জেতার পর অসিত মিত্র।ছবি: সুব্রত জানা।
‘ওস্তাদের মার শেষ রাতে’।
বৃহস্পতিবার জোট তথা দলীয় প্রার্থী কংগ্রেসের অসিত মিত্রর আমতা কেন্দ্রে জয়ী হওয়ার খবর পেয়েই উল্লাস কর্মী-সমর্থকদের। শুধু জেতাই নয়, হাওড়া জেলায় জোটের পক্ষে শিবরাত্রির সলতে জ্বালিয়ে রাখলেন একমাত্র তিনিই। জেলায় জোটের প্রার্থী ছিলেন ১৬ জন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বামফ্রন্টের ৯ এবং কংগ্রেসের ৫ জন। একজন ছিলেন জোট সমর্থিত নির্দল ও অন্যজন জোট সমর্থিত জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর প্রার্থী। তৃণমূল ঝড়ে অসিতবাবু ছাড়া সকলেই ধরাশায়ী। বড় ধাক্কা খেযেছে বামফ্রন্ট। তাদের নয়জন প্রার্থীর সকলেই হেরেছেন।
এ দিন গণনার প্রথম থেকেই সাপ লুডোর মতো ওঠা-নামা শুরু হয়। প্রথম রাউন্ডে অসিতবাবু ১১০০ ভোটে পিছিয়ে যান। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে তিনিই এগিয়ে যান ১৩৩ ভোটে। তারপর ১৪ রাউন্ড পর্যন্ত পিছনেই ছিলেন। এক সময় তৃণমূল প্রার্থী তুষার শীলের সঙ্গে তাঁর ব্যবধান দাঁড়ায় প্রায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোটের। ব্যবধান কমতে থাকে ১৫ রাউন্ড থেকে। ২১ রাউন্ডের পর শেষ হাসি হাসেন প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতা। জেতেন ৪ হাজার ৩৩২ ভোটে।
এই কেন্দ্রে এটা নিয়ে চার বার জয়ী অসিতবাবু। প্রথমবার বিধায়ক ১৯৯৬ সালে। তখন এই কেন্দ্রের নাম ছিল কল্যাণপুর। ২০০১ সালে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট হয়। কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করে জেতেন তিনি। ২০০৬ সালের বিধানসভায় এককভাবে লড়াই করে কংগ্রেস। হেরে যান তিনি। ২০১১ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হয়। কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে ফের জয়ে ফেরেন অসিতবাবু। সেই জয় ধরে রাখলেন এ বারও।
২০১৪ সালের লোকসভার ফলের নিরিখে এই বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোট যেখানে ছিল ৮২ হাজার ৮৯৪, সেখানে সিপিএম এবং কংগ্রেসের ভোট ছিল যথাক্রমে ৫৫ হাজার ৭২৯ ও ২০ হাজার ২৪০। সিপিএম-কংগ্রেসের মিলিত ভোটের থেকেও তৃণমূল অনেকটাই এগিয়ে ছিল।
কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি নিজের অনূকূলে আনলেন অসিতবাবু? কংগ্রেস ও সিপিএম সূত্রে খবর, এখানে জোট বেশ শক্তপোক্ত হয়েছিল। প্রথম থেকেই দুই দল যে কৌশল নিয়েছিল তা হল, যে ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল শক্তিশালী সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের ব্যবধান কমাতে হবে। অন্যদিকে যে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম ও কংগ্রেস শক্তিশালী সেখানে তৃণমূলের তূলনায় কংগ্রেস প্রার্থীর ভোট অনেকটা বাড়াতে হবে। কংগ্রেসের আরও সুবিধা হয়ে যায় এই কারণে যে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যাঁকে পাঠানো হয়েছিল সেই তুষার শীল ছিলেন বহিরাগত।
অসিতবাবু অবশ্য এই কৌশলের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের পাশে আমি সবসময়েই আছি। তাঁরা আমাকে ভালোবাসেন। আমি জানতাম মানুষ আমাকে বিমুখ করবেন না।’’
জেলার অন্য কেন্দ্রগুলিতে পরাজয়ের পিছনে কী সিপিএম কংগ্রেসের বোঝাপড়ার অভাব ছিল?
সিপিএমের জেলা নেতৃত্বের একাংশ জানান, অসিত মিত্র জেলার রাজনীতিতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর উপস্থিতিই অন্যান্য কেন্দ্রের জোট প্রার্থীদের সঙ্গে আমতার ফারাক গড়ে দিয়েছে। প্রার্থী হিসাবে তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব ছিলেন বলেই জেলা জুড়ে যে তৃণমূলী ঝড় তা এসে রুখে গিয়েছে আমতায়। আর হার নিয়ে গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায়ের মন্তব্য, ‘‘এটা মানুষের রায়। তাকে মাথা পেতে নিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy