Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

টেনশন কাটাতে কাজে মগ্ন ডাক্তারবাবু ও শুভঙ্কর

ওজনের আর দোষ কোথায়! নতুন জায়গায় মানুষের দোরে দোরে পৌঁছতে মাথার ঘাম ঝরেছে। আর দেড় মাসের প্রবল খাটুনিতে শরীরের ওজন এক ধাক্কায় বেশ কিছুটা কমে গিয়েছে।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০২:৪৮
Share: Save:

ওজনের আর দোষ কোথায়!

নতুন জায়গায় মানুষের দোরে দোরে পৌঁছতে মাথার ঘাম ঝরেছে। আর দেড় মাসের প্রবল খাটুনিতে শরীরের ওজন এক ধাক্কায় বেশ কিছুটা কমে গিয়েছে।

তিনি শুভঙ্কর সরকার। শ্রীরামপুরের জোট প্রার্থী তথা এআইসিসি সম্পাদক। স্থানীয় ‌কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, রাজনীতির যে কোনও পিচেই স্বচ্ছন্দে মানিয়ে নিতে জুড়ি নেই শুভঙ্করবাবুর। পোড়খাওয়া রাজনীতিকের মতোই গত বারের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়কে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন। ভোট পর্ব মিটে গেলেও দলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। তুফান উঠেছে চায়ের পেয়ালায়। ভোটের পরে প্রথম দু’দিন ফুরসত মেলেনি। গত দেড় মাস ইস্তক শ্রীরামপুরে ঘাঁটি গেঁড়ে পড়েছিলেন। সোমবার বরাহনগরে বাড়িতে যান। এক ঘুমে রাত কাবার তো বটেই, চোখ কচলে উঠে ঘড়িতে দেখেন সকাল ১১টা।

তবে ওই এক দিনই রুটিনের বাইরে ঘুম। আবার তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নানা কাজে। সিপি জোশি-সহ জাতীয় কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা থেকে নিজের ল’ফার্মে সময় দেওয়া সবটাই করেছেন। প্রচারের দিনগুলিতে খাওয়া-ঘুম কিছুই নির্ঘন্ট মেনে হয়নি। ৬৫ থেকে ওজন হয়েছে ৫১ কিলোগ্রাম। তাতে অবশ্য ‘কুছ’ পরোয়া নেহি। শুভঙ্করের ব্যস্ততা জারি রয়েছে। সময় পেলে টিভিতে খবর দেখছেন, দেশ পত্রিকায় চোখ রাখছেন। তবে যত কাজই করুন, মাঝেমধ্যেই ১৯ তারিখে কী ফল হবে, তা উঁকি দিচ্ছে মনে। পরিচিতদের সঙ্গে আড্ডায় নিজেই ‘মানুষের মনের খবর’ জানতে চাইছেন।

‘ডাক্তারবাবুর সাজানো বাগান’ শুকিয়ে দিতে পারবেন? শুভঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন। ভোট লুঠ হয়নি। উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে। এটাই তো চেয়েছিলাম। কে জিতল সেটা বড় কথা নয়।’’ মনে চাপা টেনশন থাকলেও জেতার ব্যাপারে অবশ্য গলায় প্রত্যয় ঝরে পড়ে।

শুভঙ্কবাবুর মতোই ‘টেনশন ফ্রি’ থাকার চেষ্টা করছেন ‘ডাক্তারবাবু’ও। অর্থাৎ তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ্ত রায়। কথা শুনলে কে বলবে, জোটের সঙ্গে অমন লড়াই তাঁর? দিব্যি খাচ্ছেন-দাচ্ছেন। রোগী দেখছেন। আর নিজের বাগানবাড়িতে গিয়ে হাসেদের দানা দিচ্ছেন। পুকুরে মাছের খাবার ফেলছেন।

সুদীপ্তবাবু থাকেন সিঁথিতে। সিঙ্গুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি বাগানবাড়ি কিনেছেন তিনি। এক সময় বাড়িতে ছাদভর্তি টবে গাছগাছালি ছিল। নিজে পরিচর্যা করতেন। কিন্তু ব্যস্ত ‘শিডিউলে’, বিশেষত বাইরে গেলে মাঝেমধ্যেই গাছেদের যত্নাতিতে ফাঁক থেকে যেত। সে জন্য ওই পাঠ তুলে দিয়েছেন। এখন বাগান তাঁর বাগানবাড়িতে। সুদীপ্তবাবু বেজায় খুশি। গাছের এঁচোড় এ বার কাঠাল হল বলে! বাগানবাড়িতে মালি আছেন। তিনি নিজেও সপ্তাহান্তে ঘুরে আসেন। তবে ভোট মরসুমে সে সুযোগ হয়নি। তবে ভোট মিটতেই গিয়েছিলেন সেখানে। রাজহাসেরা তাঁকে দেখে ডানা মেলে ছুটে এসেছে তাঁর হাতে দানা খাওয়ার বাসনায়। গাছে লিচু ধরেছে। আমগাছও আছে।

প্রচারের দিনগুলিতে বড্ড তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হচ্ছি‌ল। এখন অবশ্য সেই চাপ নেই। এখনকার রুটিন একটু ঢিলেঢালা। বিছানা ছাড়তে সাড়ে ৭টা-৮টা বেজে যাচ্ছে। তরিবত করে ‘কোল্ড মিল্ক’ খাচ্ছেন।

ভোটের ফল নিয়ে চাপ নেই? জোটের ভরা বাজারেও ‘ডাক্তারবাবু’ কিন্তু কনফিডেন্ট। জানিয়ে দেন, ‘‘মানুষ পাশে আছে। মানুষের ভরসাই আমার গলার জোর বাড়াচ্ছে। মার্জিন আমার বাড়বে। অকারণে টেনশন করব কেন।’’ বিকেলে শ্রীরামপুরের বটতলায় পার্টি অফিসে অবশ্য দলীয় কর্মীদের সঙ্গে টুকটাক আলোচ‌নায় ‘ডাক্তারবাবু’র কাটাছেঁড়া অবশ্য চলছেই।

বিজেপি-র টিকিটে শ্রীরামপুরে দাঁড়িয়েছিলেন দলের জেলা সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য। পেশায় আইনজীবী। প্রচারের জন্য ছুটতে গিয়ে পেশার দিকে নজর দিতে পারেননি। এখন ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলছেন‌। টিভিতে খবর দেখছেন। চুটিয়ে খবরের কাগজ পড়ছেন। দুই প্রতিপক্ষের মতো তিনিও ভোটের ফল নিয়ে সে ভাবে মাথা ঘামাতে নারাজ। গলায় আত্মবিশ্বাস। যদিও দলের ছেলেদের সঙ্গে বুথ ধরে ধরে ভোটের হাল-হকিকত যাচাই করতে ভুলছেন না।

ফলের জন্য টেনশন হলেও অবশ্য কিছু করার নেই। ফল যে এখন বাক্সবন্দি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 politics west bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE