে। যদিও আসানসোল জেলা বিজেপি কখনওই সেটা চাইছে না। বরাবরই তাঁদের এ নিয়ে বিরোধিতা ছিল। কারণ, ২০১৯ সালে আসানসোল লোকসভা আসনে বাবুল সুপ্রিয়ের জয়ে পাণ্ডবেশ্বরেরও অবদান ছিল। বাবুল পেয়েছিলেন ৭০ হাজার ২৯৬ ভোট। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন পান ৬৪ হাজার ২৭৫ ভোট। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, মুনমুন প্রার্থী হলেও লোকসভা ভোটে তাঁদের মূলত জিতেনের বিরুদ্ধেই লড়তে হয়েছিল। বিজেপি চাইছে, ‘সুবিধাজনক’ পাণ্ডবেশ্বর জিতেনকে দেওয়া হলেও পশ্চিম বর্ধমানের বাকি আসনগুলিতেও নিজের প্রভাব খাটান তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE