Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পার্থর হয়ে ভোট চাইছেন, অথচ নিজেই জানেন না সৌরভ!

স্থির করেছিলেন প্যাড পরবেন না আর। ব্যাট হাতে আর নামবেন না ক্রিজে। রাজনীতির ময়দানের অনেক রথী-মহারথী তাঁকে নিজের দলের হয়ে ব্যাট করাতে চেয়েও পারেননি। তাঁরা যা পারেননি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাই পারলেন? নিজের স্কোরবোর্ড চাঙ্গা করতে মাঠে নামিয়ে দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে?

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ১৬:৪৩
Share: Save:

স্থির করেছিলেন প্যাড পরবেন না আর। ব্যাট হাতে আর নামবেন না ক্রিজে। রাজনীতির ময়দানের অনেক রথী-মহারথী তাঁকে নিজের দলের হয়ে ব্যাট করাতে চেয়েও পারেননি। তাঁরা যা পারেননি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাই পারলেন? নিজের স্কোরবোর্ড চাঙ্গা করতে মাঠে নামিয়ে দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে? পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা একটি সংগঠন প্রচারপত্র বিলি করেছে বেহালা পশ্চিমের বাড়িতে বাড়িতে। তাতে এলাকার বিশিষ্ট জনেদের তরফে পার্থবাবুকে জয়ী করার আবেদন। এই বিশিষ্ট জনেদের তালিকায় প্রথম নামটি হল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। চোনা পড়ল এর পর। কারণ, এমন প্রচারপত্রের কথা শুনে সৌরভ নিজে আকাশ থেকে পড়েছেন। বলেছেন, এ সবের বিন্দুবিসর্গ জানেন না তিনি।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক হিসেবে কতটা সফল, পাঁচ বছরে তিনি কত কাজ করেছেন নিজের কেন্দ্রের জন্য, তার হিসেব দেওয়া হয়েছে আবেদনপত্রটিতে। সব শেষে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জয়ী করার আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনকারী হিসেবে এলাকার যে বিশিষ্ট নাগরিকদের নাম রয়েছে, তাঁদের মধ্যে কবি সুবোধ সরকার, অভিনেতা সোহম, হিরণ, শ্রাবন্তী-সহ মোট ১৯ জনের নাম রয়েছে। তাঁদের কারও নাম নিয়েই তেমন আলোচনা নেই। চাঞ্চল্য শুধু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামটা নিয়েই। সরাসরি রাজনীতিতে আসার ডাক তো তিনি কম পাননি। অনেক বড় বড় স্তর থেকে আসা সেই সব অনুরোধ-উপরোধ-আবদারের জালও সৌরভকে কখনও জড়াতে পারেনি। তা হলে এ ক্ষেত্রে কী ঘটল? ব্যতিক্রম হল কেন?

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এই আবেদন পত্রের সঙ্গে বৃহত্তর রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। বেহালা পশ্চিমে যে সব উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, তা সৌরভ দেখেছেন। এলাকার এক জন বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে তিনি আমাকে জয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে এলাকার উন্নয়ন অব্যাহত থাকে।’’ অর্থাৎ, এই বাস বেহালা টু বেহালা, বলতে চাইছেন পার্থবাবু।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে বিলি হওয়া সেই সেই প্রচারপত্র। —নিজস্ব চিত্র।

উল্টো দিকে প্রশ্ন উঠছে বিস্তর। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে যাঁরা খুব কাছ থেকে চেনেন, তাঁরা মনে করছেন, এমনটা হতেই পারে না। রথী-মহারথীদের অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছেন যে সৌরভ, তিনি পচা শামুকে নিজের পা কাটাবেন? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শনিবার সকালেই দিল্লি গিয়েছেন। ফোনে ধরা গেল তাঁকে। তখনই বিমানবন্দরে নেমেছেন। শোনা মাত্রই অবাক হয়ে গেলেন। বললেন, ‘‘তাই নাকি? এই রকম লিফলেট বেরিয়েছে? এ বিষয়ে তো কিছুই জানি না। এই প্রথম শুনছি।’’ পাল্টা প্রশ্ন, আপনি নিশ্চিত? আপনার নাম ছাপা হয়েছে আপনার অনুমতি না নিয়েই? আরও কাটাকাটা উত্তর বেরিয়ে এল এ বার। ‘‘কোনও প্রশ্নই নেই। কেউ কোনও অনুমনি নেয়নি। আমি পাগল নাকি, এ সবের মধ্যে জড়াব?’’

তা হলে এ বার কী করবেন? সৌরভ বললেন, ‘‘আমি তো এখনও দেখিনি প্রচারপত্রটা। খোঁজখবর নিচ্ছি। আগে ওটা দেখি। তার পর যা করার করব।’’

পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন, সৌরভের অনুমতি ছাড়া কিছুই হয়নি। তিনি বললেন, ‘‘যে সংগঠন ওই আবেদনপত্রটি প্রকাশ করেছে, সেটির সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুসম্পর্কই রয়েছে। ওই সংগঠন সৌরভের অনুমতি না নিয়ে তাঁর নাম আবেদনপত্রে ছাপাবে না। নিশ্চয়ই তাঁর অনুমতি নিয়েই তাঁর নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। অন্তত আমার তাই মনে হয়।’’

আরও পড়ুন:

বীরভূমের কুরুক্ষেত্রে কি অন্য মহাভারত লেখা হবে?

এক সময় বামেদের ঘনিষ্ঠ হিসেব পরিচিত ছিলেন সৌরভ। বাম আমলে শাসক দলের হয়ে সৌরভের ময়দানের নামার জল্পনাও বহুবার ছড়িয়েছে। আবার থেমেও গিয়েছে। তৎকালীন সরকারের যে মন্ত্রীর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল সৌরভের, সেই অশোক ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কখনও আমরা সৌরভকে বলিনি, তোমাকে আমাদের হয়ে প্রচারে নামতে হবে।’’

সে সব অবশ্য বাম জমানার কথা। সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই। নতুন অযোধ্যায় নতুন করে উদ্যোগ দেখিয়েছেন অন্যরা। সেলিব্রিটির আকালে ভুগতে থাকা বাংলায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো এক জন আন্তর্জাতিক তারকাকে নিজেদের পাশে পেতে সব দলই আগ্রহ দেখিয়েছে যারপরনাই। গত লোকসভা নির্বাচনের আগেও প্রার্থী করার প্রস্তাব নিয়ে বিজেপি নেতা হাজির হয়েছেন তাঁর বাড়িতে। তার পরই কংগ্রেস নেতাও পৌঁছে যান পাল্টা প্রস্তাব নিয়ে। সব দলের আবদারই সযত্নে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন সৌরভ। ইতিমধ্যে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে সৌরভের। তবে সেই ঘনিষ্ঠতাকে সৌরভ রাজনীতির সঙ্গে জুড়তে দেননি। বেহালা পশ্চিমে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়া প্রচারপত্র তাই চমকে দিয়েছে অনেককেই।

সব শুনে এক রসিক বামপন্থী নেতার মন্তব্য, ‘‘যিনি পিএইচডি’র গবেষণাপত্র তৈরি করেন টুকলি করে, তিনি ভোট বাড়ানোর জন্য কারচুপি করে লিফলেটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম ঢুকিয়ে দেবেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE