সোনাচূড়া বাজারের কাছে নিশিকান্ত মণ্ডলের মূর্তি।—নিজস্ব চিত্র।
কত্ত প্রশ্ন। একটারও জবাব নেই!
আর সে সব না জেনেই ভোট দিতে যাচ্ছে নন্দীগ্রাম।
আবার, কত্ত উত্তর। একটারও প্রশ্ন নেই! সে সব গায়ে না মেখেই ভোট দিতে গেল নন্দীগ্রাম।
উত্সাহটাই যেন হারিয়ে গিয়েছে তার! তবুও প্রশ্নগুলো তো ঘুরে বেড়াচ্ছে বাতাসে। কী রকম?
যেমন, প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে সেই যে ডিসেম্বর মাসে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে গেলেন, আর এক বারের জন্যও তিনি তাঁর ‘তীর্থক্ষেত্রে’ এলেন না! অথচ, গত ১ মে তিনি নন্দীগ্রামের ‘চৌকাঠ’ চণ্ডীপুরে সভা করেছেন। তবুও কয়েক কিলোমিটার দূরের নন্দীগ্রামকে ব্রাত্যই রেখে দিলেন। ২০১১-য় তো এমনটা ছিল না! সে বার নির্বাচনী প্রচারের শেষ সভাটিও তিনি করেছিলেন এই নন্দীগ্রামে। কী এমন হল এ বার? জানেন না কেউই।
যেমন, স্থানীয় তৃণমূল নেতা থেকে শুরু করে ভোটের প্রার্থী, সকলেই সমস্বরে বলছেন, ‘ভাল আছে নন্দীগ্রাম’। কী কী কারণে ভাল আছে? তাঁদের দাবি উন্নয়নের বন্যা বয়ে গিয়েছে এই জনপদে। অনেক পাল্টে গিয়েছে। পিচ-ঢালাই রাস্তা, আলোর সাজসজ্জা, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, ক্লাবে অনুদান— সব মিলিয়ে সেই আগের নন্দীগ্রাম আর নেই। কিন্তু, নন্দীগ্রামবাসী যখন প্রশ্ন করেন, কবে চালু হবে হাসপাতাল? ‘খুব শিগগিরি’। কবে আসবে রেল? ‘আসবে নিশ্চয়ই। ওটা তো এখন আমাদের হাতে নেই!’ আর কর্মসংস্থান? ‘হচ্ছে, হবে, সবই হবে’। নিশ্চিত জবাব দিতে পারেন না কেউই।
যেমন, নন্দীগ্রামে নাকি প্রচুর অস্ত্র আছে। বিরোধীরা এই অভিযোগ অনেক দিন ধরেই করেন। জমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা নিশিকান্ত মণ্ডল খুন হওয়ার পরে ফের সেই প্রসঙ্গ উঠতে শুরু করে। কংগ্রেস নেতা সবুজ মণ্ডল বা সিপিআইয়ের সাদ্দাম হোসেন, সকলেই ভোটের বাজারে প্রসঙ্গটি প্রশ্নের মোড়কে তুলে ধরছেন। কিন্তু, আদৌ কি নন্দীগ্রামে বেআইনি অস্ত্র রয়েছে? জবাব নেই।
দেখুন নন্দীগ্রামের ভিডিও
আবার প্রশ্নহীন জবাবও রয়েছে।
যেমন, তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের প্রাসাদোমপ বাড়ি দেখে ‘মানুষের মনে কোনও প্রশ্ন’ নেই। সুফিয়ান অন্তত তেমনটাই জানাচ্ছেন। কিন্তু, তৃণমূলনেত্রী ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন নাকি তাঁর বাড়ি দেখে। তাই জবাব তো দিতেই হবে। সুফিয়ানের মতে, তাঁর পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রচুর। এত লোককে একসঙ্গে থাকতে গেলে বাড়ি তো বড় বানাতেই হবে। তবে সে বাড়ি যে তাঁর নিজের টাকাতেই বানানো এবং গৃহঋণও নিয়েছেন সে কথা জানাতেও তিনি ভোলেন না। তবে এত কথা ‘দিদি জানতেন না’ বলেই দাবি সুফিয়ানের। প্রশ্ন নেই, জবাব আছে।
যেমন, কখনও কোনও প্রশ্নের মুখোমুখি না হয়েও শাসক দলের সকলেই বারে বারে জানান দেন নন্দীগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন তাঁরাই। তবে কেন ভরত মণ্ডলের বাবা ধনঞ্জয়বাবুকেও হঠাত্ কথার মাঝে বলতে হয়, ‘আমি চাই শান্তি ভাবে সকলে থাকুক। শান্তি ভাবে সকলে চলুক’! জবাব আছে। প্রশ্ন নেই।
আরও পড়তে ক্লিক করুন
নয়া একলাখি প্রকল্প নিয়ে নন্দীগ্রাম জুড়ে হাসছেন একা শুভেন্দু
এত কিছু না জেনে এবং জেনেই ভোট দিতে যাচ্ছে নন্দীগ্রাম। আসলে নন্দীগ্রামের এ সবে আর আগ্রহ নেই যে! তাই কেউ কোনও কথাই বলতে চান না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy