Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ছে হামলা, ফের ঘরছাড়া বাম কর্মীরা

নির্বাচনের ফল প্রকাশের ফল থেকে ঘাটাল মহকুমা জুড়ে সিপিএমের পার্টি অফিস ও কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর চলছেই। এই অত্যাচারের মাত্রা বাড়ছে এতটাই যে বহু সিপিএম কর্মী-সমর্থক বাধ্য হচ্ছেন ঘর ছাড়তে। ঘটনায় উদ্বেগে সিপিএম নেতৃত্বও। দলের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “তৃণমূলের হামলা ক্রমশ বাড়ছে। হামলার জেরে আমাদের শ’য়ে শ’য়ে কর্মী-সমর্থক গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

ঘাটালে সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে ঠাঁই নিয়েছে বাম কর্মী-সমর্থকরা। ছবি: কৌশিক মিশ্র।

ঘাটালে সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে ঠাঁই নিয়েছে বাম কর্মী-সমর্থকরা। ছবি: কৌশিক মিশ্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০১:৪০
Share: Save:

নির্বাচনের ফল প্রকাশের ফল থেকে ঘাটাল মহকুমা জুড়ে সিপিএমের পার্টি অফিস ও কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর চলছেই। এই অত্যাচারের মাত্রা বাড়ছে এতটাই যে বহু সিপিএম কর্মী-সমর্থক বাধ্য হচ্ছেন ঘর ছাড়তে। ঘটনায় উদ্বেগে সিপিএম নেতৃত্বও। দলের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “তৃণমূলের হামলা ক্রমশ বাড়ছে। হামলার জেরে আমাদের শ’য়ে শ’য়ে কর্মী-সমর্থক গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। খোঁজ নেই বহু কর্মীর। পুলিশ-প্রশাসনকে সমস্ত ঘটনায় লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও হামলা বন্ধ হয়নি।” তবে জেলা পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখরের আশ্বাস, ‘‘দু’এক জায়গায় বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটছে। পুলিশ এলাকায় টহল দিচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিকই রয়েছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার থেকেই জেলা জুড়ে সিপিএমের কর্মী-নেতাদের উপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটেই চলছে। অভিযোগ,শাসক দল তথা তৃণমূলের লোকজন প্রকাশ্যেই সিপিএমের কর্মীদের এলাকা ছাড়ার ফতোয়া দিচ্ছে। নির্দেশ না মালনেই শুরু হচ্ছে হামলা, মারধর। রাধানগর, ইড়পালা, লক্ষ্ণণপুর, গঙ্গাপ্রসাদ প্রভৃতি গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে খাঁ খাঁ করছে গোটা এলাকা। যাঁরা গ্রামে রয়েছেন তাঁরাও স্বস্তিতে নেই। চন্দ্রকোনার জাড়া, বসনছড়া, চাঁইপাট, গৌরা, নন্দনপুর-সহ বহু এলাকার ছবিটা একই। বহু এলাকায় সিপিএমের সমর্থকদের বাড়িতে কেটে নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগও। সরকারি নলকূপ থেকে পানীয় জল নেওয়াও বন্ধ। তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এলাকার শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “ঘড় ছেড়ে পালানোর কোনও প্রশ্নই নেই। যাঁরা ঘর ছেড়েছেন-তাঁরা দ্রুত ফিরে আসুন।’’

ফল প্রকাশের পরে জঙ্গলমহলেও ধারাবাহিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন বিরোধীরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল ব্লকের কুলটিকরি লোকাল কমিটির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের সাঁকরাইল জোনাল কমিটির সম্পাদক বাদল রানা-র অভিযোগ, “ফল ঘোষণার পরে ওই কার্যালয়ের সদর দরজায় তৃণমূলের কিছু লোকজন লোহার চেন দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। পুলিশকে জানিয়েছি। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বকেও বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।” এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের সাঁকরাইল ব্লক সভাপতি সোমনাথ মহাপাত্র বলেন, “আমাদের দলের কেউই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। আমরা কর্মীদের সংযত করে রেখেছি। বিরোধীদের কারো গায়ে হাত দিতে দিইনি।”

সাঁকরাইলের রগড়া অঞ্চলের কাঠুয়াপাল বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট ছিলেন সত্যরঞ্জন দত্ত। অভিযোগ, শনিবার তৃণমূলের লোকেরা সত্যরঞ্জনবাবুকে মারধর করে। তাঁকে নেড়া করে গ্রামে ঘোরানো হয়। এদিন কাঠুয়াপালের দুই সিপিএম কর্মী পুলক চন্দ ও কালীপদ রায় রগড়া থেকে রেশন তুলে ফেরার সময় আক্রান্ত হন। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকেরা তাঁদের রেশন কার্ড ও রেশন সামগ্রী কেড়ে নেয়। দু’জনকেই বেধড়ক মারধর করা হয়। সাঁকরাইলের বৈঞ্চা গ্রামে এক সিপিএম কর্মীকে মারধর করে ঘরছাড়া করা হয়েছে। শনিবার নয়াগ্রাম ব্লকের নিমাইনগরে বিজেপি সমর্থকদের ৮টি বাড়িতে ভাঙচুর-লুঠ করা হয়েছে। নয়াগ্রামের কলমাপুকুরিয়া গ্রামে সুজিত মাহাতো নামে এক বিজেপি কর্মীর হাত ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

তবে ভিন্ন ছবি পশ্চিমে। একটা সময় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। সেই জেলাতেই সিপিএম নেতৃত্ব এখন স্থানীয়স্তরে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য দলের কর্মীদের বার্তা দিচ্ছেন! ইতিমধ্যে জেলা সিপিএমের তরফে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ইতিমধ্যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘প্রয়োজনে এলাকার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন’। দলীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার জেলা সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। জেলা সিপিএমের একাংশ নেতা জানান, স্থানীয়স্তরে দলের অনেক নেতার সঙ্গেই শাসক দলের নেতাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বললে এলাকায় শান্তি বজায় রাখা সহজ হতে পারে। এরপরই জেলা সিপিএমের তরফে সব জোনাল কমিটিকে দরকারে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগের মৌখিক পরামর্শ দেওয়া হয়। এ কথা স্বীকার করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “শাসক দলের যাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়, স্থানীয় নেতাদের বলা হয়েছে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে।”

তবে শনিবার সকালেও সবংয়ের বলপাইতে সিপিএমের একটি আঞ্চলিক ও দু’টি শাখা কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুঠের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের ব্লক সাধারণ সম্পাদক স্বপন মাইতির মতে, “সবংয়ে মানস ভুঁইয়ার জয় তৃণমূল মেনে নিতে পারছে না। তাই নেত্রীর ছোট-ছোট ভাইরা অশান্তি করছে।’’ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দিন সবং থানায় শান্তি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেই বৈঠকে কংগ্রেস ও বাম প্রতিনিধিরা এলেও তৃণমূলের কেউ আসেননি। সবংয়ের তৃণমূল নেতা অমূল্য মাইতি বলেন, “ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই। আর রাজ্যে অস্তিত্ব হারানো সিপিএমের দাবিতে শান্তি বৈঠকে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।’’

তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে অশান্তির ঘটনাও সামনে আসছে। শুক্রবার পিংলা বিধানসভার খড়্গপুর-২ ব্লকের বসন্তপুকুরে তৃণমূল কর্মী শিক্ষক প্রণব দে-র বাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। তবে গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে একটি আস্ত গুলি মিলেছে। তবে সেটি বন্দুক থেকে ছোড়া হয়নি বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলেরই জেরেই এই ঘটনা। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “তৃণমূলের ক্ষতি চায় এমন কোনও দুষ্কৃতী এই কাজ করেছে।’’ তৃণমূলের অবশ্য দাবি, কোনও রকম হিংসায় প্রশ্রয় দিচ্ছে না দল। জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল সব সময় শান্তির পক্ষে। কর্মীদের বলা হয়েছে, কোনও রকম প্ররোচনায় পা না দিতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 CPM LF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE