আবেদন চার হাজার!
ভোটের ‘ডিউটি’ এড়াতে চেয়ে দিন কয়েক আগেই আবেদনের বহর দেখে চমকে উঠেছিল নদিয়া জেলা প্রশাসন। এ বার সেই চমক পাশের জেলা উত্তর ২৪ পরগনাতেও!
আবেদনের রকমফেরও রয়েছে। কেউ লিখেছেন, ‘বসলে পিঠে ব্যথা করে, তাই ডিউটি করতে পারব না’। কেউ লিখেছেন, তিনি অমুক রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছেন। তাই ‘ডিউটি’ করতে পারবেন না। কেউ আবার ‘ডিউটি’ থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে হাতুড়ে ডাক্তারের শংসাপত্র জুড়েছেন! রয়েছে বাবা-মায়ের ‘মৃত্যুশোক’ও!
হুবহু নদিয়ার মতো!
ভোটের ‘ডিউটি’ থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিচিত্র আবেদনের গুঁতোয় নিজের ঘরের সামনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেহাই-প্রার্থীদের থেকে রেহাই চেয়েছিলেন নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী। উত্তর ২৪ পরগনাতেও একই রকম আবেদনপত্র জমা পড়ায় জেলাশাসক মনমীত নন্দা আড়াই হাজার সরকারি কর্মীকে শোকজ করেছেন।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘অনেক মিথ্যা আবেদন জমা পড়েছে। তদন্তের পরে আড়াই হাজার জনকে এখনও পর্যন্ত শোকজ করা হয়েছে। এরপরেই তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে ভোট হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনায়। এই জেলায় ভোট ২৫ এপ্রিল। ৩১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে জেলার অংশ ছাড়াও বিধাননগর ও ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকাও রয়েছে। প্রিসাইডিং, পোলিং অফিসার নিয়ে এর জন্য প্রয়োজন পড়ছে মোট ৪০ হাজার কর্মীর। ‘রিজার্ভ’ কর্মীদের ধরলে প্রয়োজন মোট ৪৩ হাজার ২৭০ জনের। সে জন্যই গোটা জেলার ৪৮ হাজার সরকারি কর্মীকে চিঠি দিয়ে ‘ডিউটি’তে ডাকা হয়েছে। কাল, রবিবার তাঁদের ভোটের প্রশিক্ষণ হওয়ার কথা। কিন্তু ইতিমধ্যেই সেই কর্মীদের মধ্যে চার হাজার জন নির্বাচনের কাজ করতে না চেয়ে অব্যাহতির আবেদন করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের সময় হঠাৎ কোনও সমস্যার জন্য প্রতিবারই কিছু কর্মী আসতে পারেন না। ফলে, এত পরিমাণ অব্যাহতির আবেদন পড়ার ফলে ভোট পরিচালনা করা নিয়েও সংশয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। ফলে, রবিবার ভোটের প্রশিক্ষণে যাঁরা না আসবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শান্তনু মুখোপাধ্যায় জানান, চার হাজার আবেদনকারীর প্রকৃত তথ্য যাচাই করে তদন্তে আড়াই হাজার আবেদনই যথাযথ নয় বলে জানা গিয়েছে। ১ হাজার জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী এজেন্ট হচ্ছেন জানিয়ে ভোটের ডিউটি বাতিলের আবেদন করেছেন। তা বাদে, কিছু আবেদনকারী যথাযথ শরীর খারাপ বা সঙ্গত কারণ দেখিয়েছেন। তেমন আরও ৫০০ জন আবেদনকারীকে ভোটের ডিউটি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। যাঁরা শারীরিক অসুবিধার কথা জানিয়েছিলেন, তাঁদের বিষয়টি মেডিক্যাল বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৫০০ আবেদনকারীর দেওয়া তথ্য অসত্য বলে জানা গিয়েছে। সেই সব আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা জানান, বনগাঁ থেকে আসা একটি আবেদনের তদন্তে দেখা গিয়েছে, আবেদনকারীর বাবা মারা গিয়েছেন কয়েক মাস আগে। সেটাকে সম্প্রতি বলে চালানো হয়েছে।
প্রচুর আবেদন এমনও পড়েছে— ‘‘আমি যে পদে কাজ করি তাতে ‘সেকেন্ড পোলিং অফিসার’ হতে পারব না। ‘প্রিসাইডিং অফিসার’ করলে যেতে পারি’।
আর যাঁরা নিজেদের কোনও দলের নির্বাচনী এজেন্ট হওয়ার কথা জানিয়ে আবেদন করেছেন, তদন্তে নেমে প্রশাসন সেই দলের থেকে জানতে পেরেছে, তথ্য মিথ্যা।
তাই ব্যবস্থা নিতে ছাড়ছে না প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy