Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভোটারদের চোখে চোখে রাখার চেষ্টা শাসকের

সকাল ১০টা। চড়চড় করে বাড়ছে রোদের তেজ। চাঁদাবিলা এসসি হাইস্কুলের বুথে ভোট দিতে ঢুকছিলেন দুলি হাঁসদা, পান মুর্মুরা। তাঁদের পিছনে জনা কয়েক যুবক। তাদেরই একজনকে বলতে শোনা গেল, ‘বৌদি, ভোটটা কোথায় দিতে হবে মনে আছে তো!’ মাথা নাড়া দেখে বোঝা গেল মনে আছে বৌদিদেরও।

বুথের অদূরে তৃণমূল কর্মীদের জটলা। নয়াগ্রামের পলাশিয়ায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

বুথের অদূরে তৃণমূল কর্মীদের জটলা। নয়াগ্রামের পলাশিয়ায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নয়াগ্রাম থেকে বরুণ দে
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৪৬
Share: Save:

সকাল ১০টা। চড়চড় করে বাড়ছে রোদের তেজ।

চাঁদাবিলা এসসি হাইস্কুলের বুথে ভোট দিতে ঢুকছিলেন দুলি হাঁসদা, পান মুর্মুরা। তাঁদের পিছনে জনা কয়েক যুবক। তাদেরই একজনকে বলতে শোনা গেল, ‘বৌদি, ভোটটা কোথায় দিতে হবে মনে আছে তো!’ মাথা নাড়া দেখে বোঝা গেল মনে আছে বৌদিদেরও।

স্কুল ক্যাম্পাসের আগেই যুবকদের আটকে দিলেন আধা সেনার জওয়ানরা, ‘ভোট দেনা হ্যায়? নেহি তো আগে চলো।’ কথা না-বাড়িয়ে সরে পড়লেন যুবকেরা। কিন্তু ওরা কারা? ভোট দিতে আসা এক গৃহবধূর মন্তব্য, “কারা বুঝতে পারছেন না! এখানে পঞ্চায়েতটা তো ওরাই চালায়!”

বছর কয়েক আগেও এই চাঁদাবিলা কাঁপত মাওবাদীদের নামে। এই তল্লাটে রক্তও ঝরেছে অনেক। তারপর পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। তবু চাপা আতঙ্ক রয়েই গিয়েছে। শাসকের কথা না-শুনলে উন্নয়নে সামিল হওয়া যায় না, বন্ধ হয় ভাতা, কাজ মেলে না একশো দিনের প্রকল্পে।

শুধু চাঁদাবিলাই নয়। বুথের সামনে ভোটারদের চোখে চোখে রাখার মরিয়া চেষ্টার এই ছবি সোমবার দেখা গিয়েছে কুলিয়ানা, পলাশিয়া, বালিগেড়িয়া, ধুমসাই-সহ নয়াগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বুথ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে ক্যাম্প খুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু বেশির ভাগ ক্যাম্পই দিনভর ছিল ফাঁকা। শাসক দলের কর্মীরা তো জমায়েত করেছেন বুথের আশপাশে।

কেন জটলা পাকাচ্ছেন বুথের সামনে? তৃণমূলেরই এক কর্মী তাঁর সাফাই, “কমিশনের যা কড়াকড়ি। এত জওয়ান দেখে অকারণে অনেকে ভয় পাচ্ছেন ভোটাররা! বুথের সামনে আমাদের লোকজনকে দেখে একটু যদি একটু ভরসা পান!” এ কথা শুনে একচোট হেসেছেন বিজেপির যুব নেতা সুমন সাহু। তারপর অবশ্য বলেন, “এরা ভোটটা নিজেদের অনুকূলে আনতে চেয়েছিল। ভোটাররা অবশ্য ওদের চোখরাঙানি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হননি। তাঁরা ঠিক জায়গাতেই ভোটটা দিয়েছেন!”

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় খুশি বিজেপি প্রার্থী বকুল মুর্মুও। তাঁর কথায়, “তৃণমূল ভোট লুঠের চেষ্টা করেছিল। বুথের সামনেও ভোটারদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল। তবে এ সব কিছুই ওরা করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনী শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল। এমন সুষ্ঠু ভোটই মানুষ দেখতে চেয়েছিলেন।”

এ দিন সকাল থেকেই সব বুথে চোখে পড়েছে কড়া নিরাপত্তা। ভোটারকার্ড ছাড়া কাউকে বুথের সামনে দাঁড়াতে দেননি জওয়ানরা। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ চাঁদাবিলায় বুথ পরিদর্শনে আসেন নয়াগ্রামের পর্যবেক্ষক পুসারাম পণ্ডত। তাঁর কাছেও পরিচয়পত্র দেখতে চান আধা সেনার জওয়ানরা।

এ বারের ভোট যে গত পঞ্চায়েত বা লোকসভার মতো হবে না, বুথের মধ্যে যে ‘ভূত’দের ঘুরে বেড়ানোও সম্ভব নয়, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি শাসক দলের। বেলা ১১টা নাগাদ তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্তের গলায় তাই ঝরে পড়ল অসন্তোষের সুর, “আতঙ্কের পরিবেশে ভোট করানোর চেষ্টা চলছে!” কিন্তু তৃণমূলের ছেলেরাই তো বুথের সামনে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। উজ্জ্বলবাবুর জবাব, “এত বাহিনী। তাও আমাদের ছেলেরা জমায়েত করছে? এটা বিশ্বাস করতে হবে? কেন্দ্রীয় বাহিনী একটু বাড়াবাড়ি করছে।” বিকেলেই কিন্তু বদলে গিয়েছে উজ্জ্বলবাবুর গলায়। অবাধ নির্বাচন কি তৃণমূলের চিন্তা বাড়িয়ে দিল? নয়াগ্রাম ব্লক অফিসে বসে তিনি বলেন, “চিন্তা বাড়ানোর কি আছে? ইভিএমে তৃণমূলের পক্ষে ঝড় বয়ে গিয়েছে! ভোটের ফল বেরোলে কথাটা মিলিয়ে নেবেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE