বছর পাঁচেক বন্ধ থাকা দু’টি দলীয় কার্যালয় খুলে আগে চমকে দিয়েছিল সিপিএম। এলাকায় বামেদের সাম্প্রতিক বিশাল মিছিলও কপালে ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূলের। এ বার নানুরের চণ্ডীদাস কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) ছেড়ে এসএফআইয়ে যোগ দিল কলেজের গোটা ছাত্র সংসদ। আট বছর যেখানে টিএমসিপি-র হাতেই ছিল ছাত্র সংসদের ক্ষমতা, সেখানে ভোটের আগে পট বদলের পিছনে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই দেখছেন জেলা তৃণমূলের একাংশ।
১৯৭২-এ নানুরের খুজুটিপাড়ায় স্থাপিত ওই কলেজের ছাত্র সংসদ ২০০৮ পর্যন্ত ছিল এসএফআইয়ের দখলে। ওই বছর টিএমসিপি ক্ষমতায় আসার পরে আর ছাত্র সংসদের ভোট হয়নি। মনোনয়নের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ গঠন করেছেন তৃণমূল নেতারাই। কলেজের বিদায়ী ছাত্র সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জানুয়ারিতে। বিধানসভা ভোটের কারণে নতুন ছাত্র সংসদ গড়া হয়নি। এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে সাধারণ সম্পাদক মফুজউদ্দিন শেখ, সহ-সভাপতি মুন্সি আব্দুর রজ্জাক-সহ ১৯ সদস্যের বিদায়ী ছাত্র সংসদের ১৪ জনই এসএফআইয়ে যোগ দেন। তাঁদের হাতে সংগঠনের পতাকা তুলে দেন এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি শতদল চট্টোপাধ্যায়।
মফুজউদ্দিনদের বক্তব্য, ‘‘স্বপ্ন নিয়ে টিএমসিপি করতে এসেছিলাম। কিন্তু দেখলাম, দলকে জেতাতে জান লড়িয়ে দিয়েও টাকা না দিলে চাকরি জোটে না। অথচ, নেতাদের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়েরা সহজেই চাকরি হাতিয়ে নিয়েছে। তাই সংগঠন বদলাচ্ছি।’’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কলেজের কেউ-ই সংগঠন ছাড়েননি বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। বিধায়ক গদাধর হাজরার প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভোটের প্রচারে ব্যস্ত রয়েছি। কে, কোথায় গেল, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই।’’ আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘এ সব অপপ্রচার।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পিছনে এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা কাজল শেখের ‘হস্তক্ষেপ’ দেখছেন দলেরই কিছু নেতা। তাঁদের যুক্তি, খুজুটিপাড়া কলেজ ‘দখল’ করার পিছনের প্রধান কারিগর কাজল। তাঁর দাপটে ২০১১-র পর থেকে নানুর এলাকায় দেখাই যেত না সিপিএমকে। গত বিধানসভা থেকে গত পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েন কাজল ও বিধায়ক গদাধর। কিন্তু বালি-ঘাট, পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ-সহ নানা ব্যাপারে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব মাত্রা ছাড়ায়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দূর করতে দু’জনকে এক টেবিলে বসান দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। লাভ হয়নি। গদাধরের ফের প্রার্থী হওয়ায় কাজলের আপত্তি ছিল। কিন্তু দল গদাধরকেই প্রার্থী করায় অর্ন্তঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও ছাত্র সংসদ গঠনে কাজলদার ‘ভূমিকা’ মানলেও মফুজউদ্দিনরা দাবি করেন, তাঁদের সংগঠন বদলের সিদ্ধান্তে কাজলের ভূমিকা নেই। কাজলের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর এক অনুগামীর দাবি, ‘‘দাদা ওই ছাত্র সংসদের বিপদে-আপদে অভিভাবকের মতো পাশে থেকেছেন। আজ, দাদাকে এলাকার বাইরে কাটাতে হচ্ছে। সেই সুযোগে সিপিএম একের পরে এক থাবা বসাচ্ছে।’’ যদিও জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতার বক্তব্য, নানুরের খুজুটিপাড়া ও জলুন্দিতে ২০১১-য় বন্ধ হয়ে যাওয়া সিপিএম কার্যালয় ফের খোলা, এলাকায় বামেদের বড় মিছিল এবং চণ্ডীদাস কলেজের ছাত্র সংসদে পট বদল— ম্যাজিক নয়। তাঁদের দাবি, ‘‘এলাকায় বামেদের আচমকা শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে বলে ভাবলে ভুল হবে। এ সবই দলের ভিতরের ঝামেলার ফল। ভোটের সময়ে ভোগাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy