Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Rabindranath Bhattacharya

Bengal Polls: রবীন্দ্রনাথ বনাম বেচারাম, বিধানসভা ভোটে সিঙ্গুর দেখবে গুরু-শিষ্যের লড়াই

মাস্টারমশাইয়ের জবাব, ‘‘বেচারাম এখন আর আমার শিষ্য নয়। সে স্বরাজ ও স্বাধীন। যা খুশি তাই করে। তারই প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম আমি।’’

রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং বেচারাম মান্না।

রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং বেচারাম মান্না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২১ ২৩:৫০
Share: Save:

রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং বেচারাম মান্না। তাঁরাই এ বার মুখোমুখি হুগলির সিঙ্গুরে। এই সিঙ্গুর থেকে টানা ৬ বার বিধায়ক হয়েছেন মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ। এ বার তাঁর জায়গায় সেখানে তৃণমূল প্রার্থী করেছে হরিপালের বিধায়ক বেচারামকে। জমি আন্দোলনের সময় এই দু’জনকে ‘গুরু-শিষ্য’ হিসেবেই চিনত সিঙ্গুর। এ বারের বিধানসভা ভোটে সিঙ্গুর দেখবে সেই গুরু-শিষ্যের লড়াই।

গুরু ও শিষ্যের মধ্যে সম্পর্ক একটা সময় যতটা মধুর ছিল এখন ততটাই তিক্ত। সম্প্রতি সেই বিবাদ এমন জায়গায় যায় পৌঁছয় যে রাজনীতির আঙিনা কার্যত মাড়াচ্ছিলেনই না রবীন্দ্রনাথ। আর বেচারামকে সিঙ্গুরে প্রার্থী করার পর জোড়ফুল ফেলে মাস্টারমশাই হাতে তুলে নেন পদ্ম। তৃণমূল বলেছিল, বয়সের কারণেই তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় ‘শালগ্রাম শিলা’ বলেও রবীন্দ্রনাথকে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওঁর অনেক বয়স হয়েছে। উনি আমাদের ‘শালগ্রাম শিলা’ ছিলেন। ওজনে ভারী। কিন্তু নড়ানো যায় না।’’ সাধারণ ভাবে প্রবীণদের প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে দূরেই রাখে বিজেপি। কিন্তু সিঙ্গুরের ক্ষেত্রে দেখা গেল ৮৯ বছরের রবির তাপেই পদ্মের জমি উর্বর করতে চায় বিজেপি।

২০০১ সালেই বিধায়ক হন রবীন্দ্রনাথ। সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখও ছিলেন। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মন্ত্রীও করা হয় তাঁকে। তবে পরে দলের সঙ্গে অনেকটাই ‘দূরত্ব’ তৈরি হয় এই প্রবীণের। দ্বিতীয় দফার তৃণমূল সরকারে মন্ত্রিত্ব পাননি তিনি। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধেই লড়াইয়ে নামবেন সেটা হয়তো ভাবতেও পারেনি সিঙ্গুর। বিজেপি সূত্রে খবর, রবীন্দ্রনাথকে প্রার্থী করা হবে কি না, প্রার্থী তালিকা তৈরির সময় তা নিয়ে দল যথেষ্টই দ্বিধায় ছিল। যাঁর প্রথম কারণই ছিল বয়স। মাস্টারমশাই অবশ্য বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন, তিনি প্রার্থী হতে চান। পুরনো দল তৃণমূলের কাছেও নাকি তিনি এমনই দাবি করেছিলেন।

তৃণমূল সূত্রে খবর, বয়সের কারণে রবীন্দ্রনাথকে প্রার্থী করা না গেলে তাঁর ছেলে তুষার ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করা হোক বলে প্রস্তাবও দিয়েছিলেন মাস্টারমশাই। যদিও সেই প্রস্তাবে কর্ণপাত করেননি তৃণমূলনেত্রী। এর পরেই বিজেপি-তে যোগ পিতা-পুত্রের। রবীন্দ্রনাথকে প্রার্থী ঘোষণা করার পরে ইতিমধ্যেই সিঙ্গুরে কর্মীদের মধ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে সিঙ্গুর বিজেপি-র কাছে ‘সুবিধাজনক’ আসন বলেই চিহ্নিত। তাই দলের পুরনোরা কেউ প্রার্থী হোক চেয়েছিলেন স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা। তুষার বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন বলে শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করার পরেই সেই ক্ষোভের আঁচ পান রাজ্য নেতারা। আশা করা হয়েছিল, তুষারের পরিবর্তে প্রবীণ মাস্টারমশাইকে প্রার্থী করলে ক্ষোভ কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি ক্ষোভ প্রশমন সম্ভব হল না।

যদিও সেটাকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাইছেন না রবীন্দ্রনাথ। তাঁর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরে রবীন্দ্রনাথ আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘পুরনো দল আমায় বাদ দিয়েছিল বয়সের অজুহাত দেখিয়ে। বয়স হলেও আমার মানসিক ও চিন্তা শক্তি এখন সমান ভাবে কাজ করছে।’’ একদা শিষ্যের বিরুদ্ধে কেমন লড়াই হবে? মাস্টারমশাইয়ের জবাব, ‘‘বেচারাম এখন আর আমার শিষ্য নয়। সে স্বরাজ ও স্বাধীন। যা খুশি তাই করে। তারই প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম আমি।’’

রবীন্দ্রনাথ বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর একটি বারের জন্যও মুখ খোলেননি বেচারাম। শুধু বলেছেন, ‘‘নেত্রীর নির্দেশ ছাড়া রবীন্দ্রনাথবাবুকে নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’ ইতিমধ্যেই তাঁর প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। রবিবার মাস্টারমশাইয়ের নাম বিজেপি-র প্রার্থী তালিকায় থাকার পরেও বেচারাম কার্যত চুপ। এক সময়ের গুরুর বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে কী বলবেন? জবাবে বললেন, ‘‘আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE