তখনও চলছে কানঘেঁষা লড়াই। — নিজস্ব চিত্র
হলুদ পতাকাটায় সবজেটে একটা টেবিল— দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে, জৈষ্ঠ্যের হাওয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে এক টুকরো ব্রাজিল।
বাঁশের আগায় উড়ন্ত পতাকার কোণে কপালের গাম মুছে হুমায়ুন কবীর বলছেন, ‘‘প্রথম রাউন্ডে পিছিয়ে গেলাম, আর মেক-আপ হল না বুঝলেন!’’
বোঝা গেল, কামনগর পঞ্চায়েতটা এ বারও তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছে না। বছর দেড়েক আগে, যে উপ নির্বাচনে হেরে তৃণমূলে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছিলেন তিনি, সেই ভোটেও গঙ্গাপাড়ের ওই কামনগরের ২২ বুথে প্রায় সাড়ে চার হাজার ভোটে পিছিয়ে ম্যাচ খুইয়েছিলেন তিনি। এবং বোঝা গেল, তৃমূলের এই ভরা বাজারেও কামনগর এখনও কংগ্রেসের শেষ দূর্গ।
রেজিনগরের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের রবিউল ইসলাম, যাঁর কাঁধে ভর করে এ বারও নিশানায় তির গেঁথেছেন অধীর চৌধুরী, মনে করিয়ে দিচ্ছেন— ‘‘কামনগরে আমরা কখনও হারি না। হুমায়ুন ভুলে গিয়েছে, ও যে বার কংগ্রেসের টিকিয়ে রেজিনগর ছিনিয়ে নিয়েছিল, সে বারও লিড দিয়েছিল ওই কামনগরই।’’ কামনগরেই তাঁর জয় আর সেখানেই তাঁর কবর!
একদা তাঁর ‘দাদা’, অধীরের সঙ্গে মন কষাকষি করে দল ছেড়ে সটান মহাকরণে মন্ত্রীত্ব জুটিয়ে ফেলেছিলেন হুমায়ুন। উপ নির্বাচনে হেরেও দিদির স্নেহে মাস তিনেক দফতরহীন মন্ত্বী থেকে গিয়েছিলেন তিনি। তবে, শক্তিপুর গ্রামের ডাকাবুকো ছেলেটার ঠোঁট বড় কাঁটা। দলের নেতাদের ‘বেচাল’ দেখে বেফাঁস কথা বলে তাই দল থেকে বহিষ্কৃত হতেও সময় নেননি। তারপর থেকে তিনি একা। হুমায়ুন বলতেন, ‘‘রেজিনগরেই আমার জীবন, এখানেই আমার মরণ, এটা আমার আঁতুরঘর!’’ কংগ্রেস-তৃণমূল এবং এই একাকীত্বের ওঠা-পড়া গ্রাফের মাঝে সেই রেজিনগরেই এ বার নির্দল হয়েও জয়ের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। হল না, আটকে দিল কামনগর।
তবে, অনেক দূর উড়েছিল তাঁর হলুদ জমিতে সবুজ টেবিল। ভোট পেয়েছেন ৭৪ হাজার ২১০। রবিউলের (৭৯ হাজার ২১০) চেয়ে মাত্র ৫ হাজার ৫৬০টি কম। তাহলে এ বার কী করবেন?
তাঁকে নিয়ে ভোটের মুখে তৃণমূলের আগ্রহ কম ছিল না। আগ্রহ দেখিয়েছিলেন খোদ অধীরও। গোপনে দু’তরফেই বৈঠকও হয়েছিল। এমনতী এক পা বাড়িয়ে দু’পা পিছিয়ে গিয়েছিল বিজেপি’ও।
হুমায়ুন অবশ্য বলছেন, ‘‘দেখুন য়া দেখছি, কংগ্রেস মুর্শিদাবাদে তার আসন সংখ্যা ধরে রাখলেও রাজ্যে তারা যে বড় শক্তি নয়, এ বারও স্পষ্ট। আর বামেরা ক্রমশ ক্ষযিষ্ণু একটা ফ্রন্ট।’’ তাহলে কী বিজেপি?
হুমায়ুন বলছেন, ‘‘দেখি না কী হয়, কয়েকটা দিন গড়াক। তার পরে না হয় ভেবে দেখব।’’
জেলা না হোক , রেজিনগরে তিনি যে একটা ‘শক্তি’, জেলা কংগ্রেসের নেতারাও তা মেনে নিচ্ছেন। জয়ের কাছাকাছি গিয়েও ফিরে আসা হুমায়ুনের জন্য তাই কে খুলে রাখে দুয়ার, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy