জয়ের পর। —নিজস্ব চিত্র।
স্মৃতিটা উস্কে ওঠাই কাল হয়েছে!
সমশেরগঞ্জ খোয়ানোর পরে, পার্টি অফিসের দরজা খুলে ম্লান মুখে যে বৈঠকটা তড়িঘড়ি সেরে ফেলেছেন স্থানীয় সিপিএম নেতারা, তাতে বাম-কংগ্রেসের চিরকালীন বৈরী সম্পর্কটাকেই দায়ী করছেন তাঁরা।
তেমন ঘটা করে পর্যালোচনার রেওয়াজ কংগ্রেসের নেই। তার উপর, সমশেরগঞ্জে জোট প্রার্থী হন বামেদের তোয়াব আলি। বিধ্বস্ত সিপিএম প্রার্থীর হারের কারণ খোঁজার ‘দায়’ কংগ্রেস নেবে কেন, গোছের প্রশ্ন তুলে ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতারা বলতে শুরু করেছেন, এ বার বুঝুক! কী বুঝবে? সমশেরগঞ্জের এক পরিচিত কংগ্রেস নেতা বলছেন, ‘‘তিন দশক ধরে কম মারধর তো হয়নি আমাদের উপরে, সে কথা লোকে ভুলে যাবে!’’ আর রাতারাতি তৃণমূলের টিকিট পেয়ে যাওয়া আমিরুল বলছেন, ‘‘ক্ষুণ্ণ কংগ্রেস সমর্থকেরাই আমার দিকেই ঝুঁকেছেন, তাতেই এই জয়।’’
ফল প্রকাশের পরে, চুলচেরা হিসেব শুরু হতেই ভোটের পাটিগণিতও বলে দিচ্ছে, আমিরুল খুব ভুল বলেননি। জোট প্রার্থী হয়েও তোয়াব আলির ইভিএমে কংগ্রেসের এক শতাংশ ভোটও পড়েনি। বরং বিড়ি মালিক মন্টু বিশ্বাস নির্দল প্রার্থী হয়েও কুড়িয়েছেন ৪২ হাজারের বেশি ভোট। যার সিংহভাগই যে তোয়াবের বাম ভোটের অংশ, বলার অপেক্ষা রাখে না। বামেদের পুরনো ঘাঁটি সামশেরগঞ্জে ২০১১ সালেও ৪৬.৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন তোয়াব আলি। সে বার কংগ্রেস পেয়েছিল ৪০.৫২ শতাংশ ভোট। তবে, দু’বছর আগের লোকসভা নির্বাচনেই ইঙ্গিতটা দেয় সমশেরগঞ্জ। তোয়াবের ভোট নামে ৩০.৯ শতাংশে। সেই ধারাই বজায় রাখল সমশেরগঞ্জ।
সিপিএমের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘পরিসংখ্যানই বলছে, কংগ্রেসের ভোটও আমাদের বাক্সে পড়েনি।’’ সমশেরগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী বলছেন, ‘‘সুতিতেও বাম শরিকের প্রার্থী ছিল, আমরা কিন্তু প্রাণপাত করে খেটেছি কংগ্রেসের হয়ে। জেনে রাখুন সে জন্যই তৃণমূলকে হারাতে পেরেছে কংগ্রেস।’’
হিসেব বলছে, ধুলিয়ান পুরনির্বাচনে ১০,৫২৯ ভোট পেয়েছিল সিপিএম। এ বারে সেই পুর এলাকায় তারা পেয়েছে ১০,১৪৫। পুর এলাকায় কংগ্রেসের ৮ জন কাউন্সিলারের প্রায় ১৫ হাজার কংগ্রেস ভোটের সবটাই গিয়েছে তৃণমূলে। আর সে কারনেই উপরতলার কিছু নেতা জোট চাইলেও বাস্তবে সামশেরগঞ্জে কংগ্রেসের দলীয় ভোট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি তাঁরা। যার নিট ফল, ১৭৮০ ভোটে হেরেছেন তোয়াব। আর আমিরুল ম্যাজিক? দীর্ঘ দিন ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে। কর্মীদের পাশে থাকতে জানেন। নিচুতলার কর্মীরা তাঁকে যে পছন্দ করেন, বলছেন কংগ্রেস নেতারাই। ধুলিয়ানে কংগ্রেসের এক কাউন্সিলার বলছেন, “দীর্ঘ দিন সিপিএমের অত্যাচারের শিকার হয়েছি। অনেককেই মিথ্যে মামলায় জেল খাটানো হয়েছে।’’ যা শুনে মুচকি হাসছেন আমিরুল। বলছেন, ‘‘আমি তো একটা কথাই সবাইকে বলছি, আমি তোমাদেরই লোক!” ইঙ্গিতটা কি তাঁর পুরনো দল কংগ্রেসের কর্মীদের দিকে? আমিরুল, বলছেন, ‘‘সে বোঝায় দায় আপনার!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy