Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

শাসকের এত পোস্টার! বৈঠকে ক্ষোভ সাক্সেনার

ভোটের দিন ঘোষণার পরেও কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকা জুড়ে এখনও জ্বলজ্বল করছে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া অসংখ্য ফেস্টুন-হোর্ডিং-ব্যানার-কাটআউট। এদিক-ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর সরকারি বিজ্ঞাপনও।

উপ-মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা। — নিজস্ব চিত্র

উপ-মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ১১:৫৪
Share: Save:

ভোটের দিন ঘোষণার পরেও কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকা জুড়ে এখনও জ্বলজ্বল করছে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া অসংখ্য ফেস্টুন-হোর্ডিং-ব্যানার-কাটআউট। এদিক-ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর সরকারি বিজ্ঞাপনও। ভোট প্রস্তুতির হালহকিকত নিয়ে বৈঠকে বসে অবিলম্বে সে সব খুলে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন উপ-মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা। ভোটের দিন ঘোষণার পরেও কী ভাবে এগুলো বহাল তবিয়তে রয়ে গেল, তা নিয়ে কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনের কাছে বিস্ময় প্রকাশও করেছেন তিনি।

আজ, সোমবার কলকাতায় আসছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। এ রাজ্যে সাত দফায় বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন, ভোটদান অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ঠিক মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে সোম ও মঙ্গল— এই দু’দিন জেলা প্রশাসন ও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে ফুল বেঞ্চ। তার আগে আজ কয়েক দফায় জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসেন সাক্সেনা। সেখানেই তিনি ওই নির্দেশ দেন। এ দিন প্রথম ধাপে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জঙ্গলমহলের তিন জেলা ও বর্ধমান প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরবর্তী ধাপে দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। শেষ ধাপে মুখোমুখি বৈঠক করেন দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলির আধিকারিকদের সঙ্গে।

পরে সাক্সেনা বলেন, ‘‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সব কিছু করতে বদ্ধপরিকর কমিশন। আমরা খুশি না অখুশি, এটা বড় কথা নয়। আমরা যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত কি না, সেটাই বিচার্য।’’

শুধু মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া পোস্টার-ব্যানার-হোর্ডিং নয়। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় শাসক তৃণমূলের পোস্টার-বিজ্ঞাপন-দেওয়াল লিখনই কেন বেশি চোখে পড়ছে, সে প্রশ্নও বৈঠকে তোলেন তিনি। বিরোধীরা নিজেদের মত প্রকাশের যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ী সাক্সেনা প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেছেন, প্রচারে যেন সব দল সমান সুযোগ পায়। ভোটারদের আস্থা অর্জনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবহার নিয়ে যাতে কোনও প্রশ্ন না ওঠে, সে ব্যাপারেও ডিএম-এসপি-দের সতর্ক করেন তিনি। প্রয়োজনে স্পর্শকাতর বুথ এবং এলাকাগুলির তালিকা বদল বা গাফিলতির অভিযোগ উঠলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সরিয়ে দেওয়ার কথাও স্পষ্ট জানিয়েছেন সাক্সেনা।

জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে সাক্সেনা বলেছেন, ‘‘এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যাতে আমাদের নিরপেক্ষতা এবং তৎপরতা নিয়ে কোনও পক্ষ কোনও প্রশ্ন তুলতে না পারে।’’ বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি নিয়ে বিরোধীদের তরফে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। সে প্রসঙ্গ তুলে সাক্সেনা জানান, অনেকগুলি জেলা প্রশাসনের স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিতকরণ (ভালনারেবিলিটি ম্যাপিং) নিয়ে কমিশন খুশি নয়। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে বাহিনী যাতে ঠিক জায়গায় ঠিক মতো টহলদারি করে, সে ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন সাক্সেনা।

বৈঠক শেষে সাক্সেনা বলেন, ‘‘আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করার পরেই স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করছি। আমরা নতুন করে ম্যাপিং করছি না। কিন্তু বর্তমানে যে সব ঘটনা ঘটছে, তা মাথায় রেখে চিহ্নিত এলাকাগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। পোস্টার, ব্যানারের ব্যাপারেও যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

গত বছর বিধাননগর পুরসভার ভোটে শাসক দলের দৌরাত্ম্য এবং বহিরাগতদের দাদাগিরি নিয়ে একাধিক অভিযোগ জমেছে কমিশনে। সে কথা মাথায় রেখে সাক্সেনা এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক মনমিত নন্দাকে বলেন, ‘‘বিধাননগর পুরভোটের কথা মাথায় রেখে কলকাতা ও অন্য এলাকা থেকে ওখানে ভোটের দিন যাতে বহিরাগতরা ঢুকতে না-পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে হবে।’’ উত্তর ২৪ পরগনায় লেনিনগড় এলাকায় চোলাই মদের ব্যবসা বন্ধে বা ভাটপাড়ায় রাজনৈতিক গণ্ডগোল মেটাতে প্রশাসন কী পদক্ষেপ করেছে, তা-ও এ দিন জানতে চান সাক্সেনা।

মধ্যবঙ্গের ফুটিসাঁকো এলাকাটি বর্ধমান, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদ জেলার সংযোগস্থল। বিরোধী কংগ্রেস ও বামদলগুলির অভিযোগ, মঙ্গলকোট, লাভপুর, কেতুগ্রাম থেকে তৃণমূল আশ্রিত সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতীরা জড়ো হয়ে ভোটের দিন মুর্শিদাবাদে ঢুকে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করবে। ওই তিন জেলার শাসককে এ নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছেন সাক্সেনা। জঙ্গলমহলে গত কয়েক বছরে তেমন বড় কিছু না হলেও যে কোনও সময়ে নাশকতামূলক ঘটনা ঘটতে পারে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।

জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের কাজকর্মের উপরে কমিশনের যে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন উপ-মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। হাওড়ার জেলাশাসক শুভঞ্জন দাসকে তিনি সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘‘ভোট পরিচালনায় আপনি আত্মবিশ্বাসী তো?’’ শুধু হাওড়ার জেলাশাসক নন, কমিশনের নজরে রয়েছেন উত্তরবঙ্গের এক ডিএম এবং এক এসপি, দক্ষিণবঙ্গের এক ডিএম ও দুই এসপি এবং মধ্যবঙ্গের এক ডিএম। আজ, সোমবার ফুলবেঞ্চের সামনে এঁদের কার্যকলাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে কমিশন সূত্রেই খবর। প্রয়োজনে ডিএম, এসপি বা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারে কমিশন। এ প্রসঙ্গে সাক্সেনার মন্তব্য, ‘‘পরিস্থিতির প্রয়োজনে ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপই করবে কমিশন।’’

বৈঠকে বীরভূম জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, সাধারণ মানুষের অভিযোগ নিতে ‘ভরসা’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি হয়েছে। এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন সাক্সেনা। রাজ্যের সব জেলাগুলিকে এই প্রক্রিয়া অনুসরণের পরামর্শ দেন তিনি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE