Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সন্ত্রাস রুখতে মমতাকে চিঠি রাজ্যপালের

ভোট পরবর্তী হিংসা দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি। গত বৃহস্পতিবার ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছে। তার পর থেকেই জেলায় জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে হিংসার ঘটনা ঘটছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০৩:৫৯
Share: Save:

ভোট পরবর্তী হিংসা দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি।

গত বৃহস্পতিবার ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছে। তার পর থেকেই জেলায় জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে হিংসার ঘটনা ঘটছে। রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ— সোমবারও তা ছিল অব্যাহত। হিংসা নিয়ে বিরোধীরা গোড়া থেকেই আঙুল তুলছেন তৃণমূলের দিকে। এ দিন তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সেই অভিযোগই জানিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেন। তার পরই মমতাকে চিঠি দেন কেশরীনাথ।

মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে রাজ্যপাল অবশ্য লিখেছেন, তৃণমূল কর্মীদের ওপরেও হামলা হয়েছে বলে তিনি রিপোর্ট পেয়েছেন। তবে যে দলই জড়িত থাকুক, এ ধরনের হামলা বন্ধ করতে প্রশাসনকে সক্রিয় হওয়ার জন্য এখনই নির্দেশ দেওয়া উচিত।

রাজ্যপালের চিঠি সোমবার বিকেলে নবান্নে পৌঁছেছে। চিঠির বিষয়টি সামনে আসার পরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব রাজ্যপালের উপর চটেছেন বলে দলেরই একটি সূত্রের খবর।

কেন? তৃণমূলের ওই সূত্রটির বক্তব্য, প্রথমত, রবিবার বিকেল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখার দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের। সবে মাত্র সেই দায়িত্ব রাজ্য সরকারের হাতে এসেছে। দ্বিতীয়ত, হিংসা দমন করতে দলের রাজ্য ও জেলার নেতাদের প্রথম দিন থেকে পইপই করে নির্দেশ পাঠিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। এবং তৃতীয়ত, রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে রাজ্যপালের উদ্বেগ স্বাভাবিক। কিন্তু চিঠির ব্যাপারটি তিনি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে দিলেন কেন? তা হলে কি রাজ্যপাল রাজনীতি করছেন?

ভোটের ফল প্রকাশের পরই রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে মমতা বলেছিলেন, বিজয় উৎসব হিসেবে বরং সাংস্কৃতিক উৎসব হোক। কিন্তু বাস্তবে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস ঘটেই চলেছে। বিরোধী দলের কর্মী খুন, তাঁদের বাড়িতে হামলা, পার্টি অফিস দখল, ভাঙচুর সবই চলছে। এ দিনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

যেমন, বীরভূমের নানুর বিধানসভা এলাকায় সোমবারই এক সিপিএম সমর্থককে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের দাবি, তৃণমূলের গদাধর হাজরাকে হারিয়ে দীর্ঘদিন পরে নানুর দখল করেছে তারা। সেই আক্রোশেই এ দিন গদাধর-অনুগামীরা দফায় দফায় হামলা চালায় বোলপুর থানার নাহিনা, সিঙ্গি, ঘিদহ-সহ কয়েকটি গ্রামে। মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে গুলি করে খুন করা হয় সিঙ্গির বাসিন্দা খোকন শেখকে (২৮)। আবার রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বর্ধমানের ভাতছালায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন ঘোষের বাড়ি লক্ষ করে এক দল দুষ্কৃতী এলোপাথাড়ি ঢিল ছোড়ে বলে অভিযোগ। একই ভাবে হুগলির পান্ডুয়ায় বিজেপির এক পঞ্চায়েত সদস্যাকে হেনস্থা, হাওড়ার জয়পুরে সিপিএমের এক পঞ্চায়েত সদস্যের দোকানে ভাঙচুর ও লুঠ এবং দুই কংগ্রেস সমর্থকের বাড়িতে হামলার ঘটনায় আঙুল উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তা ছাড়া কোচবিহারের সাবেক ছিটমহলেও দু’টি জায়গায় সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাস-মানচিত্র থেকে বাদ পড়েনি শহর কলকাতাও। ভোটের দিনে সন্ত্রাসের প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশকে বাঘাযতীন এলাকার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সোমবার ভোরে বাঘাযতীনের ফুলবাগানে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে বোমা মারার ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আদালতের নির্দেশ রয়ে গিয়েছে খাতা-কলমেই। যাদবপুর কেন্দ্রের সিপিএমের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর এজেন্ট পানু বসুর অভিযোগ, এ দিন ভোরে তাঁর বাড়ির দেওয়ালে দু’টি বোমা মারা হয়েছে। সিপিএম ও কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূলের মারামারি হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার ডহরপোতায়। দুই মহিলা-সহ দু’পক্ষের আট জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক প্রসূতিও আছেন। অন্য দিকে বিরোধীদের বিরুদ্ধেও পাল্টা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, রবিবার রাতে হলদিয়ার গিরিশমোড় এলাকায় দুই তৃণমূল কর্মীকে ভোজালি দিয়ে কুপিয়েছে সিপিএম। ঘটনায় এক সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করেছে দুর্গাচক থানার পুলিশ।

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের এই আবহে তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক ঠিকই, তবে এগুলির সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের ফল ঘোষণার দিনই নির্দেশ পাঠিয়ে দিয়েছেন, প্রতিহিংসার মনোভাব আর নয়। মমতার মতে, এটা ঠিক যে নানা কারণে তৃণমূলকর্মীরা প্রতিপক্ষের ওপর চটে রয়েছেন। কিন্তু এও ঠিক যে, তাঁরা যদি প্রতিহিংসার পথ নেন তা হলে ২১১ আসনে জেতার গৌরবে ছায়া পড়বে। তাই হিংসা ও পাল্টা আক্রমণ বরদাস্ত করা হবে না। ঘটনা হল, জেলা স্তরে কোনও ঘটনা ঘটলে মুকুল রায়রা তা নিয়ন্ত্রণের জন্য সক্রিয়ও হচ্ছেন। মুকুলবাবু আজ বলেন, ‘‘আমরা সব রকম ভাবে চাইছি, যাতে গোটা রাজ্যে শান্তি বজায় থাকে। একটা-দু’টো বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া তেমন কোনও বড় ঘটনা ঘটেনি।’’ আবার অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘আসলে কিছু সিপিএম নেতা হেরে গিয়ে এগুলিকেই বড় করে দেখিয়ে আত্মসম্মান রক্ষার চেষ্টা করতে চাইছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সমাজের সকল শ্রেণিকে নিয়ে চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE