Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
শেষ লগ্নে ‘কুল’ থাকতে পারলেন না ক্যাপ্টেন রবি

আজি এ দিবসে রবির চড়

ডেথ ওভারে ম্যাচ ফিনিশ করার দায়িত্ব ছিল ক্যাপ্টেনের কাঁধেই। ঠিক ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতোই। কিন্তু তৃণমূলের কোচবিহারের ক্যাপ্টেন, ‘কুল’ থাকতে পারলেন কই? মেজাজ হারিয়ে রবি ঘোষ চড় কষালেন দলের কর্মীকেই। প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন ভোটকর্মীকে। বচসায় জড়ালেন জওয়ানদের সঙ্গে। দিনভর তাঁর মেজাজের গতিবিধি দেখেই শোনা যাচ্ছে ফিসফাস, ‘‘দাদা কি অন্য কিছু আঁচ করেই মেজাজ হারালেন?’’

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০১:২৯
Share: Save:

ডেথ ওভারে ম্যাচ ফিনিশ করার দায়িত্ব ছিল ক্যাপ্টেনের কাঁধেই। ঠিক ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতোই। কিন্তু তৃণমূলের কোচবিহারের ক্যাপ্টেন, ‘কুল’ থাকতে পারলেন কই? মেজাজ হারিয়ে রবি ঘোষ চড় কষালেন দলের কর্মীকেই। প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন ভোটকর্মীকে। বচসায় জড়ালেন জওয়ানদের সঙ্গে। দিনভর তাঁর মেজাজের গতিবিধি দেখেই শোনা যাচ্ছে ফিসফাস, ‘‘দাদা কি অন্য কিছু আঁচ করেই মেজাজ হারালেন?’’

দিনের শুরুটা কিন্তু এমন ছিল না। ঘড়িতে সকাল ৬টা। দুধমুড়ি খেয়ে দুধসাদা স্করপিওতে কোচবিহারের নতুনপল্লির বাড়ি থেকে যখন বেরোচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, তখন তিনি খোশমেজাজে। ভোট শুরুর আগেই কোচবিহার সদরের অন্তত ১০টি বুথ সরেজমিনে ঘুরে দেখেছেন তিনি। সওয়া ৮টা নাগাদ দক্ষিণ ডাউয়াগুড়ি প্রাইমারি স্কুলের ভোট কেন্দ্রে যান তিনি। সেখানেই হাসিমুখেই ভোট দিয়ে বেরোন তিনি। গাড়ি থেকেই মোবাইলে তদারকি চলছিল। প্রথম অভিযোগ আসে, পানিশালা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা ক্যাম্প সরিয়ে দিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চিলাখানায় রওনা হন তিনি।

রবিবাবু গাড়ি থেকে নামামাত্র দলের কর্মী-সমর্থকেরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর তাণ্ডব নিয়ে অভিযোগ জানাতে শুরু করেন। সেখানেই তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উদ্দেশে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসকে পরিকল্পিতভাবে সাহায্যের অভিযোগে সরব হন। এক জওয়ানের উদ্দেশে রবিবাবুকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘কাঁহা সে অ্যায়ে হ্যায় আপলোক? কেন অশান্তি করছেন?’’ ওই সময় নির্বাচন দফতরের এক আধিকারিকের কাছেও তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুরনো বাম মনোভাবাপন্ন সংগঠনের পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অশান্তির অভিযোগ তোলেন।

সেখানেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় দলের এক কর্মী মহিদুল ইসলাম ভোট করাতে কী ধরনের বাধা মিলছে তা বলতে শুরু করেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে হাট করে দলের ছক ফাঁস করে দেওয়া রুখতে চেষ্টা করেন রবিবাবু। প্রথমে হাত দিয়ে তাঁকে থামতে বলেন তিনি। তাতে কাজ হয়নি। তখন রবীন্দ্রনাথবাবু ওই কর্মীকে সপাটে দুবার চড় মারেন। তাতেও কর্মীটি নিরস্ত হচ্ছেন না দেখে বাঁ হাতের মোবাইল দিয়ে ঠেলা মারেন ওই কর্মীকে। এর পরেই ফিসফাস শোনা যায়, জোটের বাউন্সার রুখতে গিয়ে রক্ষণ নড়বড়ে হতেই কি দাদা মেজাজ হারাচ্ছেন! রবিবাবু অবশ্য চড় মারার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ওই কর্মীকে সরিয়ে দিয়েছি মাত্র। অহেতুক ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে অপপ্রচার করা হচ্ছে।’’

নাটকের অবশ্য এখানেই ইতি ঘটেনি। এর পরে নাটাবাড়ির অন্দরানফুলবাড়ি এলাকার একটি বুথে হাজির হন তিনি। ওই বুথে আলো কম রয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। এলাকার এক বাসিন্দা ওই ব্যাপারে অভিযোগ করলে ভোটকর্মীরা আমল দেননি। রবীন্দ্রনাথবাবু সেখানে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। মেজাজ হারিয়ে ভোটকর্মীকে তিনি কোন দফতরে চাকরি করেন জানতে চেয়ে শাসান বলে অভিযোগ। ওই বিধানসভা এলাকাতেই ভোটারদের হেনস্থা, মহিলা ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছেন বলে সিপিএমকে মদত দেওয়ার চাড়ালজানি এলাকায় এক সেক্টর অফিসারকেও তিনি রীতিমতো ধমকান বলে অভিযোগ।

পরপর ওই তিনটি ঘটনায় জেলাজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। একই সুরে সরব হয়েছেন বিরোধীরা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, “রবিবাবুরা ভয় দেখানোয় বহু বুথে পোলিং এজেন্ট দেওয়া যায়নি।” নাটাবাড়ির বিজেপি প্রার্থী আলি হোসেন বলেন, “তৃণমূলের লাগামহীন সন্ত্রাস ছিল।”

তৃণমূলের অবশ্য বক্তব্য, ভোটে বিরোধীরা পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে অপপ্রচার করছে। রবিবাবুর কথায়, “আমি কোথাও বিধি ভাঙিনি। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কিছু কর্মী, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের সকাল থেকে তাণ্ডব চালায়। দলের ক্যাম্প অফিস ভেঙে দেওয়া, ভোটারদের মারধর, শাসানি, আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ওই সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি মাত্র।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 rabindranath ghosh TMC CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE