দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক। শুক্রবার নবান্নে। ছবি: সুদীপ আচার্য।
পঞ্চাশ শতাংশ ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা বকেয়া পড়ে যাওয়ায় সরকারি কর্মীদের ক্ষতটা খুবই দগদগে। দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সরকারি কর্মীদের সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বেতন কমিশনের প্রস্তাব কার্যকর না-হওয়া পর্যন্ত সরকারি কর্মীদের ‘ব্যান্ড পে’-এর উপরে ১০ শতাংশ ‘ইন্টারিম রিলিফ’ বা অন্তর্বর্তিকালীন সুবিধে দেবে সরকার। এতে সরকারের খরচ হবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। শাসক দল প্রভাবিত সরকারি কর্মী সংগঠন মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিরোধী সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির মতে, যেখানে ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বকেয়া, সেখানে এই রিলিফে সরকারি কর্মীদের কোনও লাভই হল না।
জানুয়ারিতে কেন্দ্র এক কিস্তি মহার্ঘ ভাতা ঘোষণার পরে এ রাজ্যে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলে। সরকারি কর্মীদের অনেকেই ভেবেছিলেন, বিধানসভার ভোটে যাওয়ার আগে অন্তত আরও ১০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘দ্বিতীয় দফায় সরকারে এসে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সরকারি কর্মীদের কিছু অন্তত না-দিলে যে ক্ষোভ চরমে উঠবে, সেটা বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
চলতি আর্থিক বছরে রাজ্য সরকারের ঋণের বোঝা তিন লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে। তাই কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে নবান্নের কর্তাদের পা কাঁপছিল। অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যে কর্মীদের বেতন আর পেনশন দিতেই ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। নতুন বেতন কমিশন হলে আরও অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার দায় চাপবে রাজ্যের ঘাড়ে। ‘‘পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক, রিলিফ না-দিলে নতুন সরকার কাজই করতে পারবে না। কারণ, সে-ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে কর্মীদের অসহযোগিতার আশঙ্কা ষোলো আনা। সেটা বুঝেই এই সিদ্ধান্ত,’’ বলছেন ওই অর্থ-কর্তা।
রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, সরকার ইতিমধ্যেই কর্মীদের নতুন বেতনক্রম ঠিক করতে বেতন কমিশন তৈরি করেছে। সাধারণ ভাবে বেতন কমিশন তৈরির পরে মহার্ঘ ভাতা বা বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। সেই জন্যই ব্যান্ড পে-র উপরে ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই কর্তা বলেন, ‘‘বেতন কমিশনের প্রস্তাব রূপায়ণের সময়ে স্বাভাবিক নিয়মেই এই বৃদ্ধি নতুন বেতন-কাঠামোর মধ্যে ঢুকিয়ে নেওয়া হবে।’’
সরকারি কর্মীদের অন্তর্বর্তিকালীন সুবিধের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে বিদায়ী অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এ দিন জানান, মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা কার্যকর হবে আগামী ১৬ জুলাই থেকে। অর্থ দফতর সূত্রের খবর, সরকারি কর্মীদের বেসিক পে তৈরি হয় ব্যান্ড পে এবং গ্রেড-এর যোগফলের উপরে। এ ক্ষেত্রে বেসিক পে-র মধ্যে যে-ব্যান্ড পে রয়েছে, তারই ১০ শতাংশ অন্তর্বর্তিকালীন সুবিধে হিসেবে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের মোট পাঁচটি ব্যান্ড পে রয়েছে। অর্থ দফতর সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী অন্তর্বর্তিকালীন সুবিধে দেওয়ার যে-সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন, সেই অনুযায়ী সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়বে সর্বনিম্ন ৪৯০ টাকা। সর্বাধিক ছ’হাজার টাকা।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি নন বিরোধী সরকারি কর্মী সংগঠনের নেতারা। তাদের কাছে এটাও আসলে সস্তায় বাজিমাতের চেষ্টা সরকারের। কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা মনোজ গুহের কথায়, ‘‘সরকারি কর্মীদের কত কম বেতন বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাছে নাম কেনা যায়, তার নতুন নতুন ফন্দি খুঁজে বার করছে সরকার। আমরা বেতন কমিশনের কাছে বেসিক পে-র ২৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তার বদলে এই বৃদ্ধিতে সরকারি কর্মীদের কোনও লাভই হবে না।’’ খুশি নয় আইএনটিইউসি অনুমোদিত কর্মী সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজও। তাদের নেতা মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার দু’কিস্তি মহার্ঘ ভাতা বাড়ালে খুশি হতাম। অন্তর্বর্তিকালীন এই সুবিধেয় কর্মীদের খুবই অল্প বেতন বাড়বে। তাই কোনও লাভই হবে না।’’ একই বক্তব্য বিজেপি প্রভাবিত কর্মী সংগঠন ‘সরকারি কর্মচারী পরিষদ’-এর নেতা দেবাশিস শীলেরও।
শাসক দলের সরকারি কর্মী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন অবশ্য স্বাভাবিক কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের নেতা সঞ্জীব পাল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানাই। তিনি যে সরকারি কর্মীদের কথা ভাবেন, এই সিদ্ধান্তই তার প্রমাণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy