Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গণনায় তাজা নেতাকে ছেঁটেই দিলেন রেজ্জাক

এই ভোটে তিনি ‘ফ্যাক্টর’ না ‘ট্র্যাক্টর’— তার প্রমাণ পেতে এখনও দিন কয়েক বাকি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াইটা ছাড়ছেন না ‘চাষার ব্যাটা’।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০৩:৩৮
Share: Save:

এই ভোটে তিনি ‘ফ্যাক্টর’ না ‘ট্র্যাক্টর’— তার প্রমাণ পেতে এখনও দিন কয়েক বাকি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াইটা ছাড়ছেন না ‘চাষার ব্যাটা’।

ভোটপর্ব চুকে গেলেও ভাঙড়ের ‘তাজা নেতা’ আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে তিনি ক্লান্তিহীন, বুধবার তা ফের বুঝিয়ে দিলেন ভাঙড়ের তৃণমূল প্রার্থী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। বিজয়গঞ্জের পার্টি অফিসে রেজ্জাকের ‘কাউন্টিং এজেন্ট’দের সঙ্গে নেতৃত্বের বৈঠকে ডাকাই হল না আরাবুলকে।

অথচ খাতায়-কলমে আরাবুলই ভাঙড়ে তৃণমূলের নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান। বছর দশেক আগে প্রবল বাম হাওয়াতেও ভাঙড়ে তৃণমূলের পোক্ত সংগঠন গড়ার কারিগর তিনি। কিন্তু এ বার ভোটের দিন ভাঙড় কেন্দ্রে এই আরাবুলকে বিশেষ চোখে না-পড়ায় তাঁর সম্পর্কে রেজ্জাকের মন্তব্য ছিল, ‘‘এই ভোটে ও ফ্যাক্টর নয়, ট্র্যাক্টর!’’ কখনও বলেন, ‘‘ও তো চেয়ারম্যান, ভোটের দিন হয়তো বাড়িতে গিয়ে চেয়ারে বসে আছে!’’ কিন্তু ভোটের পরে গণনার কাজে তৃণমূলের ‘টিম ভাঙড়’ থেকে আরাবুলকে একেবারে বাদ দিতেই মাঠে নেমেছেন রেজ্জাক।

দলের কাউন্টিং এজেন্টদের নিয়ে বৈঠকে কেন ডাকা হল না আরাবুলকে? রেজ্জাকের জবাব, ‘‘আপনাকে বলব কেন?’’ তবে অনেকেরই মত, এটা তাঁর রাজনৈতিক কৌশলেরই অঙ্গ।

তিন বছর আগে ক্যানিংয়ের তৎকালীন সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাককে নিগ্রহের অভিযোগে আরাবুল দল থেকে সাসপেন্ড হয়েছিলেন। আবার দলের অন্দরে ‘তাজা নেতা’র অভিধাও তিনি পান সে ঘটনার পরেই। তৃণমূলে সামিল সেই রেজ্জাককেই ভোট-বৈতরণী পার করানোর দায়িত্ব দলনেত্রী
চাপিয়ে দিয়েছেন আরাবুলের ঘাড়ে। কিন্তু আরাবুল যে তাঁর ত্রাতা হওয়ার বদলে তলে-তলে কাঁটা হয়ে কাজ করছেন, সেটা বুঝেই রেজ্জাক সেটা চাউর করে দেন।

অনেকেই তাই বলছেন, আরাবুলকে নিশানা করাটা পাকা মাথা রেজ্জাকের এক ঢিলে দুই পাখি মারার চাল। হারলে সহজেই আরাবুলের ঘাড়ে দোষ চাপানো যাবে। জিতলে বলা যাবে, আরাবুলের অপচেষ্টা রুখে দিয়ে ভাঙড়ে দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি জিতেছেন।

এ দিনের কাউন্টিংএজেন্টদের সঙ্গে বৈঠকেও সেই কৌশলের আঁচ মিলেছে। ভাঙড়-১ ব্লকে প্রভাবশালী কাইজার আহমেদ, তৃণমূলের নির্বাচনী এজেন্ট ওহিদুল মণ্ডল বা একদা গোঁজ হয়ে আরাবুলকে ভোটে হারিয়ে দেওয়া নানু গাজিরা বৈঠকে ছিলেন। নেই শুধু আরাবুল, তাঁর পুত্র হাকিবুল বা অন্য ঘনিষ্ঠরা। পোলেরহাট-১ ও ২ এবং বামনহাটা অঞ্চলের প্রধান ও ভাঙড়-২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির এক প্রভাবশালী নেতাকেও বৈঠকে ডাকা হয়নি।

তবে আরাবুল ছাড়া ভাঙড়ে শাসক দলের অন্য নেতারা রেজ্জাককে স্বাগত জানাতে কতটা আন্তরিক, প্রচার-পর্বে তা নিয়েও মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। ভাঙড়ে উড়ে এসে জুড়ে বসা সিপিএমের এই প্রাক্তন মন্ত্রীকে তাঁরা অনেকেই পছন্দ করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও একদা প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে থাকা ভাঙড়-১ নম্বর ব্লকের প্রভাবশালী নেতা কাইজার আহমেদ জোর গলায় বলছেন, ‘‘অন্তত তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় আমি চাচাকে (রেজ্জাক) ভাল মার্জিনে জেতার গ্যারান্টি দিচ্ছি। এই লিডটাই ওঁকে জেতাবে।’’ তবে শেষরক্ষা হবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।

আবার রেজ্জাক়কে ঠেস দিতে ছাড়ছেন না আরাবুলও। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রেজ্জাককে সরাসরি ‘অকৃতজ্ঞ’ বলছেন তিনি। আরাবুল বলেন, ‘‘উনি চরম সুবিধাবাদী! কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলে পাজি।’’

দলের ভেতরের এই কোঁদলে এই মুহূর্তে আরাবুল বা রেজ্জাক, কোনও দিকেই না-ঝুঁকে চুপচাপ খেলা দেখছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দলের সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায় এ দিনও হাত ঝেড়ে ফেলার ভঙ্গিতে বলেন— ‘‘কাকে নিয়ে মিটিং করবেন, এটা একান্তই প্রার্থীর ব্যাপার!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE