Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিলিগুড়ি থেকে ভরকেন্দ্র সরে গেল কোচবিহারে

বাম জমানাই হোক বা তৃণমূল, এত দিন পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক ভরকেন্দ্র ছিল শিলিগুড়ি। অশোক ভট্টাচার্য থেকে গৌতম দেব, সকলেই এই শহরের মানুষ। এবং সকলেই ছিলেন নিজের সময়ে উত্তরবঙ্গে শেষ কথা।

গৌতম দেব ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

গৌতম দেব ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

বাম জমানাই হোক বা তৃণমূল, এত দিন পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক ভরকেন্দ্র ছিল শিলিগুড়ি। অশোক ভট্টাচার্য থেকে গৌতম দেব, সকলেই এই শহরের মানুষ। এবং সকলেই ছিলেন নিজের সময়ে উত্তরবঙ্গে শেষ কথা। এই প্রথম সেই ‘ট্র্যাডিশন’ ভেঙে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর তিনি তুলে দিলেন কোচবিহারের তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের হাতে। গৌতমবাবুকে নিয়ে এলেন পর্যটনে।

ফলে, শিলিগুড়ি লাগোয়া উত্তরকন্যার ‘কর্তা’ এ বার হবেন শ’দেড়েক কিলোমিটার দূরের বাসিন্দা রবিবাবু।

ছ’ফুটের উপরে লম্বা, কোচবিহারে দলের জেলা সম্পাদক রবি গত বার মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। পরে তাঁকে পরিষদীয় সচিবের দায়িত্ব দেন মমতা। কিন্তু কোর্টের কলমের খোঁচায় তা-ও চলে যায় বিশ বাঁও জলে। সে দিক থেকে গৌতম বরাবরই দলনেত্রীর কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এ বারের ভোটে ফল হয়েছে উল্টো। গৌতম নিজের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রে ফের জিতে এলেও দার্জিলিং জেলায় দলের ভরাডুবি ঠেকাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। অন্য দিকে, রবিবাবুর জেলায় দল নয়ের মধ্যে আটটি আসনেই জিতেছে। তৃণমূল অন্দরের খবর, এ বারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে গৌতমকে সরিয়ে দলনেত্রী বোঝালেন, উন্নয়নের পাশাপাশি দলও ঠিকঠাক সামলাতে হবে। না-পারলে প্রশাসনিক দায়িত্ব খর্ব করতে তিনি দ্বিধা করবেন না।

ফলে, উত্তরের উন্নয়নের ‘নিউক্লিয়াস’ হয়ে ওঠা রবিবাবুর সামনে এখন একযোগে দুটি চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, গৌতমবাবু যে ভাবে নবগঠিত দফতরকে সাজিয়ে জেলাগুলিতে নানা কাজ করেছেন, তা ছাপিয়ে যেতে না পারলেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, দফতর সামাল দিতে গিয়ে কোচবিহারে দলীয় সংগঠনকেও নড়বড়ে হতে দেওয়া যাবে না। দলের কোনও কোনও নেতাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের জন্য ছয় জেলা জুড়ে টানা ছোটাছুটি করতে গিয়ে নিজের ঘরের দিকে নজর দিতে পারেননি গৌতম। তাই দার্জিলিং জেলায় দলের সংগঠন বেহাল হয়ে পড়ে। এবং তৃণমূল শূন্যে নেমে আসে।

রবীন্দ্রনাথবাবু সবই জানেন। বোঝেনও। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরেই তিনি সটান চলে যান গৌতমবাবুর কাছে। সূত্রের খবর, রবিবাবু তাঁকে বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর তো তোমারই হাতের তৈরি। তোমার পূর্ণ সহযোগিতা লাগবে কিন্তু।’’ গৌতমবাবু তাঁকে আশ্বস্ত করেন। দল সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে গৌতমবাবুর দিল্লিতে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে ফেরার পরে জুন মাসেই রবিবাবুর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।

দফতর হিসেবে পর্যটনও ফেলনা কিছু নয়। বিশেষত, উত্তরবঙ্গের পাহাড়-নদী-বনাঞ্চলে পর্যটনের প্রসার ঘটানোর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তাতেও খচখচানি যাচ্ছে না তৃণমূলের অনেকের। কারণ, মমতার মন্ত্রিসভায় পর্যটন মন্ত্রীদের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। গোড়ায় এই দফতরের দায়িত্বে ছিলেন রচপাল সিংহ। কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিছু দিন ওই দায়িত্বে ছিলেন মালদহের কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দমতো কাজ করতে না পারায় ব্রাত্য বসুকে এই দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর আমলে পর্যটনের পরিকল্পনা ও রূপায়ণের কাজকর্ম নিয়মিত তদারকি করতেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই।

এই অবস্থায় দলের একাংশের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, গৌতমবাবু কতটা খোলা মনে কাজ করতে পারবেন? নবান্ন সূত্রের খবর, মমতার অত্যন্ত স্নেহভাজন গৌতম দফতর বণ্টনের পরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। গত পাঁচ বছরে ৬ জেলায় লক্ষাধিক কিলোমিটার ঘুরেছেন গৌতম। পর্যটনের ক্ষেত্রেও তিনি একই ভাবে উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে চান, জানিয়েছেন দলনেত্রীকে। নেত্রীও তাঁকে খোলা মনে কাজ করার আশ্বাসই দিয়েছেন। পরে গৌতম বলেন, ‘‘পর্যটনে কাজের সুযোগ আছে। বিশেষ করে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় পর্যটনের প্রসার ঘটানোর সুযোগ আছে। মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য নিয়েই আমি এই কাজ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE