Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘মমতাদি-ই অভিষেককে পুরো পয়সা দিচ্ছেন’, পড়ুন কী বলছে নারদ

সোমবার নারদ নিউজের পক্ষ থেকে শহরের মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাদের কথোপকথনের অসম্পাদিত ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে রেকর্ড করা সেই কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ তুলে দেওয়া হল। গোপন ক্যামেরায় তোলা এই ফুটেজের যথার্থতা অবশ্য আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তৃণমূলের তরফ থেকেও একাধিক বার দাবি করা হয়েছে, এই ফুটেজ ভুয়ো। কিন্তু, ফুটেজে যা শোনা গিয়েছে তা এখানে হুবহু তুলে দেওয়া হল। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে শোভন তাঁর অফিসে বসে।নারদ নিউজ: স্যার, এতে চার লাখ আছে। আগামিকাল আরও এক লাখ দিয়ে দেব। ইকবাল: আমি, আমি দিয়ে দেব। আমাকে দিও, আমি দিয়ে দেব।(আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার প্রসঙ্গ উঠল।) শোভন: (টাকা তোয়ালেতে মুড়ে রাখতে রাখতে) ও এই সমস্ত করছে না, কারণ মমতাদি পুরোটাই ওর দেখে নিচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ১৯:২২
Share: Save:

ইকবাল: টিএমসি কত সিট পাবে? অম্লান?

অম্লান (মেয়রের আপ্ত সহায়ক): হ্যাঁ?

ইকবাল: কত সিট পাবে?

অম্লান টিএমসি? দেখুন..., আমি বলছি কি... ২৬টা শিওর টিএমসি। ৩টে শিওর কংগ্রেস। ২৬ আর ৩-এ ২৯। বাকি ১৩টা সিট... কে পাবে কেউ বলতে পারবে না, কোনও বাপের ব্যাটার বলার সাধ্য নেই। কোথাও ভোট কাটাকাটিতে সিপিএমও বেরিয়ে যেতে পারে। এমনকী এমন হতে পারে সিপিএম বেরিয়ে গেল, হতেই পারে। এমন কাটাকুটি বিচ্ছিরি ব্যাপার দাঁড়াবে না...

ইকবাল: ২৬টার মধ্যে কোন কোন কনফার্ম আছে?

অম্লান খুব সিম্পল হিসেবে একের বিরুদ্ধে এক লড়াই হলে এ বার বামফ্রন্টের সিট পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, দু’একটা ছাড়া। যেমন, সিম্পল কথা, ধরুন বসিরহাট— আপনি বলুন তো কে পাবে? কেউ বলতে পারবে না? কী করে বলবেন আপনি। কারণ বিজেপি কার ভোট কাটবে কেউ জানে না। যেমন, হাও়ড়া। হাওড়া সবাই বলছে টিএমসি হারবে তো? মানে একটু টাফ হবে তো বিজেপির জন্য? আমি বলছি, দেখুন, হাওড়া লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্যান্ডিডেট দিল না। তৃণণূল, কংগ্রেস আর সিপিএমের মধ্যে, কংগ্রেসটা বাদ দিন, তৃণণূল আর সিপিএমের মধ্যে ডিরেক্ট ফাইট হল। ঠিক আছে? তৃণমূল জিতল কত ভোটে? মাত্র ২৭ হাজার ভোটে। এমনকী উত্তর হাওড়ায় সিপিএম এগিয়ে গেল। প্রায় ৪০ মিনিট সিপিএম এগিয়ে ছিল তো, উত্তর হাওড়ার দিকটায়? তার পর দক্ষিণ হাওড়া দিকটাতে গিয়ে প্রসূনবাবু জিতলেন। পুরসভা ভোটে বিজেপি ক্যান্ডিডেট দিল। ক্ষতি কার হল? কার ক্ষতি বেশি হল? সিপিএমের বেশি ক্ষতি হল সিপিএম এক ধাক্কায় ৪৯ থেকে নেমে ১৩ হয়ে গেল। মানে বিজেপি সব সময় তৃণমূলের ভোট কাটবে তা তো নয়। সিপিএমেরও কাটবে।

ইকবাল: আচ্ছা শুন...

অন্য ব্যক্তি: দোলা?

অম্লান দোলাদি বেরিয়ে যাবে।

ইকবাল: কল্যাণ?

অম্লান: কল্যাণদা বেরিয়ে যাবে। খুব, হয়তো ওই মার্জিন আর থাকবে না, বেরিয়ে যাবে।

ইকবাল: ডায়মন্ড হারবার? (অভিষেকের কেন্দ্র)

অম্লান: বেরিয়ে যাবে।

ইকবাল: দু’-আড়াই লাখ যাবে না?

অম্লান: দু’-আড়াই লাখ না হোক, একের উপরে যাবে। যাদবপুরও ওই ৫০-৬০।

ইকবাল: ফাইট আছে না?

অম্লান: ফাইট আছে, ৫০-৬০। কারণ, সুজনবাবু আর কিছু না হোক, অ্যাজ এ পলিটিশিয়ান তো এক্সপার্ট লোক।

ইকবাল: বারাসত, বারাসত?

অম্লান: বেরিয়ে যাবে। বারাসত পিসি সরকার নিজের কবর নিজেই খুঁড়ে দিয়েছে, ও বাদ দিন। ভুলভাল বলে...

ইকবাল: সৌগত রায়?

অম্লান: সাউথ বেঙ্গলে আমার মনে হয় না, শুনুন না স্যার, সাউথ বেঙ্গলে বসিরহাট ছাড়া আর কোথাও চিন্তা নেই।

ইকবাল: হ্যাঁ?

অম্লান: সাউথ বেঙ্গলে ওই বসিরহাট ছাড়া, আর কৃষ্ণনগরে কিছুটা...

ইকবাল: তাপসের?

অম্লান: তাপসের... সিপিএম হবে না, জলু। তাপসদা আর জলুদা। জলুদার একটা পার্সোনাল ইয়ে আছে তো...

ইকবাল: (নারদ নিউজের প্রতিনিধিকে বলছেন) ইনি মেয়রের পিএ।

নারদ নিউজ: ওহ।

ইকবাল: ওএসডি, মেয়রের।

নারদ নিউজ: ঠিক আছে, ঠিক আছে। (নারদ নিউজের প্রতিনিধি অম্লানের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন) হাই, আমি সন্তোষ। (হ্যান্ডশেক।)

(এর পর মেয়রের চেম্বারে এবিপি আনন্দে হেডলাইন চলতে শুরু করল। সবার নজর টিভির দিকে।)

ইকবাল: (হেডলাইন শুনে বললেন) কী হল? সিবিআই হয়ে গেল? সিবিআই হচ্ছে সারদায়?

অম্লান: একটু পরে হবে তো শুনানি।

(স্যার আসছেন, স্যার আসছেন, বলে বেরিয়ে গেলেন অম্লান। আবার ঢুকলেন মেয়রের চেম্বারে। এবিপি আনন্দের খবর কিছুক্ষণ দেখে বললেন) এবিপি আনন্দ হান্ড্রেড পার্সেন্ট অ্যান্টি করে দেবে।

ইকবাল: আমাদের না?

ইকবাল: এবিপি আনন্দের ভিউয়ারশিপ (দর্শক সংখ্যা) সাংঘাতিক।

ইকবাল: হ্যাঁ?

অম্লান: এবিপি আনন্দের বেঙ্গলি ভিউয়ারশিপ অনেক বেশি না! প্রত্যেক মানুষ একবার বাড়ি গিয়ে, অফিস থেকে ফিরে, প্রফেশন থেকে ফিরে এই চ্যানেলটা এক বার খোলেই খোলে। এটাকে আপনারা একদম পুরো অ্যান্টি করে রাখলেন। একটুখানি জোড়াতালি দিয়ে রেখেছিলেন, কী হল আবার আপনাদের কে জানে...

ইকবাল: কংগ্রেস একশোয় যাবে? (লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ১০০ আসন পাবে কি না?)

অম্লান: হ্যাঁ, হ্যাঁ... কংগ্রেসকে কেউ চেনে না। ও জিনিস পার্টি। (লোকসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য ফল নিয়ে বেশ কিছু ক্ষণ আলোচনা চলল। তার পর মেয়র চেম্বারে এলেন। কোনও এক ব্যক্তিকে দেখে বললেন, শুভ নববর্ষ। একটু পরে নারদ নিউজের প্রতিনিধি এবং ইকবাল আহমেদকে নিয়ে চেম্বারের পিছনের দিকে অ্যান্টি-চেম্বারে ঢুকে গেলেন মেয়র।)

নারদ নিউজ: স্যার, এটা আমার কার্ড।

শোভন: হুঁ।

নারদা নিউজ: স্যার, আমরা ২৫-৩০টা কোম্পানির পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছি। বহুজাতিক সংস্থা সব। আমরা তাদের হয়ে লিয়াজঁয়িং করছি। বড় বড় সংস্থা। আমাদের মনে হয়েছে, এই ইলেকশনে টিএমসি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। আমরা আপনাদের সাপোর্ট দিতে চাইছি। অনেক কাজ আসছে। এবং আমরা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলাম। আমরা অনেকের সঙ্গেই দেখা করছি। এবং আপনার সঙ্গেও দেখা করতে চাইছিলাম। আমরা সাপোর্ট দিতে চাই বলেই দেখা করতে চাইছিলাম।

শোভন: আমি কী ভাবে আপনাদের... (অস্পষ্ট)।

ইকবাল: ওঁরা বিজেপিকেও করছে, আমাদেরও ফাইন্যান্স করবে। তুমি নিয়ে নাও। আর অভিষেকের সঙ্গে দেখা করিয়ে দাও। (অস্পষ্ট)

শোভন: অভিষেক এখন করবে না, অভিষেক করছে না।

ইকবাল: করছে না, না?

শোভন: না।

নারদ নিউজ: অভিষেক টাকা নেবেন না?

শোভন: আপাতত তো নেবে না। যদি ও বলে, আমি আপনাকে জানাব।

নারদ নিউজ: হ্যাঁ, হ্যাঁ। আপনি একটু কথা বলে নিন। আমি শুধু একটু মুখটা দেখিয়ে আসব, একটু বন্ধুত্ব করে আসব লিয়াজঁয়িং-এর জন্য। আপনি একটু কথা বলে নিন।

ইকবাল: ইলেকশন হয়ে যাক। (অস্পষ্ট) দাদাকে এক লাখ কালকে দিয়ে দিও। চার আছে। (টাকা বার করে শোভনের হাতে তুলে দেওয়া হল।)

নারদ নিউজ: স্যার, এতে চার লাখ আছে। আগামিকাল আরও এক লাখ দিয়ে দেব।

ইকবাল: আমি, আমি দিয়ে দেব। আমাকে দিও, আমি দিয়ে দেব।

(আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার প্রসঙ্গ উঠল।)

শোভন: (টাকা তোয়ালেতে মুড়ে রাখতে রাখতে) ও এই সমস্ত করছে না, কারণ মমতাদি পুরোটাই ওর দেখে নিচ্ছে।

নারদ নিউজ: (বাংলা বুঝতে না পেরে) কী বলছেন?

ইকবাল: মমতাদি-ই অভিষেককে পুরো পয়সা দিচ্ছেন।

নারদ নিউজ: না, না। আপনি শুধু ওঁর সঙ্গে আমার আলাপটা করিয়ে দিন।

ইকবাল: হ্যাঁ, আলাপটা করিয়ে দাও।

শোভন: ইলেকশনের পর আমি ওর সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দেব।

নারদ নিউজ: ভোটের পরে?

শোভন: হ্যাঁ। আপনি চিন্তা করবেন না। আমিই ওর নির্বাচনের কাজ দেখভাল করছি। আমি করিয়ে দেব।

নারদ নিউজ: ঠিক আছে।

ইকবাল: আচ্ছা ওই ডলার পেয়ে গেছে তো? ডলারটা দিয়ে দিয়েছি।

শোভন: হ্যাঁ, ওটা কত টাকা?

ইকবাল: ১ লাখ ৮৩ হাজার মানে কত হয়?

শোভন: দেখে আমাকে একটু টেলিফোনে বলো।

অন্য ব্যক্তি: রাজাকে বলে দিলেই হবে।

ইকবাল: রাজাকে বলে দেব।

শোভন: ঠিক আছে। (নারদ নিউজের প্রতিনিধির সঙ্গে হাত মিলিয়ে) যে কোনও কাজে প্রয়োজন পড়লেই আমাকে...

নারদ নিউজ: অবশ্যই, অবশ্যই। আসি স্যার।

আরও পড়ুন

‘সেকেন্ড ম্যান হ্যায় আফটার চিফ মিনিস্টার’, ববির আরও ভিডিও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE