Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পক্ষপাতের নালিশে ওসি বদল কমিশনের

কয়েক দিন ধরেই অভিযোগ জানাচ্ছিল বিরোধীরা। শেষমেশ ভোটের আগের দিন দুর্গাপুর থানার ওসি সুজিত মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। রবিবারই আবার স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিতে দুর্গাপুরে এডিসিপি-র (পূর্ব) কাছে স্মারকলিপি দেন বাম ও কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা।

সুজিত মুখোপাধ্যায়।

সুজিত মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা,
দুর্গাপুর: শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩১
Share: Save:

কয়েক দিন ধরেই অভিযোগ জানাচ্ছিল বিরোধীরা। শেষমেশ ভোটের আগের দিন দুর্গাপুর থানার ওসি সুজিত মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। রবিবারই আবার স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিতে দুর্গাপুরে এডিসিপি-র (পূর্ব) কাছে স্মারকলিপি দেন বাম ও কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনে ওসি সুজিতবাবুর বিরুদ্ধে বাম ও কংগ্রেস জোটের তরফে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জানানো হয়। কমিশন সে ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। সেই রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওসিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কমিশন সূত্রের খবর, শুক্রবার দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ মজুমদারের সমর্থনে রোড-শো করেন সাংসদ অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। সে দিন বিকালে ট্রাঙ্ক রোড এলাকা থেকে রোড-শো শুরু হয়। সিপিএমের অভিযোগ, প্রদীপবাবু ও শতাব্দীর হুডখোলা গাড়ির পিছনে শ’খানেক মোটরবাইক নিয়ে মিছিল করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। ছিল বেশ কিছু টোটোও। এ ভাবে মোটরবাইক মিছিল করে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা মানুষকে আতঙ্কে রাখার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করে সিপিএম।

কমিশনের একটি সূত্রে জানা যায়, মোটরবাইক মিছিলের অভিযোগ পেয়ে ওসির কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। ওসি তাঁর রিপোর্টে এই ধরনের মিছিলের কথা অস্বীকার করেন। এর পরেই নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চায় কমিশন। তাঁদের দেওয়া রিপোর্টের সঙ্গে ওসির রিপোর্টের ফারাক থাকায় কমিশনের নজরে পড়ে যান সুজিতবাবু।

শুধু মোটরবাইক মিছিলের ঘটনা নয়, তার আগেও ওসি সুজিতবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। দলের নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর মতো পোশাকের ব্যবস্থা করেছেন ওসি। ভোটের দিন সেই পোশাকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আড়ালে শাসক দলের হয়ে ওই সিভিক ভলান্টিয়াদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে কমিশনে অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া সুজিতবাবুর বিরুদ্ধে শাসক দলের হয়ে অন্য পুলিশ আধিকারিকদের প্রভাবিত করার অভিযোগও এনেছিল সিপিএম। শেষ পর্যন্ত ভোটের ঠিক আগে রবিবার ওসি-কে সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে কমিশন। তাঁর জায়গায় থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেকেন্ড অফিসার অসীম মজুমদারকে।

সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, ‘‘ওই অফিসার ভোটের সময়ে দায়িত্বে থাকলে স্বচ্ছ নির্বাচন অসম্ভব। সে কারণেই আমরা অভিযোগ জানিয়েছিলাম কমিশনে।’’ পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা তা পালন করেছি।’’ তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওসি বদল নিয়ে কিছু বলব না। তবে বিরোধীরা কমিশনের কাছে পরপর অভিযোগ জানিয়েছে, যার কোনও ভিত্তি নেই।’’

এর মধ্যে শনিবার রাতে অর্জুনপুর এলাকায় ঘেরাও হন কংগ্রেস জোট প্রার্থী বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। তৃণমূলের অভিযোগ, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রচার করছিলেন বিশ্বনাথবাবু। যদিও প্রার্থীর দাবি, তিনি দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সে দিনই বেনাচিতি এলাকায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে বাম ও কংগ্রেসের কর্মীদের হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। সিপিএমের অভিযোগ, পুলিশ অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা না বলে অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলে এলাকা ছাড়ে। এ ছাড়াও শাসক দলের লোকজন ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ সিপিএমের।

রবিবার এই সব ঘটনার প্রতিবাদে এডিসিপি (পূর্ব)-র দফতরে স্মারকলিপি দেন বাম-কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বনাথবাবুর বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষ যাতে ভোট দিতে না পারেন সে জন্য নানা এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল।’’ সিপিএম নেতা দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিতে আমরা বারবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছি। তার পরেও এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।’’ তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে। মানুষ সব দেখছেন। ভোটবাক্সে জবাব দেবেন তাঁরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election commission oc Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE