Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ইমানির ইমান নিয়ে দাঁও মারছে কংগ্রেস

এক দিন দল ছেড়ে নতুন ঘরে এসেছিলেন। এখন সেই ঘরের মেঝে ঠকঠক করে কাঁপছে। তিনি ইমানি বিশ্বাস। বিড়ি মালিক থেকে বিধায়ক। ২০১১ সালে। বছর ঘুরতেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে।

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫১
Share: Save:

এক দিন দল ছেড়ে নতুন ঘরে এসেছিলেন। এখন সেই ঘরের মেঝে ঠকঠক করে কাঁপছে।

তিনি ইমানি বিশ্বাস। বিড়ি মালিক থেকে বিধায়ক। ২০১১ সালে। বছর ঘুরতেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে।

কিছু দিন আগেও কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত সুতিতে এ বার ইমানির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের পরিচিত মুখ হুমায়ুন রেজা। দোসর সিপিএম। আর তার জেরেই সুতিতে মানরক্ষার লড়াইটা যথেষ্ট কঠিন হয়ে পড়েছে ইমানির কাছে।

হুমায়ুন রেজা হাইস্কুলের শিক্ষক হিসেবে অবসর নিয়েছেন। তাঁর বাবা লুতফল হক বিড়ি শ্রমিক আন্দোলনে সুতিতে পরিচিত নাম। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত দু’বার জঙ্গিপুরে সাংসদ হয়েছেন। পাঁচ বার বিধায়ক হয়েছেন। হুমায়ুনও ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে বিধায়ক হয়েছেন। ২০০৬ সালে হেরে রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছিলেন। এ বার কংগ্রেস তাঁকে ডেকে এনে ফের মনোনয়ন দিয়েছে।

এ নিয়ে অবশ্য কংগ্রেসের ভিতরে ক্ষোভও ছিল। প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হতেই দলের ব্লক সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাসের কাছে এসে ক্ষোভের আঁচ টের পেয়েছিলেন তাঁর মাস্টারমশাই হুমায়ুন। দু’সপ্তাহ পরে অধীর চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে। শনিবার দেখা গেল সেই মাস্টারমশাইয়ের হয়ে বহুতালির সভায় গলা ফাটাচ্ছেন আলফাজুদ্দিন। বলছেন, “গরু পাচার বন্ধের জন্য সুতিতে তৃণমূলকে হারাতে হবে। বিশ্বাসঘাতকতার বদলা নিতে হবে।”

ইমানি বিশ্বাস তখন সদলবলে লক্ষীপুরে বাড়ি-বাড়ি ঘুরছেন। তাঁর আসন বাঁচাতে ইতিমধ্যে শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায় এবং খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে সভা করে গিয়েছেন। তাঁর আশা ছিল, বামফ্রন্টের তরফে আরএসপি প্রার্থী দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ত্রিমুখী যুদ্ধে ফয়দা পাবেন। কিন্তু বিধি বাম। শনিবার সকালে আরএসপি প্রার্থী নিজামুদ্দিন আহমেদকে দেখা গেল বাজিতপুরের রাস্তায় প্রচারে প্রায় নিঃসঙ্গ, অতীতে সুতিতে যা কখনও ঘটেনি।

সুতিতে এখন চায়ের দোকান থেকে দাড়ি কাটার সেলুন, ঘোড়ার গাড়ি হোক বাস— সর্বত্রই ইমানির ইমান নিয়েই চর্চা চলছে।

ইমানির দলবদলের পরেই সুতিতে তৃণমূল কিছুটা গতি পেয়েছিল। ২০১৪ সালে তারা ২১ শতাংশ ভোট পায়। বিজেপির ভোটও বাড়ে। দুই দলের ২৪ শতাংশ ভোটবৃদ্ধি কংগ্রেস ও বাম ভোটে ব্যাপক থাবা বসায়। সেই হিসেবই তৃণমূলকে বাড়তি ভরসা জোগাচ্ছে। যদিও সিপিএমের ভোট যদি আরএসপি-র বাক্সে না গিয়ে কংগ্রেসের বাক্সে যায়, তবে তা ধরাছোঁয়ার বাইরেই চলে যাবে।

সুতির ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাস বলছেন,“সুতিতে গরু পাচারের রমরমা বেড়েছে। অথচ বিধায়ক হিসেবে ইমানি সাহেব নীরব থেকেছেন। অরঙ্গাবাদে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বিড়ি শ্রমিক হাসপাতালের অচলাবস্থা কাটাতে তিনি উদ্যোগী হননি। বিড়ি শ্রমিকদের জন্যও কিছু করেননি। তার থেকেও বড় অভিযোগ, দলত্যাগ করেও বিধায়ক পদে ইস্তফা দেননি ইমানি।”

যা শুনে সুতি ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ওবাইদুর রহমান বলছেন, “গরু পাচারের পিছনে রয়েছে পুলিশ ও বিএসএফের দুর্নীতি ও নিষ্ক্রিয়তা। বিরোধীরা এ নিয়ে বার বার বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে মানুষকে। কিন্তু বিধায়ক হিসেবে ইমানি বরাবরই মানুষের পাশে থেকেছেন। সেখানে গত আট বছর কোথায় ছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী হুমায়ুন রেজা? দলের কর্মীরা বিপদে পড়লেও সে দিকে ফিরেও তাকাননি তিনি। আজ ভোটের সময় মানুষের কাছে এসেছেন ভোট চাইতে। সুতির মানুষ কিন্তু এত বোকা নন।’’

সুতি ১ ব্লকের প্রায় অর্ধেকটাই (৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত) পড়ে এই বিধানসভার মধ্যে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জিয়ারত আলি অতীতের ভোটের অঙ্ক দেখিয়ে বলছেন, “২০১৪ সালে যা ঘটেছিল ভুলে যান। কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি থেকে দু’বছরে সুতিতে প্রচুর লোক দলবদল করে তৃণমূলে এসেছেন।’’ তাঁর দাবি, সুতিতে আরএসপিরও প্রার্থী রয়েছে। সিপিএম কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করলেও ২০১৪ সালের দুই দলের পাওয়া সম্মিলিত ভোট ৬১ শতাংশ থেকে অর্ধেকে নেমে আসবে। কিছুটা যাবে আরএসপিতে। বাকি সবটাই তৃণমূলে। ফলে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত। জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ইমানিও। তিনি বলছেন, ‘‘সবসময় মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থেকেছি। ফলে মানুষও আমার পাশে আছেন।’’

সুতিতে আরএসপির প্রার্থী নিজামুদ্দিন আহমেদ স্থানীয় বাসিন্দা। বাম জমানার শুরুতেই টানা দু’বার জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি হয়েছেন। বিধানসভায় প্রার্থী এই প্রথম। কিন্তু শুরুতেই যা অবস্থা তাতে তাঁর দলের লোকেরাই তেমন ভরসা পাচ্ছেন না। তবে নিজামুদ্দিন কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নন। তিনি বলছেন, ‘‘এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’ আরএসপি’র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জানে আলম বলছেন, “নির্বাচনে তো হার-জিত থাকেই। কিন্তু সুতির ঘটনায় বামফ্রন্ট শক্তিশালী হবে না।’’ যা শুনে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অমল চৌধুরী সাফ বলছেন, ‘‘সূর্যকান্ত মিশ্র বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলকে হারাতে জোটের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা সেই কথাই মেনে চলছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election Assembly Election Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE