এক একটা করে মেসেজ ঢুকছে ইনবক্সে। এক বার চোখ বুলিয়েই তিনি ডিলিট করছেন। এ সব মেসেজের প্রতিপাদ্য একটাই। কোথায় ক’টা আসন জেতার আশা করা হচ্ছে, যে যার নিজের মতো হিসেব পাঠাচ্ছেন! ভোট-পরবর্তী সমীক্ষার পর থেকে এমন মেসেজের হিড়িক আরও বেড়ে গিয়েছে! শেষ পর্যন্ত বামফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বুধবার হাসতেই হাসতেই কথাটা বলে ফেলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক— যার সঙ্গেই ফোনে কথা হচ্ছে, সে-ই বলছে জিতবে! কেউ তো কোথাও হারছে বলে মনে হচ্ছে না! কী যে হবে কাল!
ভোট-পর্বের পয়লা দফা আর আজ, বৃহস্পতিবার ফলপ্রকাশের দিনের মধ্যে ফারাক দীর্ঘ দেড় মাসের! শেষ পর্বের ভোট পেরিয়ে গিয়েছে, তা-ও দু’সপ্তাহ। কী যে হবে, কী যে হবে করেই এতগুলো দিন পার হয়েছে। শেষ বেলায় এসে যেন সেই প্রতীক্ষাটাই আরও অসহ্য! যুযুধান সব শিবিরেই উৎকণ্ঠা চরমে। তৃণমূলে আবার সব কর্মকাণ্ডই দিদি-কেন্দ্রিক। দিদি আপাতত আছেন নিজের মতো। তৃণমূল ভবনও তাই ছিল প্রায় সুনসান। তবু আলিমুদ্দিন বলে তার একটা নিজস্ব প্রক্রিয়া আছে। টেনশনে কাঁপতে কাঁপতেও সেই প্রক্রিয়া জারি ছিল এ দিন।
ভোট-পরবর্তী সমীক্ষা তৃণমূলকে সরকার গড়ার পথে এগিয়ে রাখার পরেই জেলায় জেলায় হিংসা বেড়েছে। স্বভাবতই বিরোধীদের এখন প্রধান চিন্তা হয়েছে, আজ গণনা কেন্দ্র থেকে কাউন্টিং এজেন্টরা নিরাপদে ফিরতে পারবেন তো? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এবং বামফ্রন্টের বৈঠকে এ দিন এই নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভরসায় বসে থেকে লাভ নেই জেনেই আলিমুদ্দিনের আলোচনায় ঠিক হয়েছে, কাউন্টিং এজেন্টরা দল বেঁধে রাতের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছে যাবেন। তার পরে যা-ই ঘটুক, আজ গণনা শেষ হওয়ার আগে কেন্দ্র ছেড়ে বেরোবেন না। আর তাঁদের ভরসা দেওয়ার জন্য গণনা কেন্দ্রের বাইরে শিবির করে হাজির থাকবেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। প্রথমে এমন পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু তৃণমূল গণনা কেন্দ্রের বাইরে জমায়েত করছে জেনে বাম ও কংগ্রেসও পাল্টা জমায়েত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যার মানে দাঁড়াচ্ছে, অন্তত আজ দুপুর পর্যন্ত থাকছে টানটান স্নায়ুর লড়াই! দু’পক্ষেরই আশা, ১৪৮-এর ম্যাজিক ফিগার শেষ পর্যন্ত অধরা থাকবে না। তৃণমূল নেতাদের বাড়তি অক্সিজেন দিচ্ছে সমীক্ষার ইঙ্গিত। আর জোট শিবিরের নেতারা বলছেন, সমীক্ষাই শেষ কথা বলে না। সাম্প্রতিক কালে দিল্লি বা বিহারেই তো বুথ-ফেরত সমীক্ষা মেলেনি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য এই জল্পনায় ঢুকতে নারাজ। গণনার আগে শেষ রাতে তাঁর সাফ কথা, ‘‘মানুষ ভোট দিয়েছেন। যা ফল হবে, তার মুখোমুখি হতে হবে। আমরা আশাবাদী, মানুষের জোট স্বৈরতন্ত্রকে সরিয়ে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। কোন সমীক্ষায় কে কত আসন পেল, এ সব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কী হবে?’’ গোটা বাম শিবিরকেই এই বার্তা দিয়ে গণনার দিনটার জন্য তৈরি রাখতে চেয়েছেন সূর্যবাবু। সদর দফতরে বসে গোটা রাজ্যের পরিস্থিতির উপরে নজর রাখবেন বলে নিজের কেন্দ্র নারায়ণগড়ের ভোট-গণনায় উপস্থিত থাকার পরিকল্পনাও বাতিল করেছেন। আর তাঁর প্রতি ইঙ্গিত করেই কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র এ দিন গোর্কি সদনে রাজ্যের শিল্পায়ন সংক্রান্ত এক আলোচনায় মন্তব্য করেছেন, ‘‘পাঁচের দশকে এক জন ডাক্তার পশ্চিমবঙ্গে শিল্প ও উন্নয়ন করেছিলেন। আশা করছি, আজ আর এক জন ডাক্তার দায়িত্ব নিতে চলেছেন!’’
আলিমুদ্দিনের মতো এ দিন সরগরম ছিল না তৃণমূল ভবন। বিকেলের দিকে এসেছিলেন মুকুল রায়। ছিলেন আশিস চক্রবর্তী এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কর্মীরা। তাঁদের নানা কৌতূহলের জবাব দিতে দিতেই মুকুল মেনে নিয়েছেন, ‘‘ফার্স্ট না সেকেন্ড হব, তা নিয়ে টেনশন তো আছেই!’’ তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যাবর্তন নিয়ে একই সঙ্গে প্রত্যয়ী হতে চেয়েছেন মুকুল, ‘‘বুথ-ফেরত সমীক্ষাই তো বলতে পারেনি, তৃণমূল ক্ষমতায় আসবে না! আমিও তাই বিশ্বাস করি।’’ বিধান ভবনে বসে প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি দেবব্রত বসু ও সম্পাদক দীপঙ্কর সাহু ফোনে খোঁজ নিয়েছেন, শুক্রবার ফল-পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য অধীর চৌধুরীর ডাকা জরুরি বৈঠকের খবর জেলা সভাপতি ও প্রার্থীদের কাছে পৌঁছেছে কি না। পরের দিনের প্রস্তুতি শুরু করেও তাঁদের মন আসলে পড়ে গণনার মাহেন্দ্রক্ষণেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy