স্বপ্নের সেই ইনিংস।
ইডেন গার্ডেন্স, ক্রিকেটের ১৫০ বছর শুনলেই প্রথমে কী মাথায় আসে?
প্রথমেই তো মনে হয়, কত ঐতিহাসিক সব ম্যাচ হয়েছে এখানে! কত ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই মাঠকে ঘিরে! আর মনে পড়ে ইডেনের দর্শকদের। এঁরা শিক্ষিত আর ভারতকে জেতাতে যা খুশি করতে পারে। এমনই প্যাশনেট। ভারতীয় প্লেয়ারদের সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যায়।
একটা শব্দে যদি বলতে বলি ভিভিএস লক্ষ্মণের কাছে ইডেন গার্ডেন্স কী?
প্রিয় মাঠ।
একটা ধারণা আছে: নাদালের কাছে যেমন রোঁলা গাঁরো, ফেডেরারের কাছে যেমন উইম্বলডন, তেমনই ভিভিএস-এর কাছে ইডেন। এটা তাঁর ঘরের মাঠ নয়, তবে এই মাঠ তাঁর কাছে ঘরের মতো। যখনই নামতেন, ঘরের মাঠে ব্যাট করার স্বাচ্ছন্দ্য পেতেন! এটা কী করে সম্ভব হল?
এটার দু’টো কারণ ছিল। এক, ইডেনে খেলাটাকে সব সময় উপভোগ করতাম, ভাল উইকেট থাকত, বল সব সময় ব্যাটে আসত। আর দ্বিতীয় ফ্যাক্টর ছিল, ইডেনের দর্শক! এককথায় যাকে বলা যায় ‘ইলেকট্রিক’। তারা সব সময় সাপোর্ট করে যেত ইন্ডিয়ান প্লেয়ারদের। মাঠ আর মাঠের বাইরে তারা দু’টো এমন পরিবেশ তৈরি করত যা প্লেয়ারদের তাতিয়ে দিত।
সেই দর্শকদের সম্পর্কে আপনার মত কী? আপনার কি মনে হয় ইডেনের দর্শকের সাপোর্ট না পেলে ২৮১ হত?
দর্শক সব সময় আমাকে সাপোর্ট করে গিয়েছে। কলকাতার দর্শক তো জিততে চায়। সে ফুটবল হোক কী ক্রিকেট।
মাঝে মাঝে বলা হয়, ইডেনের দর্শক হল দু’মুখো। কখনও খুব সাপোর্টিভ। আবার কখনও ভীষণ আক্রমণাত্মক। যেমন, ১৯৯৯য়ে ভারত-পাকিস্তান টেস্ট ম্যাচ। বা ১৯৯৬-এর বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। আপনি কোন ইডেনকে আসল মনে করেন?
আমার মনে হয় ইডেনের দর্শকরা আসলে জিততে চায়। সে যে কোনও অবস্থা হোক না কেন। তারা চায় যাতে তাদের টিম জেতে। তাই ওদের রিঅ্যাকশনটা বুঝতে পারি। কিন্তু প্লেয়ার হিসেবে কখনও কখনও দর্শকদের মনোভাব প্রকাশের সেই ভঙ্গিটা হয়তো ভাল না-ও লাগতে পারে।
ঐতিহাসিক ২৮১-র ইনিংসে ফিরে আসি। কখনও ভেবেছিলেন ওই রকম একটা ইতিহাস তৈরি করতে পারবেন?
প্রথমে বলব যে, আমি খুব খুশি ছিলাম যে আমার পছন্দের তিন নম্বরেই নেমেছিলাম। দ্বিতীয়ত, প্রথম ইনিংসে যেমন খেলেছিলাম তাতে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। যখন ব্যাট করতে নামলাম, প্রথম কাজ ছিল ক্রিজে টিকে থাকা আর প্রতিটা মুহূর্তে ফোকাস করা। পরে কী হবে, তা নিয়ে বেশি ভাবতে চাইনি সে দিন। তা বলে কখনওই ভাবিনি আমরা ম্যাচটা জিতব! যখন ১৫০-য়ের লিড হল, ভাবলাম বড়জোর ফোর্থ ডে লাঞ্চ পর্যন্ত ম্যাচটা টানা যাবে। তখনও জেতার কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। অস্ট্রেলিয়ান যা ব্যাটিং লাইনআপ ছিল, তাতে জেতার আশা করাটা সম্ভবও ছিল না। রাহুলের সঙ্গে পার্টনারশিপটা বেশ স্পেশাল হয়েছিল। অনেকেই আমার আর রাহুলের পার্টনারশিপের কথা বলেন তবে আমাদের জেনারেশনের সবার সঙ্গে ব্যাট করেই আমি আনন্দ পেয়েছি। কারণ উই কমপ্লিমেন্টেড ইচ আদার ভেরি ওয়েল। একে অপরকে এই সাহায্য করাটা খুব জরুরি। রাহুলের সঙ্গে আমি আগেও অনেক খেলেছি। সেই সাউথ জোন থেকে ইন্ডিয়া-এ টিমে আমরা টিমমেট ছিলাম। একে অপরের ক্ষমতা আর ত্রুটিগুলো তাই আমরা ভালই জানতাম। সেটা এই ম্যাচে কাজে লেগেছিল।
ইডেনে সেরা ইনিংস তা হলে ২৮১-ই?
অবশ্যই ২৮১র সেই ইনিংস। আমি বিশ্বাস করি ওই সময় বিশ্বের সেরা বোলিং লাইনআপ ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ওরা আমাদের এতটুকু জমিও ছেড়ে দেয়নি। কিন্তু আমরা সেটাকেই পাল্টে দিতে পেরেছিলাম। আর সব থেকে বড় কথা রানটা পেয়েছিলাম এমন একটা ম্যাচে যেখানে আমরা জিতেছিলাম। এর থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না। নিজে রান করলাম, কিন্তু টিম হারল, তাতে তো রান করার আনন্দতেই ভাঁটা পড়ে যায়।
আচ্ছা, যদি আপনাকে বলা হয় অবসর থেকে ফিরে এসে আবার খেলতে, কোন মাঠকে বেছে নেবেন?
ভারতে অবশ্যই ইডেন গার্ডেন্স। আর ভারতের বাইরে হলে সিডনি।
আগে বলা হত ইডেন আজহারউদ্দিনের। কিন্তু আপনার ২৮১-র ওই ইনিংসের পর থেকে বলা হয়, ইডেন যতটা আজহারের, ততটাই ভিভিএস-এর। আপনি ইডেনের মালিকানা কাকে দেবেন? আজহার? নাকি নিজেকেই?
হা হা হা। এই ফাঁদে আমি পা দিচ্ছি না। যত বার ইডেনে খেলেছি প্রচণ্ড এনজয় করেছি। মাঠের ভিতরেই হোক, কী মাঠের বাইরে।
আচ্ছা, তা হলে ইডেনের সেরা প্লেয়ারদের একটা তালিকা করুন? কে এক নম্বর? কে দুই?
দেখুন, ইডেনে এত ভাল ভাল সব ইনিংস রয়েছে, যে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব! আর ও রকম এক, দুই...করে বলাটাও আনফেয়ার হবে। তবে ইডেন নিয়ে একটা ইমেজ আমার মনে গেঁথে আছে। সেটা হল, হিরো কাপের সেমিফাইনালে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সচিনের শেষ ওভারটা! ওটা কোনও দিন ভুলব না।
সেরা স্মৃতি
হিরো কাপের সেমিফাইনালে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সচিনের শেষ ওভারটা কোনও দিন ভুলব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy