Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পান থেকে চুন খসলেই শাস্তি, বার্তা দিল বদলি

রোধীরা নির্বাচন কমিশনের কানে তুলেছিল, গ্রামের ভিতরে ভিতরে ঢুকছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। সরকারি জায়গা থেকে পোস্টার-ব্যানার খোলার ব্যাপারেও ঢিলেমি দেখা যাচ্ছে।তারই জেরে বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায়কে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যিনি মাত্র মাস আড়াই আগে কাজে যোগ দিয়েছিলেন এই মহকুমায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

রোধীরা নির্বাচন কমিশনের কানে তুলেছিল, গ্রামের ভিতরে ভিতরে ঢুকছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। সরকারি জায়গা থেকে পোস্টার-ব্যানার খোলার ব্যাপারেও ঢিলেমি দেখা যাচ্ছে।

ব্যস, এটুকুই।

তারই জেরে বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায়কে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যিনি মাত্র মাস আড়াই আগে কাজে যোগ দিয়েছিলেন এই মহকুমায়। জেলার এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘পান থেকে চুন খসলেই যে এ বার শাস্তির কোপ ঘাড়ে পড়বে, এই বদলি সেই বার্তাই দিল। এ বার সকলকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’’ প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এ বার ভোট যে অন্য রকম হতে চলেছে, তা কমিশনের এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকেই ক্রমে পরিষ্কার হচ্ছে।’’

নির্বাচন কমিশনের এই তৎপরতায় সন্তুষ্ট বিরোধীদের একাংশ। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ ঘোষ জানান, ক’দিন আগেই তাঁরা কমিশনকে জানিয়েছিলেন, প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে বাহিনীর টহল চোখে পড়ছে না। বাহিনীকে নিয়ে বহু এলাকায় ঢুকছেই না পুলিশ। সরকারি দেওয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি, পঞ্চায়েত অফিসে এখনও ঝুলছে শাসক দলের পোস্টার, ব্যানার, সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি। তবে এসডিপিও-র নামে সরাসরি কোনও অভিযোগ তাঁরা জানাননি বলেও মানছেন পঙ্কজবাবু।

তবে বিজেপি অবশ্য নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ জানায়নি কমিশনে কাছে। দলের নেতা কেডি বিশ্বাসের কথায়, ‘‘উনি সম্প্রতি এসেছিলেন। ভাল কাজই করছিলেন। কোনও অদৃশ্য কারণে তিনি বদলি হলেন, তা নিয়ে আমরা বিস্মিত।’’

কংগ্রেস অবশ্য কমিশনের ভূমিকায় পুরোপুরি খুশি নয়। কারণ, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ আরও অনেক পুলিশ কর্মী থাকা সত্ত্বেও কেন মাত্র একজনকেই বদলি করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তারা। বনগাঁ শহর কংগ্রেসের সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দ বলেন, ‘‘এ তো মাছ না পেয়ে ছিপে কামড় হল! কেন ওই এসডিপি ক’দিন আগে এলেন, কেনই বা তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল, তা স্পষ্ট নয়। বনগাঁ মহকুমায় আরও বহু পুলিশ অফিসার আছেন, যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে শাসক দলের হয়ে কাজ করে আসছেন। তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করার দরকার ছিল।’’

এসডিপিও বদলি নিয়ে বিরোধীদের একাংশের মধ্যে অন্য গুঞ্জনও আছে। এক সময়ে হাবরার আইসি ছিলেন অনিলবাবু। সে সময় থেকেই হাবরার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের কাছে অজানা নয়। কাজেই জানুয়ারি মাসে সোনারপুর থানা থেকে বনগাঁয় বদলি হয়ে আসার পরে বিরোধীরা বলাবলি করেছিল, ভোটের মুখে শাসক দলের ‘আস্থাভাজন’ একজন অফিসারকে জেনেবুঝেই আনা হল। এই বদলির পিছনে জেলার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রীরও ভূমিকা ছিল বলে দাবি বিরোধী নেতৃত্বের একাংশের।

জ্যোতিপ্রিয়বাবুর এ দিনের সং‌ক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘নির্বাচন কমিশন তাদের কাজ করেছে। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’’ নির্বাচন কমিশনের কাছে তারা এ নিয়ে কোনও অভিযোগ জানায়নি বলেই তৃণমূলের অন্দরের খবর।

২০১৫ সালে দুর্গাপুজোর সময় থেকে বনগাঁয় এসডিপিও পদটি শূন্য ছিল। অনিলবাবু কাজে যোগ দেন জানুয়ারির শুরুতে। দীর্ঘ এই সময়টুকুতে জেলার সীমান্তবর্তী এই মহকুমায় এসডিপিও-র মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ কেন খালি, তা নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি। বিরোধীরা বারবারই আশঙ্কা করেছে, যে কোনও সময়ে বড় ধরনের অপরাধ ঘটে গেলে, সামাল দেওয়া মুশকিল হবে।

তেমন কিছু অবশ্য শেষমেশ হয়নি। এসডিপিও পদে নতুন অফিসার যোগ দেওয়ায় প্রাথমিক ভাবে স্বস্তিতে ছিলেন বনগাঁবাসী। চোলাই মদের বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সচেতনতা শিবির শুরু করেছিলেন অনিলবাবু। তাঁরই উদ্যোগে কিছু দিন ধরে এলাকায় বেআইনি মোটর বাইক, গাড়ি ধরপাকড় বেড়েছিল। এমনকী, পুলিশ কর্মীরাও হেলমেট না পড়ে মোটর বাইক চালালে ধরা পড়বেন বলে হুঁশিয়ার করেন অনিলবাবু। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশি সক্রিয়তা বেড়েছিল তাঁর সামান্য ক’দিনের কার্যকালে। কাজে যোগ দেওয়ার মাত্র আড়াই মাস বাদে বদলি নিয়ে কিছু বলবেন? অনিলবাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘এখনও কমিশনের নির্দেশ হাতে পাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE