ঢিল হাতে তাড়া সাংবাদিকদের। এখানেও পিছনে বিধায়ক সুজিত বসু। এ বারও দর্শক পুলিশ।— ফাইল চিত্র।
ঠিক করেছিলাম এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়াব না। বেশ অনেক দিন আগেই ঠিক করেছিলাম। কিন্তু সল্টলেকে পৌর নির্বাচন মাথাটা ঘুরিয়ে দিল। এমন বেপরোয়া সন্ত্রাস জীবনে দেখিনি। আগেও ভোটে কারচুপি দেখেছি। কিন্তু এ বার যা দেখলাম, তার নজির আমার মগজে অন্তত নেই।
১৯৯৬ সালে সুভাষ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বেলগাছিয়া পূর্ব কেন্দ্রে আমি কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলাম। সল্টলেক তখন বেলগাছিয়া পূর্বের মধ্যে। সকাল থেকে ভালই ভোট চলছিল। বেলা দু’টোর পর আর ভোট করতে দেওয়া হয়নি। তাতেও আমি প্রায় ৯৭ হাজারের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিলাম। সুভাষ চক্রবর্তীর ২৮ হাজারের মার্জিন আমি ৮ হাজারে নামিয়ে এনেছিলাম। সে বার গোটা রাজ্যে পরাজিত প্রার্থীদের মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি ভোট পাই। অনেক জয়ী প্রার্থীর চেয়েও বেশি পাই। বিভিন্ন কেন্দ্রে ৫০-৫৫ হাজার ভোট পেয়েও অনেক প্রার্থী জিতে গিয়েছিলেন। আমি হারলেও তাদের তুলনায় অনেক বেশি ভোট পাই। ২০০১ সালে দমদমে লড়তে গেলাম। দীর্ঘ দিনের দাপুটে বিধায়ক অজিত চৌধুরীর সঙ্গে লড়াই। আগের নির্বাচন অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে অজিত চৌধুরী জিতেছিলেন ৩৭ হাজারেরও বেশি ভোটে। সেই ব্যবধান টপকে আমাকে জিততে হবে। দমদম ধরে রাখার জন্য সিপিএমের শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীরা এক মাস ধরে চষে ফেললেন গোটা এলাকা। ভোটের দিন গোলমালও হল। ভোট লুঠের চেষ্টা হল। আমি খবর পেয়েই ছুটে গেলাম আক্রান্ত বুথে। আমার সঙ্গে শাসকের মাস্তান বাহিনীর তুমুল গোলমাল হল। কিন্তু, রিগিং আটকে গেল। সাড়ে ৩৭ হাজারের ব্যবধান টপকে আমি ২২৬ ভোটে জিতলাম।
সল্টলেকে শাসকের শাসানি সংবাদমাধ্যমকে। পিছনে বিধায়ক সুজিত বসু। দর্শক পুলিশ।— ফাইল চিত্র।
আগের জমানায় রিগিং-কারচুপি এই রকম ছিল। তৃণমূলের জমানায় আর কোথাও কোনও লাগাম নেই। কথা কাটাকাটি বা বচসায় তৃণমূলী লুম্পেনরা পিছু হঠার পাত্র নয়। তারা যে কোনও মূল্যে শান্তিপূর্ণ ভোট হওয়া আটকে দেবেই। বিধাননগর কর্পোরেশনের নির্বাচনের দিন বেলাগাম, বেপরোয়া হয়ে গুন্ডাবাহিনী দাপিয়ে বেড়াল গোটা সল্টলেকে। দাপিয়ে বেড়াল কেষ্টপুর, বাগুইআটি, তেঘরিয়া, কৈখালি জুড়ে। গলিতে গলিতে ভোটের আগের রাত থেকে বোমা পড়ছে, সবক’টা কমিউনিটি হলে বহিরাগত লুম্পেন বাহিনীর ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে, পুলিশ কিছুই করছে না। এজেন্টকে মেরে বার করে দিচ্ছে বুথ থেকে, ভোটারকে রাস্তায় ফেলে বুকে-পেটে লাথি মারছে, মেরে প্রার্থীর হাত ভেঙে দিচ্ছে। সবাই সব দেখেছেন টিভিতে। সল্টলেকের সেই রক্তাক্ত অবস্থার ছবি গোটা বাংলাই দেখেছিল সে দিন। যখন লুম্পেন বাহিনী বুঝতে পারল, তাদের তাণ্ডবের ছবি মিডিয়ার দৌলতে সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে, তখন বেপরোয়া হামলা শুরু হল সাংবাদিকদের উপরে।
গণতন্ত্রের এমন নির্লজ্জ হত্যা পশ্চিমবঙ্গে হবে, আগে ভাবিনি। সল্টলেকে প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়ল। কিন্তু, সল্টলেকের ক’টা লোক ঘর থেকে বেরিয়ে সে দিন নিজের ভোট নিজে দিয়েছিলেন?
এই পরিস্থিতির পর আর চুপ করে বসে থাকা যেত না। এই রাজ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটাই এখন বিপন্ন। এ বারের বিধানসভা ভোটে লড়াইটা তাই হারজিতের নয়। গণতন্ত্র বাঁচবে, নাকি শেষ হয়ে যাবে, তা নির্ধারণের লড়াই এ বার। এই লড়াইতে সরাসরি অংশ না নিলে ইতিহাস আমাকে ক্ষমা করত না। তাই মত বদলালাম। ঠিক করলাম লড়ব।
এ ছাড়াও বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা আমার ভোটে দাঁড়ানোর একটা বড় কারণ। সমঝোতা যে হচ্ছে, তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে সে দিন বৈঠক বসল। বিধানসভা নির্বাচন নিয়েই আলোচনা। আমিও ছিলাম। সোমেন মিত্র এবং অধীর চৌধুরী বললেন, অরুণাভ ঘোষ ভোটে না দাঁড়ালে খুব খারাপ বার্তা যাবে। আসলে আবদুল মান্নান এবং আমিই বাম-কংগ্রেস জোট চেয়ে সবচেয়ে জোরালো সওয়াল করছিলাম। জোট যখন হচ্ছে, তখন আমরা লড়াই থেকে সরে থাকলে, দৃষ্টিকটূ লাগে। তাই বিধাননগর থেকে লড়ছি। গণতন্ত্রের হয়ে লড়ছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy